ক্রিকেটের বিখ্যাত পরিবারতন্ত্র

ক্রিকেট একটি দলীয় খেলা। যেখানে একসাথে এগারো জন ক্রিকেটার একসাথে একই দলের হয়ে খেলেন। এমন অনেক সময় ঘটে যখন একই পরিবারের একসাথে দুই কিংবা তিনজন ক্রিকেটার মাঠে নামে। যদিও এই ঘটনা খুব কম দেখা যায়, তবে ক্রিকেট মাঠে এই ঘটনা কয়েকবারই ঘটেছে। এখানে অনেক ক্রিকেটার আছে যারা পারিবারিক ক্রিকেট সংস্কৃতি থেকে উঠে এসেছে। ক্রিকেট বিশ্বে এমন অনেক ক্রিকেটার আছে যারা পরিবারিকভাবেই জড়িত আছে ক্রিকেটের সাথে।

ক্রিকেট একটি দলীয় খেলা। যেখানে একসাথে এগারো জন ক্রিকেটার একসাথে একই দলের হয়ে খেলেন। এমন অনেক সময় ঘটে যখন একই পরিবারের একসাথে দুই কিংবা তিনজন ক্রিকেটার মাঠে নামে। যদিও এই ঘটনা খুব কম দেখা যায়, তবে ক্রিকেট মাঠে এই ঘটনা কয়েকবারই ঘটেছে। এখানে অনেক ক্রিকেটার আছে যারা পারিবারিক ক্রিকেট সংস্কৃতি থেকে উঠে এসেছে। ক্রিকেট বিশ্বে এমন অনেক ক্রিকেটার আছে যারা পরিবারিকভাবেই জড়িত আছে ক্রিকেটের সাথে।

ভারতে এখন অনেক ক্রিকেটীয় পরিবার দেখা যায়। ভারতের বাইরেও বিভিন্ন দেশে অনেক ক্রিকেটীয় পরিবার দেখা যায়।  যেমন, বাংলাদেশে খান পরিবার, ভারতের পাঠান পরিবার। এই রকম ছাড়াও দেখা যায়, দুই ক্রিকেটীয় পরিবারে মধ্যে সম্পর্ক। এই নিয়েই খেলা- ৭১ এর আজকের এই আয়োজন।

  • আকমলদের কীর্তি

সবাই জানেন কামরান, উমর ও আদনান আকমল – তিন ভাই পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন। কিন্ত এর বাইরেও এই পরিবারের আর একজন আছে পকিস্তান ক্রিকেটে। তিনি হলেন বাবর আজম। বাবর আজম বর্তমানে পাকিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। বাবর আজম সম্পর্কে কাজিন হন আকমল ভাইদের।

উমর আর কামরান – দুই ভাই-ই বিয়ে করেছেন সাবেক দুই টেস্ট ক্রিকেটারের মেয়েকে। এটাও তো একটা রেকর্ড!

গ্রেট লেগ স্পিনার আব্দুল কাদিরের মেয়ের সাথে বিয়ে হয় উমর আকমলের। আকমল যদিও, অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে, ছন্নছাড়া জীবনের কারণে এখন তিনি হারিয়ে যাওয়ার পথে। উমরের শ্যালক, মানে কাদিরের ছেলে উসমান কাদিরও লেগ স্পিনার, পাকিস্তানের হয়ে অভিষেকও হয়ে গিয়েছে তাঁর।

অন্যদিকে, কামরানের শ্বশুর হলেন সাবেক পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ ইলিয়াস। তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সালের মধ্যে পাকিস্তানের হয়ে ১০ টি টেস্ট খেলেছেন। একটি সেঞ্চুরি ও দু’টি হাফ সেঞ্চুরি করেন।

এখানেই শেষ নয়, কামরানের ভায়রা ভাই হলেন ইমরান ফরহাত, সাবেক পাকিস্তানি ওপেনার। ইমরান ফারহাত ছিলেন স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। ১২ বছর জাতীয় দলে খেললেও বড় একটা সময় ছিলেন যাওয়া-আসার মধ্যে। সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৩ সালে।

তাঁর মতই অফ ফর্মের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কামরান আকমল। ২০১০ সালে সর্বশেষ খেলেন। আর তাঁর ফেরা হয়নি।

মজার ব্যাপার হল, দুই ভায়রা ভাই মানে কামরান আর ইমরান পাকিস্তানের হয়ে এক সাথে খেলেছেনও।

  • গাভাস্কারদের চাঁদের হাট

সুনীল গাভাস্কার এবং গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ দুই জন তাঁদের সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান। তাঁদের মধ্যে শুধু মাঠেই সুসম্পর্ক ছিল না, মাঠের বাইরেও বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।

গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ বিয়ে করেছিলেন সুনীল গাভাস্কারের বোন কবিতাকে। সুনীল গাভাস্কারের মামা হলেন চার টেস্ট খেলা সাবেক ওপেনার মাধব মন্ত্রী। সুনীল গাভাস্কারের ছেলে হলেন রোহান গাভাস্কার, রোহান বড় ক্রিকেটার না হলেও জাতীয় দলে খেলেছেন।

বলা হয়, রোহানের নাম করণ হয় গাভাস্কারের পছন্দের তিন ক্রিকেটারের নামে। রোহানের পুরো নাম হলো ‘রোহান জয়বিশ্ব গাভাস্কার’। রোহান তো বুঝতে পারলেন। এই জয়বিশ্ব এলো কোত্থেকে? জয় হলেন এমএল জয়সিমা এবং বিশ্ব হলেন গুন্ডাপ্পাবিশ্বনাথ; যিনি আবার রোহানের মামা।

  • বেনো ভাই

অস্ট্রেলিয়ায় অনেকগুলো ক্রিকেটীয় পরিবার আছে, তাঁর মধ্যে একটি হলো অস্ট্রেলিয়ার বেনো।

বেনাউদ পরিবারে দুই ভাই আছে, রিচি বেনো এবং জন বেনো। দুই ভাই অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ক্রিকেট ছাড়ার পর রিচি বেনো ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু জন বেনো ক্রিকেটের সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখেননি।

  • চ্যাপেল এবং রিচার্ডসন পরিবার

ক্রিকেট সম্ভবত পারিবারিকভাবে শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়ার চ্যাপেল পরিবার। ভিক রিচারর্ডসনের নাতি ইয়ান, গ্রেগ এবং ট্রেভর চ্যাপেল সবাই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন এবং সাফল্য পেয়েছেন। এখনও এই পরিবার থেকে ক্রিকেটার উঠে আসছে।

আরেক ভাই ট্রেভর চ্যাপেলও খেলেছেন জাতীয় দলে। তিনি ‘আন্ডারআর্ম’ বোলিংয়ের অন্যতম খলনায়কও বটে। তবে, বড় ক্রিকেটার হতে পারেননি। পরে বাংলাদেশের কোচ হিসেবেও দুর্নাম কুড়ান।

  • দুই জোড়া ভায়রা ভাই ও খান পরিবার

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম দুই তারকা মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক বাংলাদেশের অন্যতম সেরা উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের অনেক ম্যাচের জয়ের নায়ক এই দুই জন।

মাঠের বাইরেও তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা দুই জনই একই পরিবারে বিয়ে করেছেন। সম্পর্কে তাঁরা ভায়রা ভাই। বাংলাদেশ ক্রিকেটেই অবশ্য আরও দুই ভায়রা ভাই আছেন। তাঁরা হলেন আকরাম খান ও ফারুক আহমেদ।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে এই দু’জন খেলেছেন এক সাথে। আকরাম খান খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করেন আট টেস্ট ও ৪৪ টি ওয়ানডে নিয়ে। অন্যদিকে ফারুক আহমেদের ক্যারিয়ার সাত ওয়ানডের। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে দু’জনেই কাজ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। দু’জনই নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেন। ফারুক আহমেদ আবার জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার নাফিসের খালাতো ভাই।

মজার বিষয় হচ্ছে আকরাম খান জুনিয়র হলেও তিনি বিয়ে করেন ওই পরিবারের বড় মেয়ে সাবিনা আকরামকে। এরপর পরিবারের ছোট মেয়ে শাহরিয়া ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন ফারুক আহমেদ। আবার জাতীয় দলের হয়ে দু’জনই খেলেছেন দু’জনের অধিনায়কত্বে।

আকরাম খান হলেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের ছেলে। বড় ভাই ইকবাল খান, যিনি চট্টগ্রামের প্রবাদ প্রতীম ক্রীড়া সংগঠক। ইকবাল খানের দুই ছেলে হলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল খান ও তাঁর বড় ভাই নাফিস ইকবাল খান।

  • মার্শ ও তাঁর ছেলেরা

জিওফ মার্শ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া দলকে কোচিংও করিয়েছিলেন।

জিওফ মার্শের দুই ছেলে মিশেল মার্শ এবং শন মার্শ। তাঁরা এখন অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় দলে নিয়মিত খেলছেন। তাঁরা অস্ট্রেলিয়া দলের নিয়মিত সদস্য।

  • অজয় জাদেজার রাজকীয় সম্পর্ক

স্বাধীনতার আগে ভারতে ক্রিকেট খেলা ছিল রাজকীয় একটি খেলা। অজয় জাদেজার পূর্বসূরিরা তখন থেকেই ক্রিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন।

জাদেজা ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটার। তিনি ভারতীয় দলের অধিনায়ক হবার দৌড়ে অনেক টাই এগিয়ে ছিলেন। তার পরিবারের পূর্বসূরিদের নামে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত দুইটি টুর্নামেন্ট হয়। একটি হলো রঞ্জি ট্রফি এবং আরেকটি হলো দুলীপ ট্রফি।

কে এস রণজিৎ সিংজি এবং কে এস দুলীপ সিংজি দুইজনই অজয় জাদেজার পূর্বসূরি।

  • হিলি এবং স্টার্কের মিল

অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের পেসার মিচেল স্টার্কে স্ত্রী হলেন অ্যালিসা হিলি। অ্যালিসা হিলি অস্ট্রেলিয়া প্রমিলা ক্রিকেট দলের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান।

ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটীয় জুটি। কিন্তু এর বাইরেও তাঁদের সাথে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক আছে। অ্যালিসা হিলি হলেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট উইকেটরক্ষক ইয়ান হিলির ভাইয়ের মেয়ে।

  • ওয়াহ পরিবার

এই অস্ট্রেলিয়ান পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত চার জন ক্রিকেটার এসেছেন। এর মধ্যে যমজ ভাই ছিলেন স্টিভ ওয়াহ এবং মার্ক ওয়াহ।

এই দুই জনের বাইরেও ক্রিকেটে ছিলেন তাঁদের ছোট ভাই ডিন ওয়াহ।

এই ওয়াহ পরিবারে এখন ক্রিকেটের বাটন ধরে রেখেছেন স্টিভ ওয়াহের ছেলে অস্টিন ওয়াহ। এদের বাইরেও ওয়াহ পরিবারে একজন ক্রিকেট খেলেছিলেন। যার সম্পর্কে কোনো ধরণের তথ্যই পাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি স্টিভ এবং মার্ক ওয়াহের ভাই ড্যানিয়েল ওয়াহ।

  • কুরান পরিবার, দুই দেশের সম্পর্ক

এটাই একমাত্র বাবা-ছেলে সম্পর্ক যেখানে বাবা এক দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং ছেলে অন্য একটি দেশ।

কুরান পরিবারে ছোট ছেলে কেভিন কুরান খেলেছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। তাঁর তিন পুত্র স্যাম কুরান, টম কুরান এবং বেন কুরান। তারা তিনজনই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেন। এর মধ্যে স্যাম কুরান এবং টম কুরান ইতিমধ্যে জাতীয় দলের হয়ে খেলে ফেলেছেন।

স্যাম ও টম কুরান
  • লারা এবং ব্রাভো

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অন্যতম কিংবদন্তী ক্রিকেটার হলেন ব্রায়ান লারা। লারার সাথে সম্পর্ক আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরও দুই বিখ্যাত ক্রিকেটারের। তাঁরা হলেন ড্যারেন ব্রাভো এবং ডোয়াইন ব্রাভো।

ড্যারেন এবং ডোয়াইন ব্রাভো হলেন সৎ ভাই। আর ড্যারেন ব্রাভোর মামা হলেন ক্রিকেটের বরপুত্র খ্যাত ব্রায়ান লারা।

  • সর্ববৃহৎ ক্রিকেট পরিবার?

পাকিস্তান ক্রিকেট আর মোহাম্মদ পরিবার একটি আরেকটির পরিপূরক। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অধ্যায় এই মোহাম্মদ পরিবার। পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এই মোহাম্মদ পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের চার ভাই। শুধু সেই প্রজন্মই নয়, পরের দুই প্রজন্মতেও মোহাম্মদ পরিবার ক্রিকেটার দিয়েছে পাকিস্তানকে।

সবাই বিখ্যাত হানিফ মোহাম্মদকে চিনলেও তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় ওয়াজির মোহাম্মদ। তিনিও পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। অন্য ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র রাইস মোহাম্মদ ছাড়া বাকি দুই ভাই সাদিক মোহাম্মদ এবং মোহাম্মদও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাইস মোহাম্মদ ৩০টা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেললেও দেশের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় নি।

এই পাচ মোহাম্মদ ভাইয়ের মা’ও ছিলেন টেনিস খেলোয়াড়। তাই খেলাটা আসলে তাদের রক্তের মধ্যেই ছিল মধ্যেই ছিল। শুধুমাত্র তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যেই ক্রিকেট থেমে থাকে নি, হানিফ মোহাম্মদের ছেলে শোয়েব মোহাম্মদ এবং শোয়েব মোহাম্মদের ছেলে শেহজার মোহাম্মদও দেশটির ঘরোয়া লিগে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেন। শোয়েব পাকিস্তানের হয়ে ৪৫ টি টেস্ট ও ৬৩ টি ওয়ানডে খেলেছেন।

মুশতাক, হানিফ ও সাদিক মোহাম্মদ

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে না পারা একমাত্র রাইস মোহাম্মদের তিন ছেলেও দেশটির হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন তাঁরা হলেন – শহীদ মোহাম্মদ, আসিফ মোহাম্মদ তারিখ মোহাম্মদ। সাদিক মোহাম্মদের ছেলে ইমরান মোহাম্মদও দেশের হয়ে টেস্ট খেলতে না পারলেও খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। ক্রিকেট ইতিহাসে এক পরিবার থেকে ১০ জন প্র‍থম শ্রেণির ক্রিকেটার আসার আর কোনো উদাহরণ নেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...