ডিবলি-ডবলি, একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি

ডিবলি-ডবলি কি? এমন একটা প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। মানুষের স্বাভবচারিত প্রবণতার একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে কৌতুহল। খুব হাতিঘোড়া গোছের কিছু নয় ডিবলি-ডবলি। নিতান্ত এক সাধারণ বোলিং কৌশল, ইংরেজিতে বললে স্টাইল। নব্বই দশকের দিকে বেশ জনপ্রিয় ছিল ডিবলি-ডবলি বোলিং।

ডারউইন বিবর্তনবাদের একটা যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। তবে সেটা ছিল মানবজাতির বিবর্তন। কিন্তু বিবর্তন তো এই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে। ক্রিকেট সেখান থেকে ব্যতিক্রম হবারই কথা নয়। ব্যতিক্রম হওয়া চেষ্টাও করেনি ক্রিকেট। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তনের স্রোতে গা ভাসিয়েছে। তবে সে স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বহু কিছু। ডিবলি-ডবলি’র মধ্যে অন্যতম।

ডিবলি-ডবলি কি? এমন একটা প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। মানুষের স্বাভবচারিত প্রবণতার একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে কৌতুহল। খুব হাতিঘোড়া গোছের কিছু নয় ডিবলি-ডবলি। নিতান্ত এক সাধারণ বোলিং কৌশল, ইংরেজিতে বললে স্টাইল। নব্বই দশকের দিকে বেশ জনপ্রিয় ছিল ডিবলি-ডবলি বোলিং।

এই বোলাররা ছিলেন বাকি সব বোলারদের থেকে বেশ খানিকটা ভিন্ন। তাঁরা মূলত মিডিয়াম পেসার গোছের বোলার ছিলেন। তবে মানসিকতায় স্পিনারদের একটা বিশেষত্ব ছিল বিরাজমান। তাঁরা দৌড়ে এসে সর্বোচ্চ ১২০ অথবা ১৩০ কিলো/ঘন্টায় বল ছুড়তেন। পিচের সহয়তা নিয়ে তাঁরা ব্যবহার করতেন কাটার, আর মৃদু সুইং। আর অফ স্ট্যাম্পের লাগোয়া একটা লাইন ধরে বোলিংটা করে যেতেন ডিবলি-ডবলাররা।

তাঁদেরকে মারাটা খুব বেশি কষ্টকর ছিল। এর পেছনের মূলত নিচু হয়ে আসা ধীর গতির বোলিং-ই ছিল অন্যতম কারণ। এই ডিবলি-ডবলি টার্মটা আসার একটা ছোট্ট গল্প রয়েছে। নব্বই দশকের শুরুর দিকে নিউজিল্যান্ডের বোলিং লাইন আপে দুই গুরুত্বপূর্ণ বোলার ছিলেন গ্যাভিন লারসেন ও ক্রিস হ্যারিস। তাদেরকেই উদ্দেশ্য করে ১৯৯২ সালে এক ধারাভাষ্যকার প্রথম এই টার্মটার প্রচলন করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলে যেমন ছিলেন টম মুডি, ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি।

নব্বই দশকের প্রায় প্রতিটা দলেই অন্তত একজন করে এমন ডিবলি-ডবলি বোলাররা থাকতেন। বাংলাদেশ দলেও এমন একজন ডিবলি-ডবলি বোলার ছিলেন আতাহার আলী খান। এরপরের দিকে অবশ্য আফতাব আহমেদও এই এই ধারাটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে কালের বিবর্তনে সব কিছুর একদিন শেষ দেখতে হয়। তাইতো ডিবলি-ডবলারদের অবস্থান এখন ইতিহাসের পাতায়।

ডিবলি-ডবলারদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে কারণ কেবলই বিবর্তন। প্রায় প্রতিটা দশকে ক্রিকেটে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন যেন সেটা আরও খানিক দ্রুততার সাথেই হচ্ছে। ক্রিকেটের নিয়মের সাথে সাথে খেলার সংজ্ঞাও যেন পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেমন এখন ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে কেবল পাঁচজন ফিল্ডার থাকতে পারবেন শেষ দশ ওভারে। এর আগে চারজন ফিল্ডার থাকতে পারবেন ৩০ গজের বাইরে।

ডিবলি-ডবলারদের আমলে এমন কোন বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। কেননা তাঁদের মূল অস্ত্রই ছিল লাইন-লেন্থ আর বৃত্তের বাইরে সঠিক স্থানে ফিল্ডারদের অবস্থান। সেখানেই যখন নিয়মের আঘাত ঠিক তখনই কার্য্যকারীতা হারাতে বসে।

শুধু যে সেই একটি কারণেই ডিবলি-ডবলাররা আজ হারিয়ে গেছেন ইতিহাসের অতলে বিষয়টা তেমনও নয়। আরও বেশ কিছু কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্যাটারদের বিবর্তন। ব্যাটাররা এখন আর ক্রিকেটের ব্যকরণ বই মেনেই ব্যাট করেন না। তাঁরা বরং নিজেদের ব্যাটিংয়ে পরিবর্তন আনেন সময় বুঝে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে।

অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলগুলো তাঁরা চাইলেই রুম বানিয়ে খেলে ফেলেন। আবার রিভার্স সুইপ থেকে শুরু করে স্কুপ নানান রকমের শট খেলতে এখনকার ব্যাটাররা সিদ্ধহস্ত। সেই সাথে এখন উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে দুইটি ভিন্ন বলে বল করা হয়। সেটাও বেশ বড় একটা কারণ ডিবলি-ডবলারদের হারিয়ে যাওয়ার।

কেননা পিচ থেকে সহয়তা পাওয়া ছাড়াও ডিবলি-ডবলারদের পূর্বশর্ত ছিল বলটা হতে হবে পুরাতন। কেবল তবেই তাঁরা কার্য্যকর বোলিং উপহার দিতে পারবেন। তবে সে সুযোগটা আধুনিক ক্রিকেটে কমেছে বহুলাংশেই। এখন যেহেতু দুই ভিন্ন বলে খেলা হয় তাই ২৫ওভারের বেশি বল পুরান হওয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে পিচগুলোও আগের থেকে বেশ বাউন্সি এবং স্পোর্টিং হয়ে গেছে।

এসবকিছু মিলিয়ে ডিবলি-ডবলি বোলিং নিজের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। আর হারিয়ে গেছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...