কাতার বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবে শুরু করলেও আরও একবার শেষ আটেই আটকে গেল ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে এগিয়ে গেলেও টাইব্রেকারে হারতে হয়েছে নেইমার-ভিনিসিয়াসদের। এক হারেই আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের।
সর্বশেষ ২০০২ সালে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ব্রাজিল। সেবার রোনালদো, রোনালদিনহোদের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছিল গোটা বিশ্ব। দুই দশক পর তাই বিশ্বকাপের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন ব্রাজিলিয়ান ভক্ত-সমর্থকরা। কিন্তু, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ হেরে আগের বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি ঘটালো ব্রাজিল।
২০২৬ বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের তাই লেগেছে পালাবদলের হাওয়া। কোচ তিতে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন বিশ্বকাপ শেষে সরে দাঁড়াবেন দায়িত্ব থেকে। কোয়ার্টারেই ব্রাজিল বিদায় নেয়ায় তিতের সরে যাওয়ার ঘটনা এগিয়েছে দ্রুতই। যদিও গত নভেম্বরে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিসকো নভেলিত্তো জানিয়েছিলেন কোচের দায়িত্ব না ছাড়তে তিতেকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে আগেই বিদায় ঘটায় এখন আর তিতেকে রাখতে আগ্রহী নয় কোনো পক্ষই।
ব্রাজিলের কোচ হিসেবে তিতে দায়িত্ব পালন করেছেন ছয় বছর। খুব একটা মন্দও করেননি, ৮১ ম্যাচের মাঝে হেরেছেন মোটে সাত ম্যাচ। ৬১ জয়ের পাশাপাশি ড্র করেছেন ১৩ ম্যাচে। এছাড়া তাঁর সময়ে ১৮০ গোল করার পাশাপাশি হজম করেছে ৩৭ গোল। কিন্তু, ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁর কোচিং দর্শনের সমালোচনা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে কোচিং স্টাফের সদস্য, তাঁর ছেলে ম্যাথিয়াস এবং সহকারি কোচ ক্লেভার জাভিয়েরও বিদায় নেবেন তাঁর সাথে সাথে।
তাঁর উত্তরসূরি বেছে নেয়ার কাজও দ্রুত শুরু করে দিয়েছে সিবিএফ। পালমেইরাসের আবেল ফেরেইরা, ফ্লুমিনেন্সের ফার্নান্দো দিনিজ, ইন্টারন্যাসিওনালের মানো মেনেজেস এবং দোরিভাল জুনিয়ররা আছেন ব্রাজিলের নতুন কোচ হওয়ার দৌড়ে।
কেবল কোচিং স্টাফ নয়, সিবিএফের নতুন প্রেসিডেন্ট এডনালদো রদ্রিগেজ বদলে ফেলতে চান পুরো দলের খোলনালচ। বিদায়ঘন্টা বাজতে পারে টিম কো-অর্ডিনেটর জুনিনহো পাওলিস্তার, তাঁর জায়গায় দেখা যেতে পারে আন্দ্রেস সানচেজের। শোনা যাচ্ছে সানচেজই বেছে নেবেন ব্রাজিলের পরের কোচ। নতুন কোচিং স্টাফকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে চায় ব্রাজিল।
এছাড়া ব্রাজিলের ড্রেসিংরুমেও বইছে পালাবদলের হাওয়া। থিয়াগো সিলভা, দানি আলভেসদের মত কিংবদন্তিরা বিদায় নিয়েছেন। নেইমার এবং কাসেমিরোর বয়সও ত্রিশ পেরোচ্ছে। তরুণ ফুটবলাররা এডের মিলিটাও, লুকাস পাকুয়েতা, রিচার্লিসন, ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা ধীরে ধীরে দলের দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন।
থিয়াগো সিলভা ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের এখানেই ইতি। দানি আলভেস যদিও এখনো তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলেননি। তবে ৩৯ বছর বয়সী দানি ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলবেন এমন ভাবনাটা অলীক কল্পনাই বটে।
দলের মূল তারকা নেইমারও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান। জাতীয় দল থেকে অবসরের সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দেননি তিনি। এক সংবাদ সম্মেলনে পিএসজির এই তারকা বলেন, ‘আমি যদি এখনই অবসরের ঘোষণা দিই, তবে সেটা বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। তবে আমি কোনো কিছুর নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। অবসরের চিন্তা আমার মাথায় আছে।’
দানি আলভেস, থিয়াগো সিলভাদের পাশাপাশি নেইমারও জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ালে ২০২৬ বিশ্বকাপে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্রাজিলকেই দেখবে গোটা বিশ্ব।