বিশ্বকাপে ইংলিশদের ব্যর্থতার নেপথ্যে…

বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি আসরেই দারুণ কিছু করে দেখানোর বার্তা দিয়ে আসে ইংল্যান্ড। এবারে কাতারের বিশ্বকাপেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। প্রায় সব পজিশনেই দারুণ সব খেলোয়াড় আর বিকল্প অপশনের মিশেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়েই ছিল গতবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা।

বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি আসরেই দারুণ কিছু করে দেখানোর বার্তা দিয়ে আসে ইংল্যান্ড। এবারে কাতারের বিশ্বকাপেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। প্রায় সব পজিশনেই দারুণ সব খেলোয়াড় আর বিকল্প অপশনের মিশেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়েই ছিল গতবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা।

টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে অসাধারণ সব পারফরমেন্সে জয় উপহার দিলেও ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়ে গিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালেই। ফ্রান্সের কাছে হেরে তাদের বিশ্বকাপ খরার অপেক্ষাটা আপাতত আরও বছর চারেক বাড়ছে।

দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল। দলের মধ্যে তেমন কোনো পজিশনেই ফাঁকফোকর নেই। তারপরও কেন ইংল্যান্ড সেই আগের ধারা অব্যাহত রেখেই নুয়ে পড়লো? ইংলিশ ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়ের অবশ্য সেই কারণটা চাপিয়ে দিয়েছেন পুরোটাই রেফারির উপর। ম্যাচ শেষে পুরো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান রেফারি উইল্টন স্যাম্পিওর উপরে।

তাঁকে ইঙ্গিত করে ম্যাগুয়ের বলেন, ‘খেলার প্রথম মিনিট থেকেই রেফারির সিদ্ধান্ত বিতর্কিত ছিল। প্রথম ১৫ মিনিটে এমন ৬ টা ফাউল হয়েছিল যেটাতে তারা হলুদ কার্ড পেতে পারত। কিন্তু রেফারি সেগুলোতে কার্ড দেননি। আমি আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না, এ ম্যাচে কতটা বাজে রেফারিং হয়েছে। আরও কিছু বললে আমি জরিমানার মুখে পড়বো।’

হ্যারি ম্যাগুয়ের না হয় রেফারির অজুহাত দিয়েছেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের হারের কারণ তো শুধু ঐ রেফারিই নয়। আরও কিছু গলদ তো নিশ্চিতভাবেই ছিল। প্রথম যে ব্যাপারটা চোখে পড়ার মত ছিল তা হল ইংলিশদের মধ্যভাগের ফুটবলারদের পারফরম্যান্স। মাঝমাঠে পুরো ম্যাচে যেন ইংলিশদের প্রাণই ছিল না। অধিকাংশ সময়েই মাঝমাঠে থাকা হেন্ডারসন, রিসরা ছিলেন ধীরগতির।

যার কারণে ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডদের ভিশন বুঝতে সমস্যা হয়নি। জুড বেলিংহ্যাম পুরো আসর জুড়ে দুর্দান্ত খেলেছেন। কিন্তু এ ম্যাচে ঠিক তেমন ছন্দে ছিলেন না তিনি। কিন্তু ইংলিশ কোচ সাউথগেট তাঁর জায়গায় বদলিই নামাননি। অথচ তাঁর হাতে সাইড বেঞ্চে অনেক অপশন ছিল। কিন্তু পুরো ম্যাচে সেই ব্যবহারটা ঠিকঠাকভাবে করতে পারেননি।

গোলরক্ষক হিসেবে পিকফোর্ডের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ফ্রান্স যে দুটি গোল দিয়েছে তার অন্তত একটা সেভ তিনি করতেই পারতেন। কারণ পিকফোর্ডের যেমন উচ্চতা তাতে সুয়ামেনির গোলটা তিনি সেভ করতে পারতেন। ম্যানইউ এর সাবেক খেলোয়াড় রয় কিন শুয়ামেনির গোলটাকে দারুণ বলে আখ্যা দিলেও তিনি এটাও বলেছেন যে, পিকফোর্ডের আরও ভাল করা উচিৎ ছিল।

তবে, তিনি আঙুল তুলেছেন কোচ সাউথগেটের উপর। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, সাউথগেট ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে তেমন ক্রিয়েটিভ সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। যার কারণে বল পাস কিংবা নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্সের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ম্যাচটাতে দিনশেষে ইংলিশদেরই পরাজয় হয়েছে।

ম্যাচ হারের কারণে অনেক ভুল উঠে আসলেও সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন। পেনাল্টি থেকে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। একই সাথে ওয়েন রুনিকে টপকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার কোনোটাই হয়নি। ইংলিশ স্ট্রাইকার পেনাল্টি মিস করলেন। আর তাতেই ইংলিশদের সর্বনাশ ডেকে আনেন তিনি। সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ মিস করে ইংল্যান্ড। একই সাথে বিদায় ঘন্টাও বেজে যায় ইংলিশদের বিশ্বকাপ যাত্রার।

অবশ্য ম্যাচশেষে ইংল্যান্ডের হারের পেছনে নিজের দায়ই দিয়েছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবল অনেক অপেক্ষার পর আসে। ৪ বছর পর পর এই লড়াই হয়। আমি আমার খেলোয়াড়দের জন্য গর্বিত। আমরা দারুণ একটা সময় কাটিয়েছি। শেষটা ভাল হতে পারতো। এর জন্য দায়টা আমার। এর পুরো দায়ভার আমি নিচ্ছি।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...