সিটির সাম্রাজ্যে হানা দেবে ইন্টার মিলান?

স্পষ্টত ফেবারিট পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিই। তবে, লড়াইটা যখন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের, তখন ইন্টার মিলানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ ম্যাচ জিতলে ম্যানসিটি ঠাই পেয়ে যাবে ট্রেবল জয়ের রেকর্ড বইয়ে। এর আগে শুধুমাত্র ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগের একমাত্র ক্লাব হিসেবে এক মৌসুমে জয় করেছিল প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা।

২০০৮ সালে আবুধাবীর ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানায় আসার পর থেকে সিটিজেনরা অপেক্ষা করছে এমন একটি মুহুর্তের জন্য। ইতোমধ্যে ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী দলে পরিণত হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। বিগত ১২টি মৌসুমের মধ্যে সাত বার জিতে নিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে তারা ঘরে তোলে এফএ কাপের ট্রফিও।

একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ডেলটের দাবী ম্যানচেস্টার সিটি এখন বিশ্ব ফুটবলের সর্বাধিক রাজস্ব উপার্জনকারী ক্লাবে পরিণত হয়েছে। গত মৌসুমে তাদের আয় হয়েছে ৭৩১ মিলিয়ন ইউরো।

তাদের এমন সাফল্যকে ঘিরে রীতিমত প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সিটির বিরুদ্ধে ১১৫টি আর্থিক নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে প্রিমিয়ার লিগ। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্লাবটি এই অনিয়ম করেছে বলে দাবী করেছে লিগ কর্তৃপক্ষ।

ইউরোপেও অভিযোগের কমতি নেই ম্যানচেস্টার সিটিকে নিয়ে। ২০১৪ সালে আর্থিক ফেয়ার প্লে সীমা লংঘনের দায়ে দলটিকে ৬০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছিল ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা ‘আর্থিক ফেয়ার প্লে’র গুরুতর লংঘনের ’ দায়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্লাবটিকে দুই বছরের জন্য উয়েফা টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু স্পোর্টস আর্বিট্রেশন আদালতের আদেশে পরে সেটি প্রত্যাহার হয়।

শনিবার আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইন্টার মিলানকে হারাতে পারলেই ট্রেবল শিরোপা জয় করে অ্যালেক্স ফার্গুসনের ইউনাইটেডের সহাবস্থানে পৌঁছাতে পারবে সিটি। ১৯৯৯ সালে ট্রেবল জয় করেছিল ম্যানইউ।

গত বছর সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে গিয়েছিল সিটি। এবার স্প্যানিশ ওই ক্লাবকে হারিয়েই মধুর প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাাশি সিটিজেনরা পৌঁছে গেছে ফাইনালে। আর্লিং হালান্ডের অন্তর্ভুক্তিতে পেপ গার্দিওলার দলটি নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে।

বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে সিটিতে যোগ দেয়ার পর প্রথম মৌসুমেই ক্লাবটির হয়ে রেকর্ড ব্রেকিং ৫২ গোল করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তুর্কিগামী দলটি তাদের সর্বশেষ ২৭ ম্যাচের মধ্যে শুধুমাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছে। আর ওই পরাজয়টি তারা বরণ করেছে ব্রাইটনের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচে। অবশ্য এর আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছিল পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।

এই মৌসুমে ইউরোপে একটি ম্যাচেও হারেনি ম্যানচেস্টার সিটি। নকআউট পর্বে হেভিওয়েট ক্লাব আরবি লিপজিগ, বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করেছে তারা। সুতরাং ফাইনালে ইন্টার মিলানকে নিয়েও খুব একটা ভীত নয় ম্যানচেস্টার সিটি।

কেভিন ডি ব্রুইনা বলেন, ‘আমরা এখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করতে পারিনি। আট বছর ধরে আমি এখানে আছি এবং দারুণ সময় পার করছি। আট বছরে এতগুলো শিরোপা জয় করতে পারব, তা কি ভাবতে পেরেছিলাম? সম্ভবত পারিনি। তবে একটি শিরোপাই আমাদের অধরা থেকে গেছে, আর সেটি হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আশা করছি শনিবার সেটি জয় করতে পারব।’

তবে, ক্যারিয়ারের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের পথে ইন্টার মিলানের হুকিকে উপেক্ষা করতে পারছেন না সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। কারণ বার্সেলোনা, পোর্তো, বেনফিকা ও নগর প্রতিপপক্ষ এসি মিলানকে হটিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে সিরি এ’ লিগের ক্লাবটি।

তাঁরা হয়তো সিটির মতো দক্ষ দলের মোকাবেলা করেনি। কিন্তু কোপা ইতালিয়ার শিরোপা ধরে রেখে তারা নিজেদের লড়াইয়ের বার্তাটি দিয়ে রেখেছে। ইন্টার জানে তারা আরো উজ্জীবিত হয়েছে। দলে রয়েছে ৩৭ বছর বয়সি এডিন জেকোর মতো অভিজ্ঞ তারকা। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিটিতে কাটিয়েছেন তিনি। এই মৌসুমে ১৪ গোল করেছেন। আরেক ফরোয়ার্ড লাউতারো মাটিনেজের সঙ্গেও রয়েছে তার দারুন বোঝাপড়া।

হয়তো সিটির মতো তারকা মহাতারকায় পরিপূর্ণ নয় সিমোন ইনজাগির দলটি। কিন্তু তাদের রয়েছে সুদৃঢ় রক্ষন, বিপজ্জনক উইং এবং পরিশ্রমী মধ্যমাঠ, যার নেতৃত্বে আছেন নিকোলো বারেলা।

ইনজাগি বলেন, ‘আমরা এমন একটি ফুটবল ম্যাচের কথা বলছি, যেখানে ভয়ের কোন কারণ নেই।’ ডিফেন্ডার আলেসান্দ্রো বাস্তোনি যোগ করেন, ‘আপনি একজন খুনিকে ভয় পেতে পারেন, ফুটবল খেলোয়াড়কে নয়। ভয়ের কথা বলাটা ভুল হবে।’

এর আগে ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল হোসে মরিনহোর নেতৃত্বাধীন ইন্টার মিলান। সেটি ছিল ইতালীয় কোন ক্লাবের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link