নাসিরের ক্রিকেট যাত্রা তবে এখানেই শেষ!

ব্যবধানটা মাত্র এক বছরের। আর এ সময়কালেই মুদ্রার দুই পিঠই দেখলেন নাসির হোসেন। সর্বশেষ বিপিএলে ছিলেন সেরা পারফর্মারদের একজন। বছর ঘুরতেই যখন আরেকটি বিপিএল আসন্ন, তখন কিনা ক্রিকেটেরই বাইরে থাকতে হচ্ছে এ অলরাউন্ডারকে। দুর্নীতির অভিযোগে ছয় মাসের স্থগিতাদেশসহ সব ধরণের ক্রিকেট থেকে তাঁকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে আইসিসি।

২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের আগে মাঠের ক্রিকেটে আর ফিরতে পারবেন বাংলাদেশের এক সময়কার এ প্রতিভাবান এ ক্রিকেটার। নাসিরের বয়স এখন ৩২ পেরিয়েছে। যখন ক্রিকেটে ফিরবেন তখন ৩৪-এ গিয়ে ঠেকবে তাঁর বয়স। প্রশ্ন হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার পর কি আদৌ শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার মতো অবস্থায় থাকবেন নাসির?

এমনিতেও যে খুব ছন্দে ছিলেন, সেটিও নয়। সর্বশেষ বিপিএলের পারফর্ম্যান্সই যা একটু আলোচনায় এনেছিল তাঁকে। তবে ফিটনেস ইস্যুসহ ফর্ম মিলিয়ে কখনোই সেরাদের কাতারে ছিলেন এ অলরাউন্ডার। বিশেষত, দল থেকে বাদ পড়ার সেভাবেই তাঁকে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। এই যেমন সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) মোটে ২৬.৩৫ গড়ে করেছিলেন ৩৬৯ রান।

লিস্ট এ ক্রিকেটে তবুও কিছুটা পারফর্ম করেছেন। তবে সর্বশেষ বিসিএলে নাসিরের ব্যাটিংয়ের অবস্থা ছিল রীতিমত ভয়াবহ। ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংস ১২.৫০ গড়ে করেছিলেন ৭৫ রান। সব মিলিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়, নিষেধাজ্ঞার পর নাসির ফিরলে আদৌ কি এই চিত্রের রদবদল ঘটাতে পারবেন। একই সাথে এই শঙ্কাটাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না- নাসির যখন ফিরবেন তখন দলগুলোর আগ্রহের তালিকায় থাকবেন তো?

অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব কী দারুণ ভাবেই না ঘটেছিল। একটা সময়ে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন। মিস্টার ফিনিশার তকমা লেগেছিল তাঁর গায়ে। সাত-আটে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, প্রয়োজনে অফ স্পিনে ব্রেক থ্রু, আর দুর্দান্ত ফিল্ডিং- সব কিছু মিলিয়ে দারুণ এক অলরাউন্ডার হওয়ার পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ক্যারিয়ার বিস্মৃত হওয়ার পথেও ছিলেন এ অলরাউন্ডার।

কিন্তু শৃঙ্খলাজনিত কারণেই যেন হারিয়ে গেলেন এ ক্রিকেটার। বাংলাদেশের হয়ে ১৯টি টেস্ট, ৬৫টি ওয়ানডে ও ৩১টি টি-টোয়েন্টিতেই শেষ নাসিরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ফিরতে চেয়েছিলেন। তবে সেই সুযোগ কিংবা প্রচেষ্টার রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেল তাঁর কারণেই।

২০২১ সালে টি টেন লিগে খেলতে গিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে নাসিরসহ ৮ ক্রিকেটারকে আইফোন-১২ ‘উপহার’ দেওয়া হয়। যার একেকটির দাম ৭৫০ ডলারের বেশি। আইসিসির নিয়মানুযায়ী, ৭৫০ ডলারের বেশি কোনো উপহার পেলে সাথে সাথে আকসুকে জানাতে হবে। কিন্তু নাসির সেটা করেননি।

এমন ভুলের কারণেই নাসির ফেঁসে গেলেন। তবে নাসির চাইলেই শাস্তিটা কমাতে পারতেন। কিন্তু আকসুর ২.৪.৪ ধারা অনুযায়ী, আইফোন ১২ নেওয়ার মাধ্যমের দুর্নীতির প্রস্তাব বা আমন্ত্রণের বিস্তারিত তথ্য দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাকে দেননি তিনি। এ ছাড়া ২.৪.৬ ধারাও ভেঙেছেন নাসির। তাতে আছে, সম্ভাব্য দুর্নীতির তদন্তে কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়াই সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানানো বা ব্যর্থ হওয়া।

সব মিলিয়ে নাসিরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখন হুমকির মুখেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটই আর কখনও খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই। নিজের চরম ভুলের মাশুল হিসেবে ক্রিকেটার নাসিরের ক্যারিয়াটাই এখন শেষ হওয়ার পথে।

অবশ্য সেই সম্ভাব্যতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নাসির আবার ফিরতে পারেন বাইশ গজের ময়দানে। তবে তার জন্য তাঁকে পেরোতে হবে অনেক প্রতিকূলতার শ্বাপদসংকুল পথ। নাসির পারবেন তো?

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link