সোহান, ধোনি হবেন?

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যদি তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনিকে অধিনায়ক করা না হত তবে কি হত? হয়তো, ভারতীয় দল কোনো সিনিয়র ক্রিকেটারের অধীনেই বিশ্বকাপটা খেলতে যেত। হয়তো সিনিয়রদের সবাই খেলতেন সেই বিশ্বকাপে।

হয়তো বা বিশ্বকাপে ভারতের ভরাডুবি হত, কিংবা হত না। তবে, একথা ঠিক – যদি সেবার ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) বুক ভরা সাহস না দেখাতো, তাহলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটাই আজকের অবস্থানে আসতো না।

বলাই বাহুল্য সেই বিশ্বকাপটা ভারত জিতে নেয় বিরাট এক জুয়া খেলে। তরুণ ধোনির অধীনে আরো তরুণ এক দল তাঁরা পাঠিয়ে দেয় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের প্রথম বিশ্বকাপে। আর সেই ছোট বিশ্বকাপটা আরো মোহনীয় কায়দায় জিতে ফেলে ভারত ছোট ফরম্যাটের গুরুত্বটা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। আর এরই ধারাবাহিকতায় বিসিসিআই নিয়ে আসে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)।

আইপিএল আসার পর টি-টোয়েন্টি তো বটেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানচিত্রই পাল্টে যায়। হয়তো আর কোনো কিছুই হত না – যদি না সেই বিশ্বকাপটায় ধোনি অধিনায়ক না হতেন, কিংবা ভারত বিশ্বকাপটা জিততে পারতো। কে জানে যদি, ধোনি না থাকতেন তাহলে হয়তো ভারত বিশ্বকাপ জয়ের ধারের কাছেও যেতে পারতো না।

ধোনি সেই বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ক্রিকেটের মহীরূহ হয়েছেন। একজন অধিনায়ক হিসেবে যা যা অর্জন করা সম্ভব, যা যা জয় করা সম্ভব সবই জিতেছেন, সবই অর্জন করেছেন। ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক নির্বাচন করতে গেলে সবার ওপরেই আসে তাঁর নাম।

বাংলাদেশে ধোনির সবচেয়ে বড় সমর্থক কে জানেন? হয়তো জানেন না, কিন্তু মানুষটাকে আপনি কিংবা আমি চিনি। তিনি, নুরুল হাসান সোহান। এই সময়ে তিনি অবশ্যই বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক। এই সোহান আদর্শ মানেন ধোনিকে। তিনি হতে চান ধোনির মত।

ভাগ্যের কি খেলা, আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যখন দুয়ারে – তখনই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্বের আর্মব্যন্ডটা পরলেন সোহান। হোক সেটা একটা মাত্র সিরিজের জন্য, হোক সেটা কেবলই সাদামাটা এক টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য – তারপরও দায়িত্ব তো দায়িত্বই। আর স্বপ্ন দেখতে হলে বড় দেখাটাই ভাল। তাহলেই না, স্বপ্নের কাছাকাছি যাওয়া যাবে।

সোহানকে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব দেওয়াটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। টি-টোয়েন্টিতে আমরা কখনোই খুব কার্যকর ছিলাম না। ইদানিং যেন নিজেদের মাঠ ছাড়া খেলাটাই ভুলে যাচ্ছি। বিশেষ করে দলে সিনিয়রদের উপস্থিতি অনেকক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকাও রাখছে।

ফলে বিসিবি করলে যেটা, সেটা হল কেবল সাকিব আল হাসানকে রেখে বাকি সিনিয়রদের সরিয়ে নিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। তামিম ইকবাল আগেই অবসর নিয়ে ফেলেছেন এই ফরম্যাটে। এই ফরম্যাটের সর্বশেষ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমকে বাধ্যতামূলক বিশ্রাম দেওয়া হল।

সাকিব আগাম ছুটি না চাইলে হয়তো সোহানের এই দফায় নেতৃত্বের স্বাদ পাওয়া হত না। কিন্তু, সেটা সৌভাগ্যক্রমে হোক আর যেভাবেই হোক, সোহান পেয়েছেন। আর এই স্বাদটা যে মুহূর্তের মধ্যে বিষে পরিণত হতে পারে সেটাও নিশ্চয়ই তাঁর অজানা নয়।

হ্যাঁ, এখনও হয়তো সোহান নিজেকে পুরোপুরি টি-টোয়েন্টিতে মেলে ধরতে পারেননি। কিন্তু, তাঁর মধ্যে টি-টোয়েন্টির মেজাজটা আছে। আছে বুক ভরা সাহস। জুয়া যদি খেলতেই হয়তো – তাহলে এমন খেলোয়াড়কে নিয়েই খেলা উচিৎ যিনি পরোয়া করেন না কোনো কিছুর। সোহান তেমনই একজন খেলোয়াড়। যেমন ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

জানি, মহেন্দ্র সিং ধোনির সাথে সোহানের তুলনা একদমই বাড়বাড়ি। দু’জনের মধ্যে আকাশ আর পাতালের পার্থক্য। ধোনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন তিনিও সোহানের চেয়ে তেমন একটা এগিয়ে ছিলেন না। তিনি পরে সেরা হয়েছেন। সোহান সেরা হবেন কি না জানি না, কিন্তু তাঁর মধ্যে সেই সম্ভাবনা আছে। সোহানকে উড়তে দিন। সোহানকে ধোনি হতে দিন। আমি বাজি রাখতে চাই সোহানে। আপনি?

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link