১৯৭৫ থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ— প্রথম আসরটা বাদ দিলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছাড়া এরপর কখনই আর কোনো ক্রিকেট বিশ্বকাপ মাঠে গড়ায়নি। তবে এবার বোধহয় সেই ‘না হওয়া’ ঘটনাটায় ঘটতে যাচ্ছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপের টানা দুই বারের চ্যাম্পিয়ন আর তিন বারের ফাইনালিস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার আসন্ন বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।
জিম্বাবুয়েতে চলছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। ১০ দলের এ লড়াইয়ে মাত্র দুটি দল সুযোগ পাবে আসন্ন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। আর সেই যাত্রায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম হোঁচট খেয়েছিল জিম্বাবুইয়ানদের কাছে। আর তাতেই বিশ্বকাপ খেলার পথে একটা শঙ্কার সৃষ্টি হয় ক্যারিবিয়ানদের।
সেই শঙ্কা আরো তীব্রতায় রূপ নিয়েছে শেষ ম্যাচের পর থেকে। জিম্বাবুয়ের পর এবার ডাচদের কাছে হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছে ক্যারিবিয়ানদের।
অবশ্য এমন একটা ম্যাচ যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছ থেকে হাত ফসকে যাবে, সেটাই বা কে ভেবেছিল। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিকোলাস পুরানের সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছিল ৩৭৪ রান।
কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া এমন পাহাড়সম লক্ষ্যও টপকে ফেলার দু:সাহসটা দেখিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। নেদার তেজা নিদামানুরুর সেঞ্চুরিতে ডাচরাও থামে ঠিক ৩৭৪ রানে। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে ক্যারিবিয়ানদের সামনে ডাচরা দাঁড়াতেই পারবে না এমনটাই সবাই ভেবেছিল। কিন্তু ডাচদের যেন এদিন সব সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার দিকেই চোখ ছিল।
হোল্ডারের করা সুপার ওভারে নেদারল্যান্ডসের অলরাউন্ডার লোগান ফন ভিক ক্রিজে এসে তোলেন ৩০ রান। ওভারের ৬ বলেই মারেন বাউন্ডারি। হোল্ডারের বলে ৩ ছক্কা ও আর ৩ চারে ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। সুপার ওভারে বল হাতেও আসেন ফন ভিক। শুরুতে ছক্কা হজম করলেও পরের ৫ বলের মধ্যেই ২ উইকেট তুলে নেন এই পেসার।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ক্যারিবিয়ানদের এমন হারে, একটা প্রশ্নই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। তবে কি বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন অনেকটাই শেষ হয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের?
বাস্তবতা বলছে, আসন্ন বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলাট সম্ভাবনা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার সিক্সে উঠেছে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে। অথচ তাদের গ্রুপে থাকা অন্য ২ দলঅন্য দুই দল জিম্বাবুয়ে ৪ পয়েন্ট আর নেদারল্যান্ডস ২ পয়েন্ট নিয়ে সুপার সিক্স খেলবে।
এমতাবস্থায়, অতি নাটকীয়তা না হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ খেলার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ সুপার সিক্সে ওঠা দলগুলো এই রাউন্ডে খেলবে অপর গ্রুপ থেকে উঠে আসা ৩ টি দলের বিপক্ষে।
সে হিসেবে সুপার সিক্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ড আর ওমান। এখন এই তিন ম্যাচেই ক্যারিবিয়ানরা জিতলেও তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলগুলোর প্রতি। শুধু তাই নয়, নিজেদের রান রেট টাও নিতে হবে বাড়িয়ে। কারণ এই মুহূর্তে সুপার সিক্স পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি সুপার সিক্সের একটি ম্যাচেও পরাজয় বরণ করে, সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাব্যতাটা কতটুকু? উত্তরটা হচ্ছে, এমন কিছু হলে বিদায় সুনিশ্চিত। এমনিতে জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কা সুপার সিক্স রাউন্ডে আর একটা করে ম্যাচ জিতলেই বিশ্বকাপে খেলার পথে অনেকটা পথ এগিয়ে যাবে।
এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ডরাও এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ খেলার পথে দারুণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় টানা দুই ম্যাচ হেরে বেশ খানিকটা পিছনেই রয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। সুপার সিক্সে অনেক ‘যদি, কিন্তু’র সমীকরণ মিলিয়েই তাদের খেলতে হবে। যেটা অতি নাটকীয়তা ছাড়া সম্ভব নয়।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামি বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার ক্ষেত্রে এবার আর কোনো সুযোগ দেখছি না আমি।’ যদিও সমীকরণটা তখনও একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েনি। কিন্তু জটিল সমীকরণের গ্যাড়াকলে এবার পড়লো ক্যারিবিয়ানরা। যেখান থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটিয়ে বিশ্বকাপ খেলাটা এখন কঠিনই বটে হোল্ডার-পুরাণদের জন্য।