অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর মূল্যায়ন

দুই ম্যাচ হাতে রেখেই সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। দলের এমন পারফরম্যান্সে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসাধারণ নেতৃত্বও বিশাল ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের অধিনায়কের কিছু সিদ্বান্ত ম্যাচের গতিপথই পাল্টে দিয়েছে। এই সিরিজে তাঁর নেতৃত্বের দক্ষতাই বলে দিচ্ছে অধিনায়ক হিসাবে এখন অনেকটাই পরিণত তিনি।

দুই ম্যাচ হাতে রেখেই সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। দলের এমন পারফরম্যান্সে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসাধারণ নেতৃত্বও বিশাল ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের অধিনায়কের কিছু সিদ্বান্ত ম্যাচের গতিপথই পাল্টে দিয়েছে। এই সিরিজে তাঁর নেতৃত্বের দক্ষতাই বলে দিচ্ছে অধিনায়ক হিসাবে এখন অনেকটাই পরিণত তিনি।

তখনকার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হয় মাহমুদউল্লাহকে। অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর নেতৃত্ব গুণ নিয়ে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব ক্রিকেটে ফেরার পর বিভিন্ন সময় অনেকেই চেয়েছেন সাকিবকে আবারও দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে।

তাই ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেলে সেই আলোচনার পালে হাওয়া লাগতো আবারো। তবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে এখন পর্যন্ত দারুণ নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, দলও পেয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। তিনি ক্রমাগত উন্নতিও করছেন। মনে করা হচ্ছে তিনি নিজকে মাশরাফি বিন মর্তুজার মত করে তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

মাশরাফি সব সময়ই ক্রিকেটারদের উৎসাহ ও সাহস দিয়ে আগলে রাখতেন। যেই কাজটা এই সিরিজে এখন পর্যন্ত দারুণ ভাবে করেছেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ম্যাচে ১৯ রানে ৪ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। ম্যাচ শেষে এই স্পিনার বলছিলেন, ‘রিয়াদ ভাই আর সাকিব ভাই দুজন মিলেই আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমি বল করার সময় তারা কথা বলেছে। আমি ঐ রকমই করার চেষ্টা করেছি।’

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ১২১ রান তাড়া করতে নেমে ৬৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৩১ বলে হার না মানা ৩৭ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ঐ ম্যাচ জিতেই সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

ম্যাচ শেষে তিনিও এই ইনিংস খেলার জন্য বড় কৃতিত্ব দিয়েছিলেন অধিনায়ককে। ‘উইকেটে যাওয়ার পর রিয়াদ ভাইয়ের থেকে একটাই ম্যাসেজ ছিল দুই তিন ওভার যেন নরমল খেলি। তাঁর এই কথাটা খুব কাজে দিয়েছে। আমার প্ল্যান ছিল শেষ পর্যন্ত যেন উইকেটে থাকতি পারি, ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারি।

জাতীয় দলের আরো একজন ক্রিকেটার ক্রিকেটভিত্তিক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে বলেছেন মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্ব গুনের কথা। ঐ সদস্য জানিয়েছেন তাঁর বড় গুণ হলো প্রতিটা ক্রিকেটারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।

ঐ ক্রিকেটার বলেন, ‘ভাই (মাহমুদউল্লাহ) ড্রেসিংরুমে আমাদের সময় দেন এবং এটি একজন নেতা হিসেবে তার সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি খুব বেশি প্রভাব দেখান না ও সব সময় আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে সমর্থন করেন এবং ম্যাচের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করার কথা বলেন।’

জাতীয় দলের ঐ সদস্য আরো জানিয়েছেন এটা সবাইকেই ড্রেসিংরুমে স্বস্তি দিচ্ছে, ‘এটা খুবই স্বস্তিদায়ক যখন আপনি জানেন যে আপনার অধিনায়ক ঠাণ্ড মাথায় আপনাকে সমর্থন করছেন। এটি আপনাকে পুরোপুরি নিজকে মেলে ধরার স্বাধীনতা দেয়।’

গতকাল ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর আরো একটি কাজ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১২৮ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর সাকিবকে তিনি বলেছিলেন দলের সবার সাথে কথা বলতে। কারণ সাকিবের কথা সবাইকে বাড়তি উৎসাহ দেয়। সাকিবও সবাইকে বলেছিলে বাড়তি মনোযোগ দিয়ে শুরুতেই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরতে।

গতকাল ম্যাচে শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেও এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ঘুড়ে দাঁড়ায় সফরকারীরা। এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১ উইকেট হারিয়ে ৭১। অর্থাৎ, হাতে ৯ উইকেট নিয়ে প্রয়োজন ছিল ৪০ বলে ৫৭ রান। বাংলাদেশের অধিনায়ক জানিয়েছেন তার কথা মতই সাকিব সবাইকে বলেছিলেন শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে।

মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘আসলে আমি সাকিবকে মাঠে নামার আগে ছেলেদের সাথে কথা বলতে বলেছিলাম কারণ আমি মনে করি মাঝে মাঝে তার কথা গুলো খুব উৎসাহদায়ক। সাকিব আমাদের সেরা ক্রিকেটার ও অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। সাকিব বলেছিলেন যে আমাদের চাপ নেওয়া উচিত নয় এবং যদি আমরা দ্রুত ওদের উইকেট নিতে পারি বা যদি নাও নিতে পারি তবুও আমরা খেলা ছেড়ে দেবো না।’

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কত্বের প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি মনে করেন মাহমুদউল্লাহ এখন আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে গেছেন। যার কারণে এখন তাকে আরো পরিপক্ক মনে হয়।

বাশার বলেন, ‘আমি তাঁকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে (খুলনা টাইটানস) তার অধিনায়কত্ব খুব কাছে থেকে দেখেছি। সব সময় সে উন্নতি করছে। সে তাঁর আবেগ দূরে রেখেছেন, যা একজন অধিনায়কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্বান্ত নিচ্ছে ও বোলারদের খুব ভালো ভাবে সামলাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সে সবার থেকে বেশি দূরে যাচ্ছে না।’

মাহমুদউল্লাহ অধিনায়ক হওয়ার পর বাশারই জানিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহকে অন্তত এক বছর সময় দিতে হবে। কারণ অধিনায়ক হিসাবে একজনের যোগ্যতা নির্ণয় করতে তাকে অন্তত এক বছর সময় দেওয়া উচিত। বাশার মনে করেন মাহমুদউল্লাহ সতীর্থদের বুঝতে পারে বলেই সফল হচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি একজন অধিনায়কের দল গুছিয়ে নিতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে কারণ তত দিনে সে তার দলের সতীর্থদের সাথে ভালো যোগাযোগ করতে পারবে।নযদি কাউকে এক বছর সময় দেওয়া হয় তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন তিনি অধিনায়ক হিসাবে যোগ্য কিনা।’

বাশার আরো বলেন, ‘কোনো অধিনায়কের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার দলের সদস্যদের সাথে সে কী কাজ করবে। প্রতিটা সদস্যই আলাদা। তাই সবার সাথে আলাদা কাজ করতে হবে। সতীর্দের বুঝতে না পারলে আপনি ভালো অধিনায়ক হতে পারবেন না। আপনি যত ভালো সিদ্বান্তই গ্রহণ করেন না কেনো। আপনি মুখস্থ অধিনায়কত্ব করে ভালো করতে পারবেন না, আমি তাঁকে কখনোই সে রকম মনে করি না।’

জানিয়ে রাখা ভালো, অধিনায়ক হিসেবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারতের সাথে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে যাত্রা শুরু হয় মাহমুদউল্লাহর। এরপর থেকে ১৫ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এই ১৫ ম্যাচের ভিতর বাংলাদেশ জয় পেয়েছে নয় ম্যাচে। যার পাঁচটিই সর্বশেষ ছয় ম্যাচে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...