ক্রিকেটের দুনিয়ায় কতশত ঘটনাই তো ঘটে। তেমনি ভারতের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট দুলীপ ট্রফি’র মঞ্চে ঘটে গেল অন্যরকম একটি ঘটনা। কখনো শুনেছেন উশৃঙ্খল আচরণের জন্য খোদ নিজ দলের অধিনায়ক একজন খেলোয়াড়কে মাঠের বাহিরে পাঠিয়ে দিতে!
তেমনই এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হল ক্রিকেট বিশ্ব। বাইশ গজে স্লেজিং একটি সাধারণ ঘটনা হলেও একটা সীমা পর্যন্তই এর বৈধতা রয়েছে। মাঠে খেলতে নেমে আর যাই হোক আপনার অবশ্যই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের প্রতি সম্মানটুকু বজায় রাখতে হবে।
কোয়েম্বাটোরে বর্তমানে হচ্ছে দুলীপ ট্রফির ফাইনাল। মুখোমুখি ওয়েস্ট জোন ও সাউথ জোন। ম্যাচের পঞ্চম দিনে ওয়েস্ট জোনের ক্রিকেটার তরুণ যশস্বী জয়সওয়াল যেন কিছুতেই নিজের আচরণটা বাগে রাখতে পারলেন না। ফিল্ডিং এর সময় প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটার রবি তেজাকে উদ্দেশ্য করে ক্রমাগত মন্তব্য ছুঁড়তে থাকলেন যশস্বী। আম্পায়ারের কাছে বিষয়টি অভিযোগ করেন রবি তেজা।
আম্পায়ার প্রথমে সতর্ক করে দেন যশস্বী জয়সওয়ালকে। ঠিক সেই সময় ওয়েস্ট জোনের অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে দৌড়ে আসেন পরিস্থিতি দেখার জন্য। তারপর রাহানে জয়সওয়ালকে তাঁর শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেছিলেন। এবং তিনি কথা বলে তেজাকেও শান্ত করে গেলেন বিষয়টি সামাল দেয়ার জন্য। অধিনায়কসুলভ আচরণ যাকে বলে আরকি! আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়েছিল।
কিন্তু জয়সওয়াল সম্ভবত ক্রিকেটারের আচরণবিধিটা আবার ভুলে গেলেন। ৫৭তম ওভারে আবারও জয়সওয়াল স্লেজিং করতে থাকলেন। এবার আম্পায়ার রীতিমতো বিরক্ত হয়ে গেলেন। ডাক পড়লো অধিনায়ক রাহানের। বিষয়টি সমাধান করার জন্য এবার অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে সিদ্ধান্ত নিলেন যশস্বী জয়সওয়ালকে মাঠের বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়ার।
তাই হলো। যশস্বী চলে গেলেন মাঠের বাহিরে। ক্রিকেট মাঠে অভিনব এক দৃশ্যের অবতারণা হল। অবশ্য যশস্বীকে বেশিক্ষণ মাঠের বাইরে থাকতে হয়নি। মাত্র সাত ওভার বাইরে থেকেই আবার মাঠে ফেরেন তিনি। খেলা শেষে ওয়েস্ট জোন ২৯৪ রানে জয়ী হয়, এবং ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান ম্যাচটির ‘ব্যাডবয়’ ২৬৫ রান করা যশস্বী জয়সওয়ালই।
ম্যাচ শেষে এমন সিদ্ধান্তের জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটার রাহানে। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি, প্রতিপক্ষ, আম্পায়ার ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের সম্মান করতে হবে। তাই মাঝেমধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়।’
ম্যাচ শেষে খোদ জয়সওয়াল জানালেন মাঠের বাহিরে পাঠানোর প্রসঙ্গে অবশ্য ‘সেফ’ই খেললেন। বললেন, ‘আজ্জু ভাই যাই বলুক না কেন, আমি তা গুরুত্ব সহকারে সেটা মেনে নিই এবং সেটি অনুসরণ করার চেষ্টা করি।’
কিন্তু যদি আসলেই তিনি রাহানের সতর্কবানীটা প্রথমেই গুরুত্ব সহকারে নিতেন। তখনই নিজের আচরণকে সংযত করে নিতেন। তাহলে সম্ভবত জল এতদূর গড়াতো না। তাঁকে এভাবে মাঠের বাহিরে বের করে দেওয়া লাগতো না। আশা করি জয়সওয়াল তাঁর ভুলটুকু পরবর্তীতে শুধরে নেবেন। কেননা একজন ভালো খেলোয়াড়ের জন্য দক্ষ খেলোয়াড়শৈলীর পাশাপাশি ভদ্রতার মাপকাঠি জানাটাও জরুরী।