ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বিদেশী রিক্রুট বরাবরই আলাদা একটা আকর্ষণ তৈরি করে। কিন্তু এখানেই এবার পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে তেমন কোনো বিদেশি তারকার উপস্থিতি মেলেনি। যা একটু জৌলুশ এসেছিল পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের কল্যাণে। কিন্তু সেই পাকিস্তানিরাও ফিরে গিয়েছেন বিপিএল শেষ হওয়ার আগে।
কোয়ালিফায়ার কিংবা এলিমিনিটর, কোনো ম্যাচেই দেখা মিলবে না পাকিস্তানি কোনো ক্রিকেটারের। আর এখানেই দলগুলো বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। প্রথমত, পরের পর্বে ওঠা ৪ দলেরই অন্যতম সেরা পারফর্মাররা ছিল পাকিস্তানি কোনো ক্রিকেটার। এখন তাদের হারিয়ে বিপিএলের শেষ মুহূর্তে এক প্রকার নতুন কম্বিনেশন নিয়েই মাঠে নামতে হবে দলগুলোকে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে এই মুহূর্তে মানসম্মত বিদেশি ক্রিকেটারের অপ্রতুলতা।
বিপিএলের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় আরো দু’টি টি-টোয়েন্টি লিগ চলেছে। একই সময়ে তিনটি টুর্নামেন্ট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি ক্রিকেটারদের সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে, এর মাঝে থেকেও যতটা সম্ভব বিপিএলের দলগুলো বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। অনেক দলে নতুন বিদেশি রিক্রুট এসেও পৌঁছেছে। কিন্তু এই যে বারংবার দলে পরিবর্তন, এক বিদেশির জায়গায় আরেক বিদেশির আগমন। এতে করে কোচদেরও মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে।
টুর্নামেন্টের শেষ মুহূর্তে এসে কোচদের বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে। কারণ গোটা টুর্নামেন্টেই প্রতি দলকেই একপ্রকার জোড়াতালি দিয়ে দল সাজাতে হয়েছে। এতে করে কোচের সাথে নতুন দলে আসা বিদেশি ক্রিকেটারের দর্শন নাও মিলতে পারে। সেই আশঙ্কা অবধারিতভাবেই আছে। এমনটা হয়েছেও বটে। বিপিএলের প্রায় প্রতিটা দলের কোচই এই চ্যালেঞ্জের ব্যাপারটা প্রকাশ্যে এনেছেন।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের কোচিং স্টাফ রাজিন সালেহ ক্রিকবাজের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় বলেছেন, ‘পুরো টুর্নামেন্টে বিদেশি রিক্রুট অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে। এটা আসলে কোচদের জন্য কঠিন। কারণ আমরা একজন খেলোয়াড়কে তাঁর প্লেয়িং রোল সম্পর্কে আগে অবগত করি। পেশাদার ক্রিকেটাররা এটা ভালই বুঝে নেয়। কিন্তু তারপরও কিছু সমস্যা হয়। আমি ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা সুন্দর রাখার চেষ্টা করি। কারণ টুর্নামেন্ট চলাকালীন এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।’
রংপুর রাইডার্সের কোচ সোহেল ইসলাম বলেছেন, ‘সব বিদেশিই যে খুব পেশাদার, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। যেমন আমাদের শুরুর বিদেশি খেলোয়াড়রা তেমন পেশাদার ছিল না। অবশ্য সেটা কোনো ইস্যু হয়ে দাড়ায়নি। রহমানুল্লাহ গুরবাজ আবার বেশ পেশাদার। সে জানে, তাঁর প্লেয়িং রোল কেমন। আমি যেমন চেয়েছি, ওকে টপ অর্ডারে খেলাব। ও সেটা মেনেই অল্প সময়ে যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নিয়েছে। এই অভ্যাসটা আসলে তৈরি হয়ে গিয়েছে। কারণ ওরা প্রচুর টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলে। যেকোনো কন্ডিশনের সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।’
ফরচুন বরিশালের কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম মনে করেন, ‘বিদেশি ক্রিকেটারদের সাথে সমন্বয়টা সবচেয়ে জরুরি। তিনি বলেন, প্রথমেই বিদেশিদের সাথে আগে নিজেদের পরিকল্পনা খোলাসা করা উচিৎ। এতে করে সব কিছু সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এখানে কোনো ভাবেই ঐ খেলোয়াড়ের উপর কোনো চাপ তৈরি করা উচিৎ না। এতে করে হিতের বিপরীত ঘটতে পারে।’
বিপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে তিন বার শিরোপাজয়ী এ কোচকে অবশ্য বিদেশি ক্রিকেটারদের ব্যাপারে তেমন সমস্যা পোহাতে হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অন্য দলের চেয়ে আমাদের দলের সুবিধা হলো, আমাদের দলে যে সব বিদেশিরা খেলছেন তারা এর আগেও আমাদের দলের হয়ে খেলেছেন। এ কারণে তারা আমাদের ভাবনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত থাকে। নতুন করে বোঝাতে হয় না। এটাই আসলে সহজ করে তুলেছে সবকিছু।’
বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে সালাউদ্দিন আরো যুক্ত করে বললেন, ‘এই যেমন চার্লসকে আমরা গত দুই ম্যাচে বসিয়ে রেখেছি। অথচ সে কিন্তু অন্যতম পারফর্মার। কিন্তু দলে নারাইন, রাসেল আসলে আর কিছু করার থাকে না। সে এটা নিজেও স্বাভাবিক নিয়েছে। এমন পেশাদারিত্ব থাকা খুবই জরুরি। এ দিক দিয়ে আমাদের দলটা কিছুটা ঝামেলামুক্তই আছে।’