২৭ জানুয়ারি ২০২২। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের সামনে তামিম ইকবাল জানালেন, ছয় মাস আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলবেন না তিনি। গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও ছিলেন না; নিজেই সরে দাঁড়ান। এরপর বেশ কয়েক টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেও নিজেকে সরিয়ে রাখেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও সমর্থকদের কাছে একটা ব্যাপার তখন প্রায় স্পষ্ট – তামিম ইকবাল টি-টোয়েন্টি তে আর ফিরছেন না।
তামিমের ছয় মাসের ছুটি শেষ হতে এখনও দিন বিশের মত বাকি। এর মধ্যেই আবার আলোচনায় তামিমের টি-টোয়েন্টি ফর্যমাটে ফেরা, না ফেরার বিষয়। দিন কয়েক আগেই জানা গেছে আসন্ন অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলেও থাকছেন না তামিম; বাকি দুই ফরম্যাটেই আপাতত মনযোগী হতে চান তিনি। তবে তামিম ভবিষ্যতে আর টি-টোয়েন্টি খেলবেন না এমন কিছু কোথাও তিনি স্পষ্ট করে বলেননি।
হুট করেই যেন আলোচনায় তামিম। দিন কয়েক আগে এক অনুষ্ঠানে তামিম বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে তাঁর যে পরিকল্পনা আছে সে ব্যাপারে তাঁকে কথা বলার সুযোগই দেওয়া হয়নি। তামিমের ভাষ্যমতে, হয়ত গণমাধ্যম কর্মী বা মিডিয়ার পক্ষ থেকে কেউ বলে দেয় – নয়তো অন্য কেউ এসে কিছু বলে দেয়। কিন্তু তামিমের কাছ থেকে টি-টোয়েন্টির পরিকল্পনার ব্যাপারে শুনতে চাননি কেউই।
তামিমের কথার প্রেক্ষিপে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নাজমুল হাসান পাপন আবার দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি জানালেন, তামিম মিথ্যে বলেছে। ফোন কলে চারবার তামিমের সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে বোর্ড কর্তাদের। এমনকি তিনি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করেছেন। তামিম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে আপাতত দূরে থাকতে চায়, সে এই ফরম্যাটে খেলতে চায় না।
তামিম টি-টোয়েন্টিতে ফিরতে চাইলে বিসিবি স্বাগত জানাতে প্রস্তুত – এমনটাও পরিষ্কার করেন বিসিবি সভাপতি। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে হলে অবশ্যই আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে হবে এমনটাও জানান পাপন।
দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনার শেষ নেই। কারো কারো মতে তামিম বার বার টি-টোয়েন্টি থেকে বিশ্রাম নেওয়ার চেয়ে এই ফরম্যাটকে বিদায় জানানো শ্রেয় বলে মনে করছেন। কেউ আবার মনে করছেন তামিম টি-টোয়েন্টিতে ফিরতে চান, তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত।
তবে, এ ব্যাপারে তামিমের ভাবনা কি সেটা এখনও অস্পষ্ট। সেই অস্পষ্টতা কাটবে চলতি মাসের শেষে। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন মনগড়া তথ্যের কারণে বিরক্ত বাংলাদেশের এই ওপেনার।
তামিমের ডট বল খেলা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তো আছে, সেটা থাকতেই পারে। টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স, ফর্ম – সবকিছু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন বা সহসাই নিবেন এমন কোনো ইঙ্গিতও তিনি দেননি। ছয় মাস শেষ না হতেই তামিমের টি-টোয়েন্টি তে না ফেরার ব্যাপারে মন্তব্য করা কিংবা মনগড়া কিছু বলাটাও কতটুক-ই বা যৌক্তিক? স্বেচ্ছায় টি-টোয়েন্টি থেকে বিশ্রামে যাওয়া তামিম – নিশ্চয়ই সময় শেষে নিজের ইচ্ছের কথা জানাবেন।
তামিমের নেয়া সময় শেষ না হওয়া অবধি এই প্রসঙ্গ আলোচনায় আনাটাও অনর্থক। টি-টোয়েন্টি নিয়ে আপাতত তামিমের ভাবনাটা একান্ত। সময় শেষ হলে তিনি হয়ত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিবেন – ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট নিয়ে তার ভাবনা কি। এর উত্তরটা স্রেফ তামিমের জানা। আপাতত এই উত্তরের খোঁজ পেতে এ ব্যাপারে জলঘোলা না করে দিন কয়েক অপেক্ষা করাই উত্তম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামিমও গুজব না ছড়িয়ে অপেক্ষা করার আহ্বানই জানিয়েছেন। লিখেছেন, ‘সময় হলে আমার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই আমি জানাব। ৬ মাস হতে তো এখনও দেড় মাসের বেশি বাকি। কিন্তু সেই সময়টার অপেক্ষা কেউ করছে না। এটাই দু:খজনক।
হয়ত মাস খানেকের মধ্যেই অবসান ঘটবে ‘তামিম ও টি-টোয়েন্টি ভাবনা’ বিতর্কের। এই অপেক্ষার প্রহর মিষ্টি বা তেতো যাই হোক না কেন, এখন অপেক্ষার কোনো বিকল্পও নেই। তবে, প্রিয় তামিম, যেভাবে পুরোটা দায় গণমাধ্যমকে দিয়ে দিলেন – সেটা হয়তো যৌক্তিক হল না। তবে, এটা ঠিক আজকাল সবাই নিজেদের পিঠ বাঁচাতে সাংবাদিকদেরই দোষ দেয়!