কোটিনহো, ডেম্বেলে ও গ্রিজম্যান, বার্সার লস প্রজেক্ট

ফিলিপে কোটিনহো, উসমান ডেম্বেলে আর আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। একজন ব্রাজিলিয়ান আর দুইজন ফরাসিকে হঠাৎ এই তালিকায় রাখার কারণ কি? এমন প্রশ্নের উদয় হতেই পারে। তবে জিজ্ঞাসু মনের সকল সংশয় দূর করে দিতে পারে এই এক তথ্যে— বার্সার ইতিহাসের সবচেয়ে দামি তিন ফুটবলার হচ্ছেন এই তিনজন।

কোটিনহো আর গ্রিজম্যান, বার্সার ইতিহাস থেকে অতীত হয়েছেন আগেই। এবার সেই পথেই আছেন দেম্বেলে। শোনা যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ গন্তব্য হিসেবে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিতে পারেন এ ফুটবলার।

প্রশ্নটা হচ্ছে, কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে এই তিন ফুটবলারের কাছ থেকে কী পেয়েছে বার্সেলোনা? পরিসংখ্যান কিংবা প্রেক্ষাপট, দুটোই জানাচ্ছে, বার্সার ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে তিনটি সাইনিংয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে রইল এই তিন ফুটবলারের দলবদল।

ফিলিপে কোটিনহো তখন রীতিমত লিভারপুলের হৃৎপিণ্ড হয়ে উঠেছেন। লিভারপুলের হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর পথে যিনি হয়ে উঠেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপের তুরুপের তাস।

এমন ছন্দে থাকা মিডফিল্ডারের উপর চোখ পড়ল বার্সেলোনার। তাঁকে যে কোনো মূল্যে দলে ভেড়াতে চাইল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। কোটিনহোও চাইলেন বার্সা শিবিরে নাম লেখাতে। এরপরই আসলো সেই মুহূর্ত।

লিভারপুল থেকে ক্লাব রেকর্ড ১৬০ মিলিয়ন ইউরোতে কৌতিনহোকে দলে ভেড়ায় বার্সা। কিন্তু বার্সার ইতিহাসের দামি খেলোয়াড়ের ট্যাগ লাগতেই যেন অবনমন শুরু হলো তাঁর। লিভারপুরের দুর্দান্ত কৌতিনহো বার্সা জার্সিতে হয়ে উঠলেন গড়পড়তা এক ফুটবলার।

একটা সময় পরে বার্সা তাঁকে বায়ার্ন মিউনিখে লোনে পাঠাতে বাধ্য হলো। যদিও সেবার বায়ার্নে গিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু বার্সার হয়ে তেমন নিজেকে রাঙাতে পারেননি এ মিডফিল্ডার। বায়ার্ন থেকে এরপরের মৌসুমে যদিও বা ফিরেছিলেন বার্সায়। কিন্তু বার্সাতে তাঁর স্থায়িত্বতা আর বাড়েনি।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল অ্যাস্টন ভিলায় প্রথমে লোনে যোগ দেন। এরপর সেখানেই স্থায়ী ভাবে দলভূক্ত হন। কিন্তু অমিত প্রতিভাধর কোটিনহোর জাদু আর ফিরে আসেনি। দারুণ সম্ভাবনার রঙ ছড়িয়েও তা বিশ্ব ফুটবলে প্রস্ফুটিত করতে ব্যর্থ হন তিনি।

বার্সার হয়ে ১০৬ ম্যাচে মাত্র ২৫ টি গোল করেন তিনি। অথচ কোটিনহো আর বার্সা, দুই পক্ষের জন্যই স্বপ্নটা ছিল অনেক বড়। দিনশেষে তা স্বপ্নই থেকে গিয়েছে। বলা হয়ে থাকে, কোটিনহোর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত ছিল লিভারপুল ছাড়া। আর বার্সার ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সাইনিং ছিল এটি।

২০১৭ সালে নেইমার রেকর্ড দামে পিএসজিতে নাম লেখালেন। এরপর তাঁর বিকল্প হিসেবে বার্সায় এসেছিলেন দেম্বেলে। কোটিনহোর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৫ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি তে আনা ডেম্বেলেকে নিয়ে আশা ছিল আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু বার্সার প্রত্যাশা মেটাতে রীতিমত ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

বার্সার হয়ে এখন পর্যন্ত ৬ মৌসুমের সিংহভাগ সময়েই ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। ১৮৬ ম্যাচে করেছেন ৪০ গোল। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বার্সার সঙ্গে চুক্তিও রয়েছে তাঁর।

তবে, এই মৌসুমেই পিএসজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফরাসি এ ফুটবলার। ডেম্বেলেকে বিক্রি করলে বার্সা পাবে ২৭ মিলিয়ন ইউরো। অথচ তাঁকে কিনতে বার্সার খরচ হয়েছিল ১৪৫ মিলিয়ন ইউরো। বলাই বাহুল্য, ক্ষতিটা দিনশেষে হলো বার্সারই।

২০১৯ সালে রিলিজ ক্লজের ১২০ মিলিয়ন শোধ করে আরেক ফ্রেঞ্চ ফুটবলার আঁতোয়ান গ্রিজম্যানকে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সা। কিন্তু ইতিহাসের তৃতীয় দামি ফুটবলারও বার্সার আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। শুরু থেকেই মানিয়ে নিতে পারেন নি তিনি।

ফলত, দুই মৌসুম পরেই নিজের পুরনো ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে লোনে ফিরে যান গ্রিজম্যান। এরপর তাঁকে চূড়ান্ত ভাবে কিনে নেয় অ্যাটলেটিকো। এখনও এই ক্লাবের হয়েই খেলছেন তিনি।

তবে বার্সার ইতিহাসের তৃতীয় দামি খেলোয়াড় বার্সার ইতিহাসে থেকে যান ব্যর্থদের কাতারেই। একটি কোপা দেল রে আর ৩৫ টা গোল ছাড়া বলার মতো কিছুই যোগ করতে পারেননি এ ফুটবলার। অবশ্য তাতে ব্যর্থ গ্রিজম্যানের চেয়েও ক্ষতিটা হয়েছে বার্সারই।

অ্যাটলেটিকো থেকে ১২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সায় নিয়ে গ্রিজম্যানকে ঐ অ্যাটলেটিকোর কাছেই দুই মৌসুম পরে বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউরোতে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link