কাকতাল, সৌভাগ্য, দুর্ভাগ্য। সব মিলেমিশে একাকার ছিল এই ঘটনায়।
নাম তাঁর অ্যান্থনি চার্লন শ্যাকলটন পিগট। ইংলিশ ক্রিকেটে পরিচিত টনি পিগট নামেই। ডানহাতি পেসার ছিলেন, ছন্দে থাকলে বেশ গতিময়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার প্রথম তিন উইকেট ছিল হ্যাটট্রিক!
তবে পিঠের চোটের কারণে ভুগছিলেন খুব। কাউন্টিতে খেলে যাচ্ছিলেন, জাতীয় দলের আশেপাশে যেতে পারছিলেন না। সুযোগটি এলো অবিশ্বাস্যভাবে, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকার আদর্শ উদাহরণ সেটি।
১৯৮৪ সালে নিউ জিল্যান্ড সফরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্টের ঠিক আগে ইংলিশরা বড় বিপাকে পড়ে গেল। দুই পেসার নিল ফস্টার ও গ্রাহাম ডিলি একসঙ্গে চোটে পড়লেন। স্কোয়াডে আরও তিন পেসার ছিল, ইয়ান বোথাম, বব উইলিস ও নর্ম্যান কাওয়ানস। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের উইকেট ছিল পেস সহায়ক। চার পেসার খেলানো দরকার। ইংল্যান্ড থেকে কাউকে উড়িয়ে আনার সময়ও তখন আর নেই।
তখনই টিম ম্যানেজমেন্ট খবর পেল, ওয়েলিংটনে ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন পিগট। ব্যস, তাকে জরুরি বার্তা পাঠানো হলো। এমন সুযোগ কে হাতছাড়া করে! কিন্তু ঝামেলা অন্য জায়গায়, পিগটের তখন বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের চতুর্থ দিনই তাঁর বিয়ের দিন!
সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্য খুব সময় লাগেনি পিগটের। ভালো করেই জানতেন, টেস্ট খেলার সুযোগ আর জীবনেও আসতে না পারে। প্রিয়তমাকে বুঝিয়ে রাজী করালেন। বিয়ে পেছানো হলো। পিগট গেলেন ক্রাইস্টচার্চে, টেস্ট ক্যাপও পেলেন।
কিন্তু ট্র্যাজেডি হলো অন্য জায়গায়। পিগট এমনিতে খারাপ করেননি বোলিংয়ে। টেস্টে নিজের সপ্তম বলেই পেয়ে যান উইকেটের স্বাদ। পরে উইকেট নেন আরও একটি। কিন্তু রিচার্ড হ্যাডলির অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে স্রেফ উড়ে যায় ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে ৮১ বলে ৯৯ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে দুই ইনিংসে নেন ৮ উইকেট। ইংল্যান্ড দুই ইনিংসে ৮২ ও ৯৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে ম্যাচ হেরে বসে ইনিংস ব্যবধানে। পিগট আর দ্বিতীয় ইনিংস বোলিংয়ের সুযোগ পাননি।
মূল ট্র্যাজেডি অবশ্য এটিও নয়। ঘটনা হলো, ইংল্যান্ডের বাজে ব্যাটিংয়ে টেস্ট শেষ হয়ে গেল ৩ দিনেই। তার মানে, চতুর্থ দিনে ঠিক হয়ে থাকা পিগটের বিয়ে পিছিয়ে না দিলেও চলতো!
পিগটের অবশ্য খুব আক্ষেপ থাকার কথা নয়। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে পরে অনেক সময়ল হয়েছেন। ২৬০ ম্যাচে নিয়েছেন ৬৭২ উইকেট। কিন্তু টেস্ট খেলার সুযোগ আর পাননি। বিয়ে পেছাতে না চাইলে তো জীবনে টেস্ট খেলাই হতো না!
– ফেসবুক থেকে