ম্যাচের মাঝপথে বিমানভ্রমন!

ব্যাস দু'জনে মিলে খেলার মাঝপথেই স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গেলেন এয়ারপোর্ট। 'জয় রাইড' কোম্পানির দু'টি বাইপ্লেন ৭৫ ডলারে নিয়ে নিলেন। জয় রাইডের তখন পর্যন্ত কোনো দূর্ঘটনা কিংবা কোনো ঝামেলার রেকর্ড ছিলো না। তাই সবচেয়ে সেইফ রাইড হিসেবেই পরিচিতি ছিলো কোম্পানিটি।

২১ জানুয়ারি, ১৯৯১। অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টের আগে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের তৃতীয় দিনে তখন ব্যাটিংয়ে ইংলিশরা। পুরো সফরেই বেশ হতাশাজনক পারফরম্যান্সে বিধ্বস্থ ইংলিশরা। প্রথম তিন টেস্টে ২-০ তে এগিয়ে ছিলো অজিরা। ডেভিড গাওয়ার ছাড়া ইংলিশদের মধ্যে আহামরি পারফরম করতে পারেননি কেউই। চতুর্থ টেস্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যাটাররা রান পাচ্ছিলো, এটা ছিলো ইংলিশদের জন্য স্বস্তির খবর।

প্রথম ইনিংসে কুইন্সল্যান্ডের ২৮৬ রানের জবাবে তৃতীয় দিনে জন মরিসের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে লিড পায় ইংলিশরা। ডেভিড গাওয়ার ১৩ আর মরিস ১৩২ রানে আউট হয়ে তখন ড্রেসিং রুমে। রবিন স্মিথ ও অ্যালান লাম্ব তখন উইকেটে। দু’জনে মিলে তখন বেশ শক্ত জুটিই গড়েছে।

ড্রেসিং রুমে বসে গাওয়ার দেখছিলেন স্টেডিয়ামের উপর দিয়ে এয়ারক্রাফট উড়ে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামের খুব কাছেই ছিলো এয়ারপোর্ট। হটাৎ গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বাইপ্লেনে চড়বেন। তিনি ভাবলেন গ্রাহাম গুচকে এ ব্যাপারে জানালে কখনোই সাপোর্ট করবেন না। গুচ তখন ইংলিশ দলের অধিনায়ক। গাওয়ারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জন মরিস। মরিস পুরো ট্যুরে তখনো কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। প্রস্তুতি ম্যাচে ১৩২ রান করে তখন স্বপ্ন দেখছিলেন পরের টেস্টে সুযোগ পাওয়ার।

গাওয়ারের কথা শুনে মরিস অনুরোধ করলেন তাঁকেও সাথে নিতে। ব্যাস দু’জনে মিলে খেলার মাঝপথেই স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গেলেন এয়ারপোর্ট। ‘জয় রাইড’ কোম্পানির দু’টি বাই প্লেন ৭৫ ডলারে নিয়ে নিলেন। জয় রাইডের তখন পর্যন্ত কোনো দূর্ঘটনা কিংবা কোনো ঝামেলার রেকর্ড ছিলো না। তাই সবচেয়ে সেইফ রাইড হিসেবেই পরিচিতি ছিলো কোম্পানিটি।

বিমানটির যাওয়ার কথা ছিলো ২ হাজার ফিট উপর দিয়ে। কিন্তু গাওয়ার পাইলটকে বললেন যত নিচে নেওয়া যায়! স্টেডিয়ামের উপর আসতেই বিমান তখন পিচ থেকে মাত্র ২০০ ফিট উপরে! বিমানের ছায়া পিচে পড়ায় খেলা ছেড়ে লাম্ব তখন ক্রিজ থেকেই দেখছেন দুই সতীর্থ বিমানে মজা করছেন। লাম্ব যেনো গাওয়ারকে চিনেই ফেলেছেন। লাম্বও বিমানের দিকে ব্যাট তাক করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ার মতো শ্যুট করে দেখালেন।

এই অবস্থার পর ইংলিশ ড্রেসিং রুম তখন গরম। বিমান ভ্রমণ শেষে ড্রেসিং রুমে ফিরলেও রক্ষে হয়নি গাওয়ার-মরিসের। অধিনায়ক গুচ অবশ্য গাওয়ারকে সন্দেহের বশে জিজ্ঞেস করেই বসলেন, ‘বিমানে তুমি ছিলে নাতো?’

উত্তরে গাওয়ার বললেন, ‘আমি! অবশ্যই না।’

এক পাইলট ততক্ষণে প্রেসের কাছে জানিয়ে দেয় গাওয়ার উপর থেকে পিচে ‘ওয়াটার বম্ব’ ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। ইংলিশ টিম ম্যানেজার তখন পিটার লুশ বেজায় চটলেন। ব্যাপারটাও জানাজানি হলো যে গাওয়ার ও মরিস ম্যাচের মাঝপথেই এমনকান্ড করেছেন। দু’জনকেই ডিসিপ্লিন কমিটির সামনে শুনানিতে ডাকা হলো।

এরপর ওইদিনের ম্যাচ শেষে গাওয়ার গেলেন এক ডিনারে। মরিস তখন হোটেলেই ছিলেন। গাওয়ারের এমন কান্ডে লুশ সহ গুচও বেশ চটেছেন। তবে গাওয়ারের যেনো গা ছাড়া ভাব। তিনি এসবের তোয়াক্কা না করেন ডিনার পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। হটাৎ হোটেল রুম থেকে গাওয়ারকে ফোন দিলেন মরিস! জানালেন সে এবং লুশ দু’জনেই বিপদে আছেন। লুশ তাকে শেষবারের মতোন দেখতে চেয়েছেন! গাওয়ার ডিনার সেরে হোটেলে ফিরলেন। এরপর দেখলেন সেখানে তাঁর ও মরিসের শাস্তির চিঠি!

গুচ অবশ্য চেয়েছিলেন দু’জনকেই পুরো সিরিজে বাদ দিয়ে বাড়ি পাঠাতে। তবে ইংল্যান্ডের সেসময়ের বাজে অবস্থার কারণে গাওয়ারকে ফেরত পাঠানোর সাহস দেখায়নি ম্যানেজমেন্ট। তবে দু’জনকেই ১ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়! যেখানে পুরো চার মাসের সফরে মরিস পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ডলার! সেখানে ১ হাজার ডলার জরিমানা তাঁর জন্য অনেকটা বড় ক্ষতি ছিলো।

অবশ্য কুইন্সল্যান্ডের সেই প্রস্তুতি ম্যাচে ১০ উইকেটে জেতে ইংলিশরা। পরের চতুর্থ টেস্টে ড্র ও শেষ টেস্টে পরাজয়ে সেবার অ্যাশেজে ৩-০ তে হারে ইংল্যান্ড। শেষ দুই টেস্টেই হতাশাজনক পারফরম করেন গাওয়ার। ওই সিরিজের পর আর মাত্র তিন টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অপরদিকে, মরিস সাদা পোশাকে আর ইংল্যান্ডের হয়ে খেলারই সুযোগ পাননি!

টিম ম্যানেজমেন্ট সহ ইংল্যান্ড বোর্ড ওই ঘটনায় বেশ চটেছিলেন। সিনিয়র ক্রিকেটারের এমন কান্ডে জুনিয়ররা ভুল শিক্ষা নিবে এমনটাই বলছিলেন অনেকে। তবে তাদের করা জরিমানা সবার জন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে বলেন গ্রাহাম গুচ। অবশ্য জরিমানা নিয়ে গাওয়ার মাথা ঘামাননি। বরং তিনি পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বিমান যাত্রাটা দারুন ছিল’!

শেষ মজাটা ঘটলো আরও কিছুদিন পর। ওই সিরিজের শেষ টেস্টে পার্থে ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামের উপর দিয়ে একটি বিমান ব্যানার বহন করে যাচ্ছিলো। যেখানে লেখা ছিলো, ‘Gower & Morris are innocent – ok.’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...