অর্থ সংকটে দেউলিয়া!

বর্তমানে ক্রিকেট এমন একটি পেশা যেখানে সহজেই মোটা অংক আয় করছেন ক্রিকেটাররা। ম্যাচ ফি কিংবা বেতন সবকিছুই বেশ ভালো অংকের। এছাড়া ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলেও অতিরিক্ত মোটা অংক আয় করতে পারছেন অনেক ক্রিকেটারই।

তবে, একটা সময় ক্রিকেটারদের এখনকার মতো খুব বেশি আয় উপার্জন ছিল না। তার উপর অনেকেরই ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেমে গেছে অল্পতেই। কেউ বা আবার ক্যারিয়ার শেষে ব্যবসায়ে নেমে পড়েছে লোকশানের মুখে। অনেকেই শেষ পর্যন্ত হয়েছেন দেউলিয়াও। ফলে, কিংবদন্তি অনেক ক্রিকেটারেরই ক্রিকেট ছাড়ার পর জীবনটা সুখকর হয়নি।

  • ম্যাথু সিনক্লেয়ার – নিউজিল্যান্ড

টেস্ট অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন সাবেক নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান ম্যাথু সিনক্লেয়ার। সেখান থেকে অধারাবাহিকতা আর বাজে ফর্মের কারণে ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর আয় রোজাগারহীন অবস্থায় ছিলেন বেশ কিছু সময়। আর্থিক দুরবস্থা প্রভাব ফেলে তাঁর সাংসারিক জীবনেও।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ না করায় কর্মসংস্থান খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। এরপর নেপিয়ারে এক রিয়েল স্টেট ফার্মে বিক্রয়কর্মী হিসেবে যোগ দেন তিনি। সেই আয় থেকেই কোনোমতে পরিবার চালিয়েছেন সিনক্লেয়ার। এরপর সেখান থেকে এক রেস্টুরেন্টেও জব করতে দেখা যায় সিনক্লেয়ারকে।

  • অ্যাডাম হোলিওক – ইংল্যান্ড

সাবেক ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যাডাম হোলিওক বেশ কিছু সময় খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। এমনকি ইংল্যান্ডের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে ৪ টেস্ট এবং ৩৫ ওয়ানডে খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। ২০০২ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর বড় ভাই।

এরপর ২০০৭ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পারিবারিক বিজনেসে মনোনিবেশ করেন অ্যাডাম। ২০০৮ সালে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিলে আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। এর তিন বছর পরই ২০১১ সালে তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হন। এরপর তিনি একজন মার্শাল আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি এমএমএ শিক্ষক হিসেবে কাজ করে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন।

  • ক্রিস কেয়ার্নস – নিউজিল্যান্ড

এই তালিকার সবচেয়ে বড় নামটি হলো সাবেক কিউই অলরাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নস। তিনি এই তালিকায় আছেন সেটা জেনেও অনেকেই অবাক হবেন! নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা তিনজন ক্রিকেটারের একজন ভাবা হতো তাঁকে। ২০১০ সালে তিনি ডায়মন্ড ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিলেন। তার কয়েক বছর বাদেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সাবেক চেয়ারম্যান ললিত মোদির বিপক্ষে এক কেইস জয়ে বেশ কিছু অর্থও আয় করেন তিনি।

এরপর ২০১৩ সালে ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আইনগত কাজেই তাঁর সম্পদের অনেকাংশই ব্যয় হয়। বেশ কিছুদিন তিনি ট্রান্স-তাসমানে বাস ডিপো পরিষ্কার করছিলেন! এছাড়া ট্রাক ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেন তিনি। ক্যারিয়ারে উপার্জিত সব কিছুই হারিয়ে নিঃস্ব-প্রায় ছিলেন কেয়ার্নস। সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সাবেক এই ক্রিকেটারকে অস্ট্রেলিয়ার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তবে, বর্তমানে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে তাঁর।

  • গ্রায়েম পোলক – দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সাদা পোশাকে মোট ২৩টি টেস্ট খেলেছেন গ্রায়েম পোলক। তবে তাঁর আর্থিক দুরবস্থা শুরু হয় যখন তাঁর ব্রোকারেজ ফার্ম ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার লোকসানের মুখে পড়ে! তিনি ক্যান্সার সহ পেশির নার্ভতন্ত্রে সমস্যার কারণে হার্ট অ্যাটাকও করেন!

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের থেকে সাহায্য না পেয়ে ২০১৪ সালে ৭২ বছর বয়সে পোলক তাঁর এজেন্টের মাধ্যমে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) ও আইপিএল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যাতে করে তাঁকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারে।

  • পল স্ট্র‍্যাঙ – জিম্বাবুয়ে

নব্বইয়ের দশকে বিশ্বের সেরা তিন লেগ স্পিনারের একজন ছিলেন সাবেক জিম্বাবুয়ে তারকা পল স্ট্র‍্যাঙ। এরপর ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার পর আইন অমান্য করায় কারাগারেও ছিলেন স্ট্র‍্যাঙ! স্ট্র‍্যাঙ ২০১০ সালে বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটের প্রতি জড়ানোর আগ থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল হিমালয় পাহাড়ে সন্ন্যাসীর মতো থাকা।

তবে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যায় যখন আমাদের জমি আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। আমার রাগই আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করতে বাধ্য করে। পারিবারিক ব্যবসায় মনোনিবেশ করলে সেখানেও লোকসানের সম্মুখীন হন স্ট্র‍্যাঙ। জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা এই লেগস্পিনার কিনা ক্যারিয়ার শেষে ছিলেন অভাবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link