রাবণের সেনাপতি

রণকৌশলে হয়ত কোন খুঁত ছিল না নবাব সিরাজউদ্দৌলার। তবে খুঁতটা ছিল তাঁর সেনাপতি মীর জাফরের মনে। আর সেটার মাশুল দিতে হয়েছে বাংলাকে, গোটা ভারতবর্ষকে। একজন সেনাপতি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তো এই ইতিহাস মনে করিয়ে দেয় বারংবার। ক্রিকেট ময়দানেও অধিনায়ক রণক্ষেত্রের এক প্রতীকি সেনাপতি। অন্তত দাসুন শানাকার ক্ষেত্রে সে কথা বলাই যায়।

প্রথম রাউন্ডেই বাদ হয়ে যাবে শ্রীলঙ্কা দল। অধিকাংশ ক্রিকেট সমর্থকদেরই হয়ত অভিমতটা ঠিক এমনই ছিল। দেশের পরিস্থিতি পক্ষে নেই, পক্ষে নেই সাম্প্রতিক সাফল্য়ের গল্প। আন্ডারডগ একটা দল নিয়েই আরব আমিরাতের পথে রওনা হয়েছিলেন দলের সেনাপতি দাসুন শানাকা। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক কপিল দেব যেমন বিশ্বাস করেছিলেন তিনি জিতবেন বিশ্বকাপ। ঠিক তেমনই হয়ত শানাকা বিশ্বাস করেছেন তিনি এবারের এশিয়া কাপ জিতবেন।

দুইটি টুর্নামেন্টের প্রেক্ষাপট, মাহাত্ম হয়ত ভিন্ন। তবে বিশ্বাসের জায়গাটা এ- শিরোপা জয়। মানসিকভাবে নেতিবাচকতা আষ্টেপৃষ্টে ধরেছিল গোটা শ্রীলঙ্কা দলকে। কেননা টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচটা যে তাঁদের হারতে হয়েছিল বড্ড বাজে ভাবে। আফগানিস্তানের কাছে রীতিমত পাত্তা পায়নি লঙ্কানরা। দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস তলানীতে গিয়ে ঠেকা স্বাভাবিক। তবে দাসুন শানাকার মত বলিষ্ঠ অধিনায়কদের ভাল করেই জানা দলকে কি করে চাঙ্গা করতে হয়।

এই গোপন মন্ত্রটা হয়ত তাঁরা কখনোই খোলামেলা করে সবাইকে জানিয়ে বেড়ান না। তবে তাঁরা কাজটা ঠিক মতই করে যান আড়ালে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত একটা দলকে কোন এক অমৃত সুধা নিশ্চয়ই পান করিয়েছিলেন শানাকা। তা না হলে এমন ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া তো সম্ভব নয়। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এবং প্রথম ম্যাচের পর যে পরিমাণ নেতিবাচকতার মাঝে দিন পার করছিল দল সেখান থেকে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছাড়া তো আর ঘুরে দাঁড়ানো যায় না।

প্রথম ম্যাচে বোলিং ব্যাটিং দুই ইউনিটেই শ্রীলঙ্কাকে লেগেছে বড্ড বেশি দূর্বল। তবে সে দূর্বলতার ছাপ তো খুঁজেও পাওয়া যায়নি পরবর্তী চার ম্যাচে। ভিন্ন এক শ্রীলঙ্কার যেন আবিভার্ব ঘটে। বাংলাদেশকে তো রীতিমত রেকর্ড পরিমাণ রান তাড়া করে হারায় লংকানরা। এরপর এক এক করে আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের মত দলকে অনায়াসে হারিয়ে দেয় দাসুন শানাকা বাহিনী। আফগান আর ভারতের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা হয়েছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টা অবশ্য খানিক সহজই ছিল।

এই যে পরিবর্তন সেটা তো আর এমনি এমনি হয়নি। এর পেছনে লেগেছে সঠিক পরিকল্পনা আর সেটার বাস্তবায়ন। সবুজ মাঠে নিজের তীক্ষ্মতা ব্যবহার করে শানাকা দলকে নিয়ে ফেভারিট হয়েই হাজির হয়েছে এশিয়া কাপের ফাইনালে। তিনি সকল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন যেমন করেছেন মাঠে তেমনি মাঠের বাইরেও খেলোয়াড়দের আগলে রেখেছেন। সেটারই প্রতিদান মাঠে দিয়েছেন লংকান ক্রিকেটাররা।

শুধু যে দলকে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল অবধি নিয়ে গিয়েছেন দাসুন শানাকা বিষয়টা তাও নয়। একজন খেলোয়াড় হিসেবে নিজের অবদানটুকুও যথাযথ রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এবারের এশিয়া কাপে পারফর্ম করা অধিনায়কদের মধ্যে সবার উপরেই থাকবেন শানাকা। ব্যাট হাতে ১০৯ রান করার পাশাপাশি দুইটি উইকেটও তুলে নিয়েছেন তিনি।

রানের সংখ্যাটা খুব বেশি না হলেও, ইনিংস গুলো ছিল কার্যকরী। বেশ কিছু ক্যামিও ইনিংস তিনি খেলেছিলেন। যা দলের রান তাড়াতে বেশ সহয়তা করেছে। দাসুন শানাকার মত অধিনায়করা বিশ্বাস হারান না বলেই তো বিশ্ব ইতিহাসে বারে বারে লেখা হয় ঘুরে দাঁড়ানোর দুঃসাহসিক সব গল্প। এবার শিরোপাটা নিয়েই হয়ত বাড়ি ফিরতে চাইবেন সেনাপতি দাসুন শানাকা ও তাঁর দল। তবে সেটা পারবেন কি না তা অবশ্য সময় বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link