একটা সময় ছিলো যখন একজন কোচ একটি দলের দায়িত্বে থাকতেন। আধুনিক সময়ে এ ধারণা অনেকটা সেকেলে। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের আধিপত্যের কারণেই এমনটি হয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য কোনও দলের দায়িত্ব নেয়াই যায়। কোচিংয়ের ধরণেও এসেছে পরিবর্তন। ক্রিকেটারদের শারীরিক দক্ষতা বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে বিভিন্ন দলের ম্যানেজমেন্ট। তাই তো জাতীয় দল ছেড়ে টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন কোচরা। পালন করছেন একাধিক দায়িত্ব।
শ্রীলঙ্কার সাবেক ফাস্ট মিডিয়াম বোলার মারিও ভিল্লাভারায়ন এমনই একজন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি। উপেক্ষা করতে পারেননি আইপিএলের ডাক। যোগ দেন ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বাধীন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে।
তিনি বলেন,‘একটি দলের সাথে স্বল্প সময় কাজ করতে হয় এ ধরণের লিগে। ক্রিকেটাররা যাতে ইনজুরিতে না পড়েন সেদিকে নজর দিতে হয়। সানরাইজার্সে ওয়ার্নার, কেন উইলিয়ামসন, জ্যাসন হোল্ডার, রশিদ খান, জনি বেয়ারস্টো, মনিশ পান্ডের মতো ক্রিকেটার ছিলো। তাদের সাথে কাজ করলে অনেককিছু শেখা যায়।’
‘ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগগুলোয় ক্রিকেটাররা নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিতে চান। তাই কোচদের কাজ সহজ হয়ে যায়। বোলারদের ক্ষেত্রে চাপ বেশি পড়ে। সবার আগে তাদের ফিটনেসের দিকে গুরুত্ব দিতে হয়।’, যোগ করেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের হয়ে দেশে – বিদেশে অসংখ্য ম্যাচ খেলেছেন ভিল্লাভারায়েন। ১৯৯৮ সালে শ্রীলঙ্কার মূল দলের সাথে ইংল্যান্ড সফর করেছেন। কিন্তু কখনও জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা হয়নি তার। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় এক দশক কাটিয়ে দেয়ার পর ১৯৯৪ সালে শ্রীলঙ্কার ‘এ ’দলে সুযোগ হয় তাঁর।
জাতীয় দলে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক তিনি পাচ্ছিলেন না। সময় তো থেমে থাকে না। তিনিও তাই ২০০৪-০৫ মৌসুমে বল-ব্যাট তুলে রাখলেন। পাড়ি জমালেন অস্ট্রেলিয়া। সেখানে তিন বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রী নিলেন এক্সারসাইজ সায়েন্সে। মেলবোর্নে দুই বছর খেলার পাশাপাশি কোচিং করান প্রেস্টন সিসিকে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথে যোগ দেন তিনি। চান্দিকা হাতুরুসিংহের কোচিং স্টাফের একজন ছিলেন ভিল্লাভারায়েন। এর আগে ২০০৮ থেকে প্রায় ছয় বছর একই দায়িত্বে ছিলেন শ্রীলঙ্কা দলের।
বর্তমানে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ বা এলপিএলে যোগ দিয়েছেন তিনি। জাফনা স্ট্যালিয়নসের বোলিং কোচের দায়িত্ব কাঁধে পড়েছে বাংলাদেশের সাবেক এ ট্রেনারের। ‘শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচের দায়িত্ব পালন করেছি। এই টি-টোয়েন্টি লিগে নতুন অভিজ্ঞতা হবে,’ বলেন ভিল্লাভারায়ন।
শুধুমাত্র বোলিং কোচ নয়, ভিল্লাভারায়নকে করতে হবে ট্রেনারের কাজও। ‘জাফনা স্ট্যালিয়নসের ফাস্ট বোলিং কোচের পাশাপাশি স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচের দায়িত্বও পালন করছি। কাইল অ্যাবট, ডুয়ানে অলিভার, উসমান শিনওয়ারি, সুরাঙ্গা লাকমাল, বিনুরা ফার্নানডোর মতো বোলারের দেখভাল করতে হবে,’ নতুন দায়িত্বে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তিনি।
তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এ সময়ে নিজের দক্ষতার ক্ষেত্র বাড়ানোর বিকল্প নেই। ফিটনেস ধরে রাখতে না পারলে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে সন্দেহ নেই। তাই তো ভিল্লাভারায়েনের মতো কোচিং স্টাফদের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। যারা জানেন ক্রিকেটাররা কীভাবে ফিটনেস বাড়িয়ে বাইশ গজে জমিয়ে তুলতে পারবে ব্যাট – বলের লড়াই।
_______________
মূল লেখা: Villavarayen: From a little known David to a Goliath among giants