Social Media

Light
Dark

‘শাস্ত্রী’ হবেন জাদেজা?

স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ডব্লিউ জি গ্রেস, বিল পানসফোর্ড, ওয়ালি হ্যামন্ড, ব্রায়ান লারা, রবীন্দ্র জাদেজা। এঁদের মধ্যে মিল কোথায়? ‘প্রত্যেকে ক্রিকেটার হওয়া’ ছাড়াও এঁদের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল আছে।

১৯৯৯। মোহালিতে পাকিস্তান ম্যাচ শেষে সৌরভ গাঙ্গুলি দেখলেন যে সেদিনের অভিষিক্ত খেলোয়াড়টি কাঁচুমাচু মুখ করে টিম বাসে বসে আছে। তিনি তাঁকে বললেন যে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে গিয়ে আরো রান করে, উইকেট নিয়ে, পরিশ্রম করে ফিরে আসতে। তিনি ফিরে আসলেন, ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলির জামানায় আর সেই মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান তথা অফ স্পিনারকে অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার বানিয়ে ছাড়লেন। তাই আজও তাঁর অধিনায়কের প্রতি সম্মানে এবং শ্রদ্ধায় প্রকাশ্যে সৌরভের সঙ্গে একই উচ্চতার চেয়ারে বসতে অস্বীকার করেন বীরেন্দ্র শেবাগ।

১৯৮৯ সালে শচীন টেন্ডুলকারের মতোই আরো এক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারের অভিষেক হয় এবং অদ্ভুত ভাবে তিনিও ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরি করেন ১৯৯৪ সালে, যে বছর শচীনও পান প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তাঁর অভিষেকও হয় বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে যিনি ৬/৭ নম্বরে ব্যাটটাও করতে পারেন। আশ্চর্যজনক ভাবে অধিনায়ক রনতুঙ্গার স্পর্শে পরবর্তীতে তিনিই ওপেনার হিসেবে হয়ে উঠলেন বিশ্বের সমস্ত বোলারের কাছে ত্রাস। নাম সনাথ জয়াসুরিয়া।

এবার ফিরে যাওয়া যাক একদম শুরুর লাইনটাতে। যে ক’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে – তাঁদের প্রত্যেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটে করে ট্রিপল সেঞ্চুরির অধিকারী (গ্রায়েম হিক, মাইক হাসিও আছেন এই দলে)। ভাবুন, তিনটা ট্রিপল সেঞ্চুরি! পাড়ার টেনিস বল ক্রিকেটেও একটা সেঞ্চুরি করতে হলে যথেষ্ট ক্ষমতার দরকার হয়। আর সেখানে প্রথম শ্রেণিতে তিন ট্রিপল সেঞ্চুরি!

তো এরকম একজন ব্যাটসম্যান গত দশ বছর ধরে ভারতের হয়ে খেলে যাচ্ছেন, সব ফরম্যাটে এই সাত বা আট নম্বরে ব্যাট করতে আসেন। টেস্টের কথা ছেড়েই দিলাম। ওয়ানডেতেও এই দশ বছরে একজন কোচ বা অধিনায়ক একবার ও ভাবলেন না তাঁকে একটু উপরের দিকে ব্যাটিং করার সুযোগ দেওয়ার কথা!

বিজয় শঙ্করের মতো খেলোয়াড় ‘থ্রিডি’ তকমা পেয়ে যান আর জাদেজা সাত-আট নম্বরের উপরে ব্যাট করার সুযোগ পান না! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কথা বাদ দিন। খেরোর খাতা বলছে ওয়ানডেতে ১৬৬ বার ভারতের হয়ে খেলতে নামা জাদেজা ১১২ বার ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন, যার মধ্যে ১০০ বার ব্যাট করতে এসেছেন ৭/-এ। তা সত্বেও ১২ টা হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন।

তাঁকে, তিনটে ম্যাচের জন্য উপরে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা যায় না? কমপক্ষে চলতি সিরিজের শেষ ম্যাচের মতো গুরুত্বহীন ম্যাচে? এভাবেই কিন্ত সৌরভ রানাতুঙ্গারা বিশ্ব ক্রিকেটের কাছে সম্পূর্ণ নতুনভাবে শেবাগ-জয়াসুরিয়াকে পরিবেশন করেছিলেন। এটাই একজন প্রকৃত অধিনায়কের কাজ।

ধোনিকে তিনে পাঠানো প্রসঙ্গে সৌরভ বলেছিলেন নিচে খেলিয়ে কখনো খেলোয়াড় তৈরি করা যায় না। আর তাঁরা একজনের ক্ষমতা থাকা সত্বেও দিনের পর দিন নিচে খেলিয়ে যাচ্ছেন। যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্বেও ‘ধোনির কোটার খেলোয়াড়’ হিসেবে পরিচিত থেকে গেলেন জাদেজা।

কার জায়গায় জাদেজা উপরের দিকে ব্যাট করতে আসবেন সেটা বড় কথা নয়, বিষয় হচ্ছে জদেজাকে পাঠাতে হবে উপরে ব্যাট করতে পরীক্ষামূলক ভাবে। যদি সেটা সফল হয়ে যায়, কোহলির হাতে অনেক অপশন খুলে যাবে। একজন ভাল ব্যাটসম্যানের সঙ্গে স্পিনার পেয়ে যাবে। ফলে একটি বাড়তি বোলার খেলানোর সুযোগ থাকবে।

নিদেনপক্ষে হার্দিক পান্ডিয়ার আগে পাঠক জদেজাকে। ফল ভালো হলে আরও ভেবে দেখুক। কে এল রাহুলকে দিয়ে কিপ করানোর মতো এই সিদ্ধান্ত গুলোও অধিনায়ক কোহলিকে নিতে হবে। সীমিত ওভারের ক্রিকেট বরাবরই অলরাউন্ডারদের প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। সৌরভ গাঙ্গুলির দলের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট ছিল যে আট জন বোলার সাত জন ব্যাটসম্যান একজন উইকেটরক্ষক একসঙ্গে খেলত। ধোনিও খানিকটা সেই পথে হেঁটেছে।

কিন্ত, এই দলটার সেই জায়গাটায় ঘাটতি। আর টিম ম্যানেজমেন্ট হাতে সুযোগ থাকা সত্বেও সেই সুযোগকে ব্যাবহার করছে না। অবশ্য এই বিষয় শুধু কোহলিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ধোনি ও ভারতীয় দলের অধিনায়ক থাকাকালীন জাদেজার ব্যাটিং ক্ষমতার প্রতি সুবিচার করেনি। যার ফলস্বরূপ ক্রিকেট দুনিয়া আর একটা খেলোয়াড়ের সম্পূর্ন বিকাশ দেখা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল। যদিও জাদেজার এখন যা বয়স তাতে কিন্তু খুব দেরি হয়ে যায়নি।

রবিশঙ্কর জয়দ্রথ শাস্ত্রী। বর্তমান ভারতীয় দলের কোচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক একজন বাঁহাতি অর্থডক্স স্পিনার হিসেবে যাঁর ব্যাটের হাতটাও যথেস্ট ভালো। শুরুতে ৭/ ৮ নং এ ব্যাট করতেন, ১০ নম্বরে এও ব্যাট করার নজির আছে। তাঁকে কপিল দেব নামের ‘কোনো এক’ অধিনায়ক প্রথম ইনিংস ওপেন করতে পাঠান।

পরবর্তী অধিনায়ক গাভাস্কার তাঁকে নিয়মিত ওপেনারে পরিনত করেন। ব্যাটসম্যান শাস্ত্রীর যাবতীয় সাফল্য ওপেনার হিসেবেই। সেই শাস্ত্রী নিজের অতীত ভুলে যখন জাদেজার সঙ্গে এই ভুলটা দিনের পর দিন ধরে করে চলেন তখন একটাই প্রশ্ন ওঠে আসে, এটা কি ইচ্ছাকৃত?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link