অজ্ঞাত ক্রিকেটারের গৌরবদীপ্ত জীবন

এমন গৌরবদীপ্ত ক্যারিয়ার ডেন্টিস্ট হিসেবে। ক্রিকেট ও টেবিল টেনিসেও আছে সাফল্য। তার পরও, তার নাম শুনলেই শুরু হয় আমাদের হাসাহাসি, অন্য সব পড়ে রয় আড়ালে। দিপক নানালাল চুদাসামা, বেচারার নামের এমনই জাদু!

ছবির ভদ্রলোকের নাম দিপক চুদাসামা। আপনারা অনেকেই তাকে চেনেন নামে, কেউ কেউ চেহারায়ও। আজ তাঁর জন্মদিন, বয়স হলো ৫৮।

ছবি দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, তিনি একজন ডাক্তার। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, তিনি একজন ডেন্টিস্ট।

তার শিক্ষা জীবন ও ক্যারিয়ার বিস্তারিত জানলে চোখ কপালে উঠতে পারে অনেকের। জন্ম কেনিয়ায় হলেও তিনি ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি ডিগ্রি নেন ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ১৯৮৮ সালে। অর্থোডন্টিকসে এমএস করেন লন্ডনের ইস্টম্যান ডেন্টাল ইনস্টিটিউট থেকে, ২০০৩ সালে।

২০০৪ সালে রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব লন্ডন ও রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব এডিনবরা থেকে ডিপ্লোমাস অব মেম্বারশিপ অর্জন করেন।

পরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৮ সালে সাউদার্ন অ্যাসোসিয়েশন অব অর্থোডিন্টকস থেকে পান ‘এক্সিলেন্স ইন অর্থোডন্টিক এডুকেশন’ অ্যাওয়ার্ড। ২০০৮ সালেই হন রথ উইলিয়ামস অ্যাডভান্সড অর্থোডন্টিক এডুকেশন প্রোগ্রামের ফেলো।

২০০৯ সালে ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থেডন্টিক গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম শেষ করেন। সেখানে তিনি অর্থোডন্টিকস পড়াতেনও এবং দুই বার মনোনীত হন অ্যাকাডেমিক প্রফেসর অব দ্য ইয়ার।

ওই বছরই তিনি জ্যাকসনভিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক্সিকিউটিভ এমবিএ শেষ করেন। এসবের ফাঁকে আর্চ ওয়্যার ডেন্টিস্ট্রি নিয়ে গবেষণাও বেশ পরিচিত পান ও জ্যাকসনভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর অব রিসার্চ হিসেবে নিউ ক্লিয়ার ওয়্যারের ট্রায়াল পরিচালনা করেন।

২০১১ সালে তিনি যোগ দেন টেক্সাসের লুইসভিলে অ্যাপল অর্থোডন্টিকসে। যুক্তরাষ্ট্রে ডেন্টিস্ট হিসেবে পসার, খ্যাতি, পরিচিত। সবাই পেয়েছেন বেশ।

ওপরের লেখায় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, তার বিডিএস ও এমএসের মধ্যে ছিল লম্বা বিরতি। ওই সময়টায় তিনি নাইরোবিতে বছর দশেক জেনারেল ডেন্টিস্ট্রি প্র্যাকটিস করেছেন। আর?

আর খেলেছেন। কেনিয়ার হয়ে টেবিল টেনিস খেলেছেন। ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

পাশাপাশি খেলেছেন ক্রিকেট। যে পরিচয়ে আমাদের এই অঞ্চলে আমরা তাকে চিনি। ২০ টি ওয়ানডে খেলেছেন কেনিয়ার হয়ে, খেলেছেন ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে নাইরোবিতে ১২২ রানের ইনিংসের পথে কেনেডি ওটিয়েনোর সঙ্গে গড়েছিলেন ২২৫ রানের জুটি, যা তখন ছিল উদ্বোধনী জুটির বিশ্বরেকর্ড।

বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের ম্যাচে, ১৯৯৮ সালে হায়দ্রাবাদে রান আউট হয়েছিলেন ৩৬ রানে।

১৯৯০ ও ১৯৯৪ আইসিসি ট্রফিতেও তিনি খেলেছিলেন কেনিয়ার হয়ে। প্রথম আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ রানে আউট হয়েছিলেন প্রিন্স ভাইয়ের বলে, পরেরবার ৭৫ রানে এনামুল হক মনি ভাইয়ের বলে।

১৯৯৪ আসরের ম্যাচটি রেডিওতে শুনেছিলাম। কিছুটা এখনও মনে পড়ে। মরিস ওদুম্বে ১১৯ ও চুদাসামার ৭৫ রানে কেনিয়া করেছিলে ২৯৫। রান তাড়ায় বাংলাদেশ সেদিন ওপেনিংয়ে নামায় বুলবুল ভাইকে। জাহাঙ্গীর আলম ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল উদ্বোধনী জুটিতে ১৩৯ রান তোলেন। দারুণ এক জয়ের আশায় তখন আমরা সবাই।

কিন্তু বুলবুল ৭৪ রানে আউট হওয়ার পরপরই জাহাঙ্গীর ৫৭ রানে রান আউট হয়ে যান। পরে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ৬৮ রান করলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত করতে পারে ২৮২। বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা এক রকম শেষ হয়ে যায় ওই হারে।

যাই হোক, ছবির ভদ্রলোকের প্রসঙ্গে ফিরি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর দল থেকে বাদ পড়েন। কেনিয়ার হয়ে আর কখনও খেলা হয়নি তার। উপরে উল্লিখিত ক্যারিয়ার গ্রাফ থেকেই পরিষ্কার, পরে তিনি মন দেন ডেন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধ করে তোলায়।

এমন গৌরবদীপ্ত ক্যারিয়ার ডেন্টিস্ট হিসেবে। ক্রিকেট ও টেবিল টেনিসেও আছে সাফল্য। তার পরও, তার নাম শুনলেই শুরু হয় আমাদের হাসাহাসি, অন্য সব পড়ে রয় আড়ালে।

দিপক নানালাল চুদাসামা, বেচারার নামের এমনই জাদু!

– ফেসবুক থেকে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...