বল পায়ে ছুটছেন দেজিরে দুয়ে, যেন পায়ের নিচে স্থির থাকে না মাটি, হঠাৎ শরীরের মোচড়, হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া, যেন কোনো রঙিন ফাঁদে ফেলে দিচ্ছেন ইন্টার মিলানের কাঁপা রক্ষণের প্রতিটা স্তম্ভকে।
দূর থেকে দেখলে ভুল হতেই পারে, নেইমার মনে হবে। সেই একই স্পিড, ড্রিবলিংয়ের জাদু, সেই একই বেখেয়ালি ফ্লেয়ার, সেই একই মাদকতা। দুয়ের বয়স মাত্র উনিশ, অথচ পায়ে বল পেলেই মনে হয় যেন এক দশকের ঝড় নিয়ে নেমে পড়েছে মাঠে।
এমবাপ্পে যখন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পাড়ি জমালেন, প্যারিসের আকাশে হাহাকার শোনা যাচ্ছিলো, কে ভরাবে এই শূন্যতা?
পিএসজি উত্তর পেল নিস থেকে আসা এক কিশোরে, যার শারীরিক গড়ন স্লিম, কিন্তু আত্মবিশ্বাস যেন পাহাড়সম। ডেম্বেলে-দুয়ে-কাভা, ইউরোপের ডেডলিয়েস্ট ত্রয়ী, গড়ে তুললেন এমন এক আক্রমণভাগ, যা যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য বিষময় স্বপ্ন।
কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে দুয়ে যেন ঘোষণা দিয়ে এলেন, আলোচনার টেবিলে এবার শুধু তিনি। দুই গোল, এক অ্যাসিস্ট। একাই গুঁড়িয়ে দিলেন ইন্টার মিলানের রক্ষনভাগ, একাই এনে দিলেন পিএসজির ইতিহাসের প্রথম ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব।
যখন শেষ বাঁশি বাজল, প্যারিসের আকাশ থেকে যেন এক শতাব্দীর পুরনো অভিশাপ ভেঙে পড়ল। পিএসজি পেল সম্মান, পেল আভিজাত্য, পেল মুকুট। আর ইউরোপের ফুটবল পেল এক নতুন প্রশ্ন, নেইমারের ২০১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পারফরম্যান্স কি এর চেয়েও বড় ছিল?
প্যারিসের আকাশে আতশবাজি ফুটছে, এবং দুয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে হাসছে, এই উনিশ বছরের কিশোর কি জানে, আজ সে ইতিহাস লিখে ফেলল? ভবিষ্যতের কোনো দিন পেছন ফিরে তাকালে, সে কি বুঝবে, ঠিক এই রাতেই সে নাম লেখাল ফুটবলের চিরন্তন মহাকাব্যে?