বাংলাদেশের পেশাদের ক্রিকেটারদের জীবিকার মূল উৎস ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিডিসিএল)। তীর্থের কাকের মত করেই যেন ক্রিকেটাররা অপেক্ষায় থাকেন ডিপিএলের। তাছাড়া এখানে পারফরম করবার তাগিদটাও থাকে বেশি। কেননা ডিপিএলই যে হতে পারে জাতীয় দলে ঢোকার রাস্তা।
তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ফেলা ক্রিকেটারদের অবশ্য ডিপিএলের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে হয় না। তারকা ক্রিকেটারদের জন্যেই যেন ডিপিএল থাকে অপেক্ষায়। তাইতো পেশাদারিত্বের জায়গা ভুলে, ডিপিএল যেন এক আনন্দভ্রমণ।
এই যেমন গত আসরের দু’টো ঘটনাই তুলে ধরা যাক। এনামুল হক বিজয়। জাতীয় দলের রাডারে তিনি থাকেন হরহামেশাই। গেল ডিপিএলের মাঝপথে তিনি চলে গিয়েছিলেন নিজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। টসে জিতে বিজয়ের দল আবাহনী ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে, বিজয় ছুটে যান নিজের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে।
এরপর তিনি ফিরে আসেন প্রথম ইনিংসের যখন আর বাকি চার ওভার। এরপর তিনি আবাহনীর হয়ে ওপেনিংও করেন সে ম্যাচে। এরপরের ঘটনার অবতাড়না ঘটান পারফরমেন্স ও বিতর্ক দিয়ে সর্বদা আলোচনায় থাকা সাকিব আল হাসান।
সেবার সাকিব ছিলেন মোহামেডানের ডেরায়। সেই ম্যাচে মোহামেডানের ব্যাটিং ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই সাকিব মাঠ ত্যাগ করেছিলেন। হেলিকপ্টার যোগে তিনি অংশ নিয়েছিলেন কোন এক প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায়। ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিকতাকে কোনরকম তোয়াক্কা না করেই।
এবারের একটি ঘটনা তো সবারই জানা। যার মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন তামিম ইকবাল খান। ম্যাচের প্রথম ইনিংসের প্রায় ২৫ ওভার শেষ তিনি মাঠে এসে উপস্থিত হন। যদিও সে ঘটনায় তার তেমন দায় ছিল না। রাস্তায় দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। তাতেই তামিমের মাঠে পৌঁছাতে বড্ড দেরি হয়ে যায়।
যদিও একেবারেই দায় ছিল না তামিমের, তা বলবারও উপায় নেই। তার দলের বাকিরা সময়মতই মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ের একটু দেরিতেও ম্যাচ মাঠে গড়িয়েছিল, তীব্র যানজটের কারণেই। তবে তামিম অধিনায়ক হিসেবে টসে অংশ তো নিতেই পারেননি, বরং ব্যাট করেছেন তিন নম্বরে।
এই ঘটনাগুলোই আসলে বলে দেয় জাতীয় দলের কিংবা তারকা খেলোয়াড়রা ঠিক কতটা হালকাভাবে নিয়ে থাকেন ডিপিএলকে। তাছাড়া তাদের জন্যে ছাড় দিতেও দেখা যায় ম্যাচ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের। এমন উদাহরণ নিশ্চিতরুপেই এক ভীষণ বাজে অনুশীলন। তাতে করে পেশাদার ক্রিকেটের পেশাদারিত্বটা আর অবশিষ্ট থাকে না।
যদিও বলা যেতে পারে যে প্রতিপক্ষ তো কোন ধরণের আওয়াজ তোলে না। কেননা আইসিসির আইনের ২৪তম ধারায় বলা আছে, যদি প্রতিপক্ষের কোনো আপত্তি না থাকে, তবে বিশেষ কোন কারণে ম্যাচ রেফারির অনুমতি নিয়ে কোন খেলোয়াড় যেকোনো সময়ই মাঠে নেমে খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
প্রতিপক্ষ ক্রিকেটার বা ক্লাব কর্তারা সেই খেলোয়াড়দের ‘স্টারডম’-কে সমীহ করে চলে। ঠিক সেকারণেই আসলে এমন অপেশাদার ঘটনার অবতারণা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে এমনটা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে গ্রাম-গঞ্জ কিংবা শহর-বন্দরের টেপটেনিস টুর্নামেন্টে পরিণত হবে ডিপিএল। অবশ্য টেপ টেনিসেও তো পেশাদারিত্বের দেখা মিলছে আজকাল।