আজহারউদ্দীন, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ও ফিক্সিং

তৎকালীন টিম ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকারের প্রবল আপত্তি অগ্রাহ্য করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আজহারউদ্দীন। আসলেই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি কি ছিল? অযৌক্তিক এই হঠকারিতামূলক সিদ্ধান্ত কি আজহারের মস্তিষ্কপ্রসূত নাকি এর পেছনেও কোনো গড়াপেটার কালো হাত জড়িত? এমন সন্দেহেকে কোনো কালেই একদম অমূলক বলে রায় দেওয়ার উপায় আছে কি?

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপটা ভারত জিতেছিল অনেকটা আন্ডারডগ হিসেবে। ওই বিশ্বকাপে শিরোপার আলোচনায় ছিল না তাঁরা। তবে, ছিল ১৯৮৭ সালে – যেখানে নিজেদের মাটিতে ভারতের লড়াই থামে সেমিফাইনালে।

১৯৯৬ সালেও এই নিজের দেশের মাটির সহায়তায় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। সেবারও লড়াইটা থামে সেমিফাইনালে গিয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। ক্রিকেট ইতিহাসে এই ম্যাচটা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। যদিও, সেই থাকার কারন আদৌ গৌরবজনক না। এতগুলো বছর পরেও ৯৬-এর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতীয় দলের অপ্রত্যাশিত ভরাডুবি চোখ কপালে তুলতে বাধ্য।

আর এই সংক্রান্ত কৌতুহলোদ্দীপক চর্চা এখনও অপ্রাসঙ্গিক নয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই ম্যাচটা একদম আলাদা। কারণ এটাই পঞ্চাশ ওভারের সবচেয়ে বড় আসরের একমাত্র ম্যাচ যেটা দর্শক হাঙ্গামার পরিনতিতে পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছিল। ভারতীয় দর্শকদের সেদিনের আচরণের জন্য কাঠগড়ায় তোলাই যায়।

সেদিন শ্রীলঙ্কার ২৫৪ রান তাড়া করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানেই ছিল। এরপরও মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের ভারতের ওরকম বিস্ময়কর ভেঙে পড়াকে আজও বড় অদ্ভুতুড়ে বলেই মনে হয়। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে পিচ ব্যাটিংয়ের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল – এমন যুক্তি দাঁড় করান কেউ কেউ।

তবে, এই যুক্তি মেনে নিলে ভারতীয় ইনিংসের একদম গোড়ায় স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের সাবলীল যুগলবন্দীর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা কি আদৌ মেলে? এক উইকেট হারিয়ে একশোর কাছাকাছি রান উঠেছিল সেদিন ওই একই উইকেটে। আবার সেই উইকেটকেই ব্যাটসম্যানদের বধ্যভুমি হিসেবে চিহ্নিত করার মতবাদকে হাস্যকর বলে মনে হয়।

টেন্ডুলকার আউট হওয়ার পর ইডেনের বাইশ গজে কি এমন অত্যাশ্চর্য রূপান্তর ঘটে গেল যে এভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসতে লাগলেন গ্রেট সব ভারতীয় ব্যাটাররা? সনাথ জয়সুরিয়া নামের এক অখ্যাত স্পিনারের কাছে শিক্ষানবিশ এর মত আত্মসমর্পণ করতে কেন হল? – এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হয় অধিনায়কসহ অধিকাংশ সিনিয়রদের কাঠগড়ায় তোলা হলে সেটা হয়তো ভুল হবে না।

অবশ্য শচীন এই সিনিয়রদের তালিকায় আসবেন না। অন্তত কেবল, তিনিই যা একটু স্বপ্ন দেখানোর দেখিয়েছিলেন। কিন্তু, সবচেয়ে বেশি কাঠগড়ায় তোলা উচিৎ আজহারউদ্দীনকে। তাঁর দায়িত্বজ্ঞানহীন অবিমৃশ্যকারিতাকে কাঠগড়ায় তুললে সেটা হয়ত পক্ষপাতদুষ্ট বিচার হবে না। আজহার সেদিনও ফিক্সিং করেছিলেন – এমন বক্তব্যও অবলীলায় সেদিনের ব্যাপারে দিয়ে ফেলা লোকের অভাব নেই।

টস জিতলে ব্যাটিং নেওয়াটাই সেদিন বুদ্ধিমানের কাজ ছিল। কিন্তু, আজহারউদ্দীন এক লাইন বেশি বুঝে ফেললেন সেদিন। মধ্য মার্চের শিশিরহীন শুস্ক পরিবেশে ফিল্ডিং নিলেন। এর চেয়ে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত আর হয় না। ব্যাঙালুরুতে সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করেই জিতেছিল ভারত, ব্যাট হাতে পাকিস্তানি ওপেনারদের দারুণ শুরুর পরও। সেই ম্যাচ থেকেও শিক্ষা কেন নেননি আজহার?

শোনা যায় তৎকালীন টিম ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকারের প্রবল আপত্তি অগ্রাহ্য করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আজহারউদ্দীন। আসলেই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি কি ছিল? অযৌক্তিক এই হঠকারিতামূলক সিদ্ধান্ত কি আজহারের মস্তিষ্কপ্রসূত নাকি এর পেছনেও কোনো গড়াপেটার কালো হাত জড়িত? এমন সন্দেহেকে কোনো কালেই একদম অমূলক বলে রায় দেওয়ার উপায় আছে কি?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...