লাতিন ফুটবল সংস্কৃতি ও এমির আস্ফালন

আদ্রিয়ানোকে মনে আছে কারোর? রিওর দাঙ্গা-অপরাধ বিধ্বস্ত বস্তি থেকে উঠে আসা আদ্রিয়ানো। খুব অল্প বয়সে গ্যাঙ ওয়ারে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পড়াশোনা করেননি। সুস্থ জীবনে আসতে ফুটবল খেলতে শুরু করেন। বলা হয়, ব্রাজিল ওই একবারই রোনালদো ডি লিমার বিকল্প খুঁজে পেয়েছিল। রোনালদোর মতোই আদ্রিয়ানো সেরা সময় কাটিয়েছিলেন ইন্টার মিলানে।

কিন্তু, আদ্রিয়ানোর রোনালদো হয়ে ওঠা হয়নি। পুনরায় তাঁকে ব্রাজিল ফিরে যেতে হয়। ফেরত আসা হয়নি আর। পুরনো গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ফের অস্ত্র ওঠে হাতে। ফুটবল সরে যায়।

মেসি-রিকুয়েলমের আগে আর্জেন্টিনার জার্সিতে আরও এক দশ নম্বর এসেছিল। এরিয়েল ওর্তেগা। যে বিশ্বকাপে মারাদোনা ছেড়ে যাচ্ছেন, তার পরের বিশ্বকাপেই সুযোগ পাচ্ছেন ওর্তেগা। নায়ক হয়ে ওঠার। ওর্তেগা হয়ে উঠতে পারেননি। বদলে তলিয়ে যান। মাদক, জীবন-যাপনে শৃঙ্খল না থাকায় তাঁরও আর ফিরে আসা হয়নি। শৃঙ্খলে আসতে গেলে যতটা প্রিভিলেজড হয়ে উঠতে হয়, যতটা ‘ইউরোপীয়’ হয়ে উঠতে হয়, ওর্তেগা ততটা হয়ে উঠতে পারেননি।

এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সাক্ষাৎকার দেখলাম, ‘আমি কাউকে অসম্মান করতে চাইনি। কিন্তু কেউ কী ভাবে লাতিন আমেরিকার বিরুদ্ধে ওই ধরণের কথা বলতে পারে, যেখানে এই প্রদেশ ফুটবল সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে? লাতিন আমেরিকায় ফুটবল খেলা সহজ নয়।’

লাতিন আমেরিকায় ফুটবল খেলা সহজ নয় – ঠিকই। সহজ নয়। অধিকাংশ ছোট ছেলে-মেয়ে ফুটবল খেলে সুস্থ জীবন পেতে। একমাত্র ফুটবল খেললে বস্তি থেকে বেরনো যায়। একমাত্র ফুটবল খেললে খাবার কিনতে পারা যায়। একমাত্র ফুটবল খেললে খুনখারাপির মধ্যে পড়তে হয় না।

স্রেফ ফুটবল খেললে তবেই জীবনের গ্যারান্টি পাওয়া যায়। রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহোর ব্রাজিল দলে একমাত্র কাকা ছিলেন ব্যতিক্রম। বাকি সবার এক গল্প। হয় ফুটবল না হয় অন্য কিছু। সেটা খুনখারাপি-দারিদ্র অথবা অন্য যা কিছু হতে পারে।

আমার ফ্রেন্ডলিস্টের কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা ফুটবলকে খুব সুন্দরভাবে দেখতে চান। অথবা বলা ভাল পলিটিকালি কারেক্ট ফুটবল দেখতে চান। সেখানে পিতৃতন্ত্রের চোখ রাঙানি থাকবে না, কোনও ধরণের কোনও আস্ফালন থাকবে না – মাঠের লড়াই মাঠেই মিটিয়ে হ্যান্ডশেক করে লোকে বাড়ি চলে যাবে।

না বন্ধুরা, সেটা সম্ভব নয়। এ কামড়া-কামড়ির খেলা। রক্তারক্তির খেলা। ফুটবল সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে নয় বরং তার এক রকম প্রতিনিধিই বলা যায়। সংস্কৃতিতে যদি আস্ফালন থাকে, তার প্রভাব ফুটবলে পড়বে। কোন আস্ফালন বেছে নেব, আর কোনটাকে নেব না, প্রশ্ন বরং সেটাই। এমির আস্ফালন আমার মন্দ লাগেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link