নিখাঁদ বিনোদনের বিদায়

এক সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কার্টলি অ্যামব্রোস এর মত কত শত কিংবদন্তি তৈরি হয়েছে এই ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়নও উইন্ডিজরা। পরের আসরেও ধরে রেখেছিল শিরোপা।

১৯৮৩ সালে কপিল দেবের ভারত বাঁধা না হয়ে দাঁড়ালে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে পারতো তারা। কিন্তু এখন এসব শুধুই গল্প। সময়ের আবর্তনে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খর্বশক্তির এক দল। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের র‍্যাংকিংয়েও তারা পেছনের সারির সদস্য।

তবুও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হিসেবের বাইরে রাখা যায় না। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে কোনো কিছু করার সামর্থ্য রাখে তারা। ভঙ্গুর অবস্থাতেও ২০১২ এবং ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় সেটিরই প্রমাণ দেয়। আর এই সময়টাতে বিশ ওভারের খেলাকে কেন্দ্র করে ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জে এক প্রজন্ম গড়ে উঠেছিল, যারা সবাই টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা।

ক্রিস গেইল, স্যামুয়েল বদ্রি, মারলন স্যামুয়েলস, কায়রন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন ব্রাভো – এরা সবাই এক একজন বিনোদন দাতা। এর সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফেরিওয়ালা, বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটীয় বিনোদন ফেরি করে বেড়ানোটাই ছিল তাদের।

কিন্তু যার শুরু আছে তার শেষও আছে। একটা প্রজন্মকে ক্রিকেটে বুঁদ করে রাখা গেইল, ব্রাভোদেরও শেষ রয়েছে। ইতোমধ্যে স্যামুয়েল বদ্রি, লেন্ডল সিমন্স, মারলন স্যামুয়েলস, কায়রন পোলার্ড অবসর নিয়েছেন। ডোয়াইন ব্রাভো অনেক আগেই বিদায় বলেছিলেন, পরে আবার ফিরেছিলেন, এরপর পুনরায় তুলে রেখেছেন মেরুন জার্সিটা। ক্রিস গেইলও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে এখন।

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিনের মত পরিচিত মুখের। ধরে নেয়া যায় হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আর কখনো খেলবেন না এই তারকারা। কাগজে-কলমে তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনালী প্রজন্মের ইতি ঘটেছে; কখনো অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারত কখনো আবার ক্যারিবীয় দ্বীপের বুকে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটের শৈলী প্রদর্শন করা উইন্ডিজ তারকাদের সময় ফুরিয়ে গিয়েছে।

কলকাতার ইডেন গার্ডেনে দর্শকদের অবিস্মরণীয় এক রাত উপহার দেয়া কার্লোস ব্রাথওয়েটের কথা মনে আছে; ভুলে যাওয়ার কথা নয় অবশ্য কেননা তাঁর কীর্তি গড়ার দিনই বলা হয়েছিল রিমেম্বার দ্য নেম। তবে উইন্ডিজ ক্রিকেট হয়তো ভুলে গিয়েছে সেই ব্রাথওয়েটকে। গত আসরের মত এবারের বিশ্বকাপেও এই অলরাউন্ডারের জায়গা হয়নি দলে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়তো নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছে; দলটির তরুণ ক্রিকেটারদের মাঝেও প্রতিভার অভাব নেই। নিকোলাস পুরান, শিমরন হেটমায়ার, কাইল মায়ার্স প্রত্যেকেরই একা হাতে ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য রয়েছে; পূর্বসূরীদের মতই বিশ্বজুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি লিগে দাপট দেখা যায় পুরান, হেটমায়ারদের। নতুন এই ক্রিকেটাররা-ই সম্ভবত আগামীর রাসেল, পোলার্ড হয়ে উঠবেন।

তারপরও ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেলদের জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের কোনে আলাদা একটা জায়গা সবসময়ই থাকবে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাট বলের খেলাটা অনুসরণ করে সব চোখ দেখেছে তাদের তান্ডব, দেখেছে কি অনায়াসে টি-টোয়েন্টি খেলাটাকে আপন করে নিয়েছেন তারা।

ড্যারেন স্যামি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কি তোমাদের যথেষ্ট বিনোদন দিতে পেরেছি? – এই জানার কৌতূহল হয়তো গেইল, স্যামুয়েলসদেরও আছে। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে মানুষকে আনন্দ দিতে খেলে যাওয়া এসব ক্রিকেটারদের জন্য বলতেই হয়, ‘হ্যাঁ, আপনারা পেরেছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link