ওয়ান জিরো ওয়ান

সাত বছরের দীর্ঘ একটা ভ্রমণ। ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা আর দুরন্ত গতিতে ছু্ঁটতে থাকা। ওয়ানডেতে দলের নিয়মিত এক মুখ। লম্বা সময় ধরে রঙিন পোশাকে ওপেনিংয়ে ইংল্যান্ডের ভরসার নাম জেসন রয়। নিজের দিনে তিনি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা স্বচক্ষে না দেখে বোঝার উপায় নেই। মাঝে মানসিক অবসাদে খানিকটা থমকে গেলেন।

শরীর বা মন কোনোটাই হুট করে আর সায় দিচ্ছিলো না। মানসিক প্রশান্তি ছাড়া তো কোনো কাজেই মন বসে না, আর এটা তো ক্রিকেট; দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে মানসিক আর শারীরিক সুস্থতা সবার আগে। খারাপ সময়টা কাঁটিয়ে উঠলেন বেশ দ্রুতই। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আবার ফিরেছেন তিনি, ব্যাট হাতে সেই চিরচেনা আগ্রাসী রূপ। ফেরার মঞ্চেও অব্যাহত রয় ঝড়। সেই ঝড়ে দুমড়ে মুচড়ে গেছে খর্বশক্তির ডাচ শিবির।

প্রায় ছয় মাস পর জাতীয় দলে ফেরা, ওয়ানডেতে সময়টা বছরখানেক হবে। মানসিক অবসাদ আর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কারণে জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন ইংলিশ তারকা ওপেনার জেসন রয়। অবশ্য বোর্ড থেকে পাওয়া দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার কারণটাও তাঁর অজানা! গেল আসরের পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলার পর থেকে তিনি মাঠের বাইরে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এবারের আসরে শিরোপা জয় করা গুজরাট টাইটান্সের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

তবে, মানসিক অবসাদে আইপিএলের মেগা আসরে খেলা হয়নি রয়ের। শিরোপা জয়ের অংশীদার হতে না পারার আক্ষেপটা হয়তো মনে মনে আছে।

জৈব সুরক্ষা বলয়ে লম্বা সময় থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে পড়েন। পিএসএলে ব্যাট হাতে ছিলেন উড়ন্ত ফর্মে। রানের ফোয়ার ছুঁটিয়ে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের জায়গা আঁকড়ে ধরে রাখলেও মাঠের বাইরে বিষন্নতা ঘিরে রেখেছিল রয়কে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সত্ত্বেও খুশি ছিলেন না তিনি। দু’মাস বয়সী ছোট্ট সন্তানকে রেখে ইউরোপ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন পাকিস্তান। লম্বা সময় সন্তান থেকে দূরে। জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে মানসিক ভারসাম্য অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন এই ইংলিশ তারকা।

এরপর মাঠের বাইরে প্রায় বছর খানেকের মত। পরিবারের পাশে থেকেই সময়টা ব্যয় করলেন। ফুরফুরে মেজাজেই আবার ফিরলেন জাতীয় দলের সবুজ গালিচায়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আবার প্রত্যাবর্তন। হাতছানি ছিল একশো ওয়ানডে ম্যাচের। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নেমে সেই মাইলফলকটাও স্পর্শ করেন রয়; দলের পক্ষ থেকে উপহার পান শততম ওয়ানডে ক্যাপ।

সবশেষ এক বছরের মধ্যে চলতি বছর জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছিলেন টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরা। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচটাও ছেয়ে গেছে বিষাদ ব্যাথায়। আপন খালাতো ভাইয়ের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান মাত্র এক রানে। দীর্ঘসময় পর দলে ফিরে খর্বশক্তির ডাচদের বিপক্ষে রেকর্ড রানের ইনিংসে রয়ের ব্যক্তিগত প্রাপ্তির খাতাটা শূন্য।

সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো। পরের দুই ম্যাচে দেখা মিল রয়সুলভ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের। নিজের শততম ওয়ানডেতে ম্যাচে ব্যাট হাতে খেললেন ৬০ বলে ৭৩ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। এদিনও ভাইয়ের হাতে উইকেট দিয়ে ফিরতে হয় এই ইংলিশ তারকাকে। অবশ্য এবার আরিয়ান দত্তের বলে ক্যাচ ধরেন রয়ের খালাতো ভাই শেন স্ন্যাটার। দলের দাপুটে জয়ে ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটাও জিতলেন।

এরপর সিরিজের শেষ ম্যাচে দেখা মিলল রয় তাণ্ডবের। ৮৬ বলে ১০১ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংসে দলকে জয় এনে দিলেন। ক্যারিয়ারের ১০১ তম ওয়ানডেতে খেললেন ১০১ রানের হার না মানা ম্যাচজয়ী মারকাটারি এক ইনিংস। ২৪৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে রয়ের ১৫ বাউন্ডারিতে বিধ্বংসী এক ইনিংসের দেখা। প্রত্যাবর্তনের সিরিজটা নিজের করে রাখলেন এই ওপেনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link