হাল্যান্ডে ধরাশায়ী রেড ডেভিল

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার কয়েকগুণ উত্তাপ যেন বয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ডের শহর ম্যানচেস্টারের উপর দিয়ে। এদিন তো দুই শহর প্রতিদ্বন্দীর লড়াই। কলকাতা ডার্বির মত নিশ্চয়ই কাঁচা বাজার অবধি ছড়িয়ে পড়ে না সে উত্তাপ। তবে ইতিহাদ স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে সুদূর এই বাংলাদেশ অবধি আঁচ তো অনুভূত হওয়ারই কথা।

এই মৌসুমের প্রথম ম্যানচেস্টার ডার্বি। ইউনাইটেডকে আতিথিয়েতয়া দিয়েছিল সিটিজেনরা। নিজেদের মাঠে আতিথিয়েতায় যেন কোন রকমের কমতি রাখেনি ম্যানচেস্টারের নীলি জার্সিধারীরা। তবে সে আতিথিয়েতা বিষাদগ্রস্ত করে দেয়। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। এমন পারফরমেন্স হতাশার সাগরে ডোবায়, পুড়িয়ে মারে লজ্জায়।

এই মৌসুমের শুরুর দিকের ধাক্কাটা সামলে নিয়ে নিজেদেরকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শুরু করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নতুন কোচ এরিক টেন হ্যাগ যেন খুঁজে পেয়েছিলেন নিজের সেরা দল এবং সেরা ট্যাকটিস। পরপর বেশকিছু জয় মুখ থুবড়ে পড়া রেড ডেভিলদের নতুন উদ্দ্যমে উজ্জীবিত করে। তবে সে উদ্দ্যমের দেয়াল ফেটে চৌচির। মাস্টার মাইন্ড পেপ গার্দিওলার কাছে ধরাশায়ী রেড ডেভিল।

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই এক পেশোয়া ম্যাচের আভাস মিলতে থাকে। প্রথম দশ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় সিটিজেনরা। সাদা রঙা গোলের খাতায় প্রথম কালির আঁচড় দেন তরুণ তুর্কি ফিল ফোডেন। বার্নাডো সিলভার বাড়ানো বলে দারুণ এক গোল আদায় করে নেন ফোডেন। ঠিক তখনই হয়ত ইউনাইটেড শিবিরে একটা চাপা হারের শঙ্কা ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। সে শঙ্কাকে যেন সত্যিতে রুপ দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিতে চাইছিলেন আর্লিং হাল্যান্ড।

এই মৌসুমে পেপ গার্দিওলার সান্নির্ধে এসে রীতিমত যেন এক গোল মেশিনে পরিণত হয়েছেন হাল্যান্ড। একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানই হয়ত বলে দেবে তিনি ঠিক কতটা বিধ্বংসী। এবারের মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মোট লিগ গোলের আর হাল্যান্ডের মোট লিগ গোল সংখ্যা সমান। আর নিজের দিনে ঠিক কতটা বিধ্বংসী হাল্যান্ড, সেটার প্রমাণ হারে হারে পেয়ে গেল টেন হ্যাগের শীর্ষ্যরা।

প্রথমার্ধেই ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে রেড ডেভিলরা। বিরতিতে ইউনাইটেড ভক্তদের মাঠ ছাড়ার দৃশ্যটাও দেখা গেছে। এই তাণ্ডবের পুরো কৃতিত্বই হাল্যান্ডের। নিজে দুইখানা গোল করেছেন। প্রথমটা করেন কর্ণার থেকে করা হেডে। সে বল অবশ্য গোল লাইন থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ইউনাইটেডের টায়রেল ম্যালাসিয়া। তবে তাতে কাজ হয়নি। এরপর ডি চোখ ধাঁধানো অ্যাসিস্টে হাল্যান্ডের দারুণ ফিনিশ। ম্যাচটা আক্ষরিক অর্থে সেখানেই হেরে গেছে রেড ডেভিলরা।

তবে তখনও হাল্যান্ড তাণ্ডব বাকি। নিজে দুই গোল করার পর সতীর্থ ফোডেনকে দিয়েও গোল করিয়ে নেন হাল্যান্ড। এদিন যেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষটি ছিলেন ডেভিড ডে গিয়া। তিনি শুধু অপলক দৃষ্টিতে দেখে গেছেন সিটিজেনদের গোল উৎসব। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুই গোল হজম করতে হয় ডে গিয়াকে। নিজের হ্যাট্রিক আদায় করবার পাশাপাশি সতীর্থ ফোডেনের হ্যাট্রিকও নিশ্চিত করেন হাল্যান্ড। এর মধ্যে দিয়ে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে টানা তিন লিগ ম্যাচে তিন হ্যাট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড় বনে যান হাল্যান্ড।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে খানিকটা পালটা আক্রমণ করবার চেষ্টা করে রেড ডেভিলরা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন সদস্য অ্যান্টোরি ডি-বক্সের বাইরে থেকে আদায় করা গোলটা যেন খানিকটা প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায় টেন হ্যাগ শিবিরে। এরপর সিটির মনে কাপন ধরান বদলি খেলোয়াড় অ্যান্টোনিও মার্শিয়াল। শেষের দিকে পেনাল্টিতে এক গোল আদায় করা ছাড়াও আরও এক গোল পরিশোধ করেন মার্শিয়াল। তাতে অবশ্য ব্যবধান কমেছে হার এড়ানো যায়নি।

এই জয় নিশ্চয়ই খানিকটা স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করবে পেপ গার্দিওলার শীর্ষ্যরা। তবে শেষের দিকে তাদের গোল হজম করার বিষয়টা নিশ্চয়ই স্বস্তি দেবে না পেপকে। অন্যদিকে আবারও নতুন করে পরিকল্পনার ছক আঁকতে হবে ডাচ কোচ এরিক টেন হ্যাগকে। তবে দিনশেষে লড়াইটা হয়েছে। তবে সিটিজেনদের আধিপত্য ধূলিসাৎ করেছে রেড ডেভিলদের নিজেদের ফিরে পাবার স্বপ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link