দস্তানা ছেড়ে গোলকবাজি

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, এক সময়ের শিশু-প্রতিভা এবং দেশের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিঠুন। না, এখন আর তিনি কেবল উইকেটরক্ষক নন, এখন তিনি প্রায় নিয়মিত বোলার।

এই গত বছরও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক থেকে বোলার হয়ে যাওয়া মিঠুন।

মিঠুন বিকেএসপি পার করার আগে থেকেই দেশের ক্রিকেটে পরিচিত মুখ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে। এরই মধ্যে ১০২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। কিন্তু তার পরিচয় নিয়ে কখনোই সন্দেহ ছিল না। দেশের শীর্ষ এক জন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ছিলেন। সেই পরিচয়েই ১০ টি টেস্ট, ৩৪ টি ওয়ানডে এবং ১৭ টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ইদানীং সেই পরিচয়টাকেই দোটানায় ফেলে দিয়েছেন প্রায় নিয়মিত বোলিং করে।

তাহলে কি গ্লাভস ছেড়ে উইকেটরক্ষক হয়ে যাচ্ছেন?

মিঠুন সেই শৈশবের চেনা হাসিটা হাসেন। হাসতে হাসতেই বলেন, ‘না, না। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। সৌরভ, মানে মুমিনুল বলে, তাই বল করি। মাঝে মাঝে উইকেট পাচ্ছি বলে চোখে পড়ছে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিচার করলে উইকেটকিপিং ছেড়ে পুরোদস্তুর বোলার হয়ে যাওয়ার নজির নেই। হ্যাঁ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ত্রাস ফাস্ট বোলার ওয়েস হল কৈশোরে কিপিং করতেন। কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনি, টটেন্ডা টাইবু মাঝে মাঝে গ্লাভস ছেড়ে উইকেট তুলে নিয়েছেন। সাবেক ক্যারিবিয় অধিনায়ক জিমি অ্যাডামস পার্ট টাইম কিপার থেকে বদলে পার্ট টাইম বোলার হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে নিজেকে বদলে ফেলার নজির নেই।

মিঠুন প্রথম স্বীকৃত ক্রিকেটে উইকেট পান গত অক্টোবরে। হাম্বানটোটায় শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে তার হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন মুমিনুল হক। তিনি ২ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন প্রথম শ্রেণির সেই ম্যাচে। ঐ ম্যাচ শেষে শ্রীলঙ্কা থেকেই হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘নেটে অনেক সময় বোলার কম পড়লে বল করি। এক জায়গায় বল ফেলতে পারি দেখে সৌরভ বলছিল, ম্যাচে বল করতে হতে পারে।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের যে দুটি দুই দিনের অনুশীলন ম্যাচ হলো, দুটিতেই বল করেছেন। প্রথম ম্যাচে ৫ রানে ২ উইকেট এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ রানে ২ উইকেট নেন। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ৭৫ রানে ৭ উইকেট তুলে নেন মিঠুন।  এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে মিঠুন কি বোলার হিসেবে নিয়মিত হতে চাচ্ছেন?

মিঠুনের এ ক্ষেত্রে অবস্থান খুব সরল। তিনি বলছিলেন, ‘এখন জাতীয় দল ও আশপাশে চার-পাঁচ জন কিপার ব্যাটসম্যান। আমি উইকেটের পেছনে সুযোগ পাই না। এ অবস্থায় অন্য কিছু দিয়ে একটু কন্ট্রিবিউট করতে পারলে মন্দ কি?’

আগে নেটে বেশি বল করতেন না। আজকাল দেখা যাচ্ছে নেটেও অনেক বল করছেন। বোঝা যাচ্ছে, বোলিংটাকে বেশ সিরিয়াসলি নিয়েছেন। তার দর্শন এ ব্যাপারে খুব পরিস্কার। বলছিলেন, ‘দেখেন, আমার লক্ষ্য জাতীয় দলে খেলা, কিছু করা জাতীয় দলের জন্য। সেটা যদি পানি টেনেও কোনো অবদান রাখা যায়, আমি তাতেই রাজি। ম্যানেজমেন্ট যদি চায়, আমি বোলার হয়ে যেতে রাজি। তবে কিপিংটা পুরো ছাড়ব না। তিনটেই করব।’

সেটা হলে মিঠুন পুরো বিশ্বে এক ও অনন্য অলরাউন্ডার হয়ে উঠবেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link