একটি কথা বেশ প্রচলিত আছে যে, বাপ কা ব্যাটা, সিপাহী কা ঘোড়া। অর্থাৎ ছেলে হয় বাবার মত আর ঘোড়া হয় সিপাহীর মতই। এই প্রবাদ আর যেখানেই সত্য হোক না কেন, শচীনপুত্র অর্জুন টেন্ডুলকারের জন্য মোটেও সত্যি নয়। বাবা শচীন টেন্ডুলকার ব্যাট হাতে বদলে দিয়েছেন ক্রিকেটের সংজ্ঞা। কিন্তু ছেলে অর্জুন ক্রিকেটার হয়ে উঠতে পারলেও পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে বাবার ধারেকাছেও কিছু হতে পারেনি।
১৯৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের মুম্বাইতে জন্মগ্রহন করেন অর্জুন টেন্ডুলকার। ক্রিকেটারের ঘরে জন্ম বিধায় ছোট বেলা থেকেই ব্যাট আর বলের সাথে অর্জুনের সখ্যতা গড়ে উঠে। একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই ক্রিকেটের দুনিয়ায় আগমন ঘটে তার। মিডিয়াম ফাস্ট বোলিং এর পাশাপাশি ব্যাটিংটাও ভাল আয়ত্তে ছিল এই বাম হাতির।
মুম্বাই অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম অভিষেক হয় অর্জুনের। এছাড়া মুম্বাই অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৯ এবং অনূর্ধ্ব ২৩ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এই তরুন ক্রিকেটার। এমনকি ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে আন্তজার্তিক পর্যায়েও ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেখানে দুইটি টেস্ট খেলে তিনটি উইকেট পেয়েছিলেন এই ফাস্ট বোলার।
২০২১ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামে ৩০ লক্ষ রুপির বিনিময়ে অর্জুনকে দলে নিয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। মুম্বাইয়ের হয়েই ২০২০-২১ সালে সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতে অভিষেক হয় অর্জুনের। এখন পর্যন্ত দলটির হয়ে দুইটি টি২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। মূলত বাঁহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন; এছাড়া ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারে ভরসা হওয়ার মত সামর্থ্য রয়েছে তার।
তবে ক্রিকেটারের ছেলে হয়ে ক্রিকেটে পা রাখায় অর্জুনের উপর সবসময়ই লেগে আছে শচীনের ছায়া। আর তাই নিজের পারফরম্যান্স নয়, বরং এই উদীয়মান বোলিং অল-রাউন্ডার ‘শচীন টেন্ডুলকারের ছেলে’ হিসেবেই বেশি খবরের শিরোনাম হয়েছেন। খেলাধুলাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া বিখ্যাত ক্রিকেটারদের ছেলেদের মধ্যে অর্জুনকে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে।
অবশ্য ক্রিকেটের মানের দিক দিয়ে অর্জুন যে গড়পড়তা একজন, সেটি অস্বীকার করা যায় না। তার মত অনেক ক্রিকেটারই ভারতের আনাচে-কানাচে খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্তু নিজের বাবা বিখ্যাত হওয়ার সুবাদে অল্প বয়সে অনুশীলনের জন্য বেশ কয়েকটি বিখ্যাত স্টেডিয়ামে সুযোগ পেয়েছেন অর্জুন টেন্ডুলকার।
এমনকি ভারত জাতীয় পুরুষ এবং নারী দল এবং ইংল্যান্ড জাতীয় দলের নেট বোলার হিসেবেও কাজ করতে পেরেছেন অর্জুন। কাছ থেকে দীক্ষা নিতে পেরেছেন ওয়াসিম আকরামদের মত কিংবদন্তিদের থেকে। এসব সুযোগ সুবিধা হয়তো আরো অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের জন্য রীতিমতো অলীক কল্পনা। এসব কিছুর পিছনে নিশ্চিতভাবেই শচীন টেন্ডুলকারের প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। অবশ্য এতে দোষ দেয়া যায় না। আপনি কিংবা আমি যদি এমন সুযোগ পেতাম তাহলে নিশ্চয়ই গ্রহনে অস্বীকৃতি জানাতাম না।
তবে মাঠের খেলায় নিজের ছেলেকে কোনরুপ অনৈতিক সুবিধার ব্যবস্থা করে দেননি শচীন টেন্ডুলকার। এইতো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ডাগআউটে বসেই গত দুইটি আইপিএলের আসর কাটিয়ে ফেলেছেন অর্জুন, আটাশ ম্যাচ বেঞ্চে থেকেও পাননি ম্যাচ খেলার সুযোগ। অথচ আইপিএলের সবচেয়ে সফলতম দলটির ম্যানেজম্যান্টে আছেন স্বয়ং টেন্ডুলকার নিজে। কিন্তু তিনি কখনোই কোচ কিংবা নির্বাচকদের প্রভাবিত করেননি অর্জুনের ব্যাপারে। এমনকি হতাশার এক আইপিএল শেষে আবার মুম্বাইয়ের রঞ্জি ট্রফির দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে শচীনপুত্রকে।
অবশ্য এসবে একেবারে মনোযোগ না দিতেই পুত্রকে পরামর্শ দিয়েছেন লিটল মাস্টার শচীন। নিজের উত্তরসূরীকে জানিয়েছেন, ‘ক্রিকেটে আসার এই পথটি তার জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আর তাকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই নিজেকে প্রমান করতে হবে।’
‘শচীনসাইট’ নামের একটি ‘শো’-তে এমন কথা বলেন তিনি। শচীন জানান অর্জুন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন কারণ সে ক্রিকেটটাকে ভালোবাসেন। তাই ফলাফল পেতে চাইলে তাকে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যেতেই হবে। অনুষ্ঠানটিতে এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান একেবারে স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমি কখনোই একাদশ নির্বাচনের সঙ্গে নিজেকে জড়িত করিনা। কারণ আমি সবসময়ই এসব কাজে ম্যানেজম্যান্টের উপর ভরসা রাখি।’
শচীন টেন্ডুলকার যখন খেলেছিলেন তখন কেউ তার হয়ে বাইশ গজে ব্যাট করেনি। অর্জুন টেন্ডুলকারকেও তাই নিজের খেলাটা নিজেই খেলতে হবে। হ্যাঁ, ক্রিকেট-ঈশ্বরের ছেলে হিসেবে হয়তো কিছু ব্যয়বহুল সুবিধা তিনি পেতে পারেন কিন্তু বাইশ গজে নিজের লড়াইটা তাকে একাই লড়তে হবে। অর্জুন টেন্ডুলকারের বয়সটা মাত্র ২২, চাইলে খুব সহজেই ভারত জাতীয় দলের একজন হয়ে উঠতে পারবেন সম্ভবনাময়ী এই ক্রিকেটার। আর এজন্য তাকে বেছে নিতে সংগ্রামের একাকী একটি পথ।