পৃথিবী বিস্ময়ের এক রঙ্গমঞ্চ। প্রতিটা মুহূর্তই যেন অবাক করে। ফুটবল সেই বিস্ময় নামক অধ্যায়ের একটা বড় জায়গা দখল করে রেখেছে। নান্দনিক সব ফুটবলাররা গোটা দুনিয়াকে মাতিয়ে রেখেছে। তাদের অসাধারণ ফুটবলীয় শৈলীতে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে সবাইকে। তাছাড়া দলগত দুর্দান্ত ফুটবল প্রদর্শনের উদাহরণও রয়েছে বহু।
তবে ফুটবল যতটা না মাঠে মুগ্ধ করে, ঠিক ততটাই করে মাঠের বাইরেও। অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানার মঞ্চায়ন হয়েছে ফুটবলকে ঘিরে। তেমনই এক ঘটনা ঘটে গেছে জাম্বিয়ার ঘরোয়া ফুটবলে। ফিফার সর্বশেষ র্যাংকিং অনুযায়ী দেশটির অবস্থান ৮৮ তম স্থানে। সুতরাং ফুটবলের বৈশ্বিক লড়াইয়ে বেশ এগিয়ে আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগের দেশটির।
তবে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বেশ বেগতিক জাম্বিয়ার। সেটা অবশ্য আফ্রিকার দেশগুলোর জন্যে ধ্রুব সত্য এক বিষয়। বিশ্ব ব্যাংকের ২০২১ এর ডাটা মোতাবেক দেশটির মাথাপিছু আয় ১১৩৭ ডলার একটু বেশি। ঠিক এখানটায়ও দেশটি পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে তুলনায় গেলে দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় ১৩০০ ডলার কম। এতটাই পিছিয়ে রয়েছে দেশটি।
যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে ফুটবল নিশ্চয়ই বিলাশিতা। তবুও দেশটিতে ফুটবল বেশ জনপ্রিয়। নিয়ম করেই হয় ঘরোয়া ফুটবলের আয়োজন। বৈশ্বিক আসরে সাফল্য নেই। তবুও ফুটবলের প্রতি ভালবাসার কমতি নেই। ফুটবলের চিরায়ত এক দৃশ্য, দুই চিরপ্রতিদ্বন্দীর মাঝে লড়াই। তেমন এক লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল, পাওয়ার ডায়নামোস ও এনকানা ফুটবল ক্লাব।
সেই দুই দলের ম্যাচে ফলাফলটা এসেছে পাওয়ার ডায়নামোসের হয়ে। আর এরপরই অদ্ভুত সেই ঘটনার অবতারণা। সেই ম্যাচে এসেছিল একটিমাত্র গোল। আর সেটি করেছিলেন পাওয়ার ডায়নামোসের খেলোয়াড় কেনেডি মুসান্ডো। দলটির আক্রমণে ভাগের এই খেলোয়াড়ই দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন।
ম্যাচজয়ী সেই পারফরমেন্সের জন্যে তিনি পুরষ্কার হিসেবে জেতেন পাঁচ কেস ডিম। খানিকটা ভ্রু কুচকে যাওয়ার মতই ঘটনা। তবে ঠিক তেমনটাই ঘটেছে সেখানে। জাম্বিয়াতে ডিমের দাম ডজনে প্রায় ২০০ টাকার কাছাকাছি। সেই হিসেবে পাঁচ কেস ডিমের দাম গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় হাজার তিনেক বাংলাদেশি টাকা। সে পরিমাণ অর্থ পুরষ্কার দিলেও হয়ত এত আলোচনার কোন প্রয়োজনই পড়ত না। কিন্তু ভিন্নধর্মী এক পুরষ্কার দিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় জাম্বিয়ার ঘরোয়া ফুটবল।
তবে এই টুর্নামেন্টের শুরুতেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হিসেবে তিন কেস ডিম দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু মুসান্ডো দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছেন বিধায় ডিম সরবরাহকারী ফার্মের মালিক তাঁকে খুশি হয়ে আরও দুই কেস ডিম বাড়িয়ে দেন। কেননা সেই ফার্মের মালিক পাওয়ার ডায়নামোসের একজন ভক্ত ছিলেন।
ফুটবলের অবশ্য এমন বিরল ঘটনা এবারই প্রথম ঘটেছে তা নয়। এর আগেও বহুবার উদ্ভট সব পুরষ্কার নজর কেড়েছে। মজার বিষয় হল, অধিকাংশ পুরষ্কারই আফ্রিকার দেশগুলোতেই দেওয়া হয়েছে। সেজন্য অবশ্য দেশগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থান অনেকাংশে দায়ী।