ফুটবলারদের জন্যে রীতিমত এক দুবির্ষহ দিন অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে ইউরোপীয়ান ফুটবলের সাথে সংযুক্ত ফুটবলারদের যেন দম ফেলার মত সুযোগ নেই। আর তাতে করে ফিফার দুরদর্শিতার অভাব আরও একবার এসেছে আলোচনায়। ফুটবলার কি মানুষ নাকি স্রেফ বৃহৎ বাণিজ্যের বিপণন পণ্য!
ইউরোপীয়ান ফুটবলের মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। আগস্টের মধ্যভাগে শুরু হবে স্প্যানিশ লা লিগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান। আগস্টের শেষভাগে যাত্রা শুরু করবে জার্মান বুন্দেসলিগা ও ইতালিয়ান সিরি আ- এর নতুন মৌসুম।
এই তো গেল ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগ শুরুর ফিরিস্তি। অতএব নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে মাঠে গড়াচ্ছে ইউরোপীয়ান ক্লাব ফুটবল। একই দশা প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়ে। এর মূল কারণ এবারের হওয়া নতুন ফরম্যাটের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।
বছর ঘুরতেই আবার মঞ্চস্থ হবে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। আগামী বছরের জুনের ১১ তারিখে পর্দা উঠবে ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়োনের। অর্থাৎ মাঝে সময় আছে স্রেফ দশ মাস। এই দশ মাসের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাবগুলোকে খেলতে হবে ৩৮টি লিগ ম্যাচ। পাশাপাশি আবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ঘরোয়া কাপ টুর্নামেন্টেও অংশ নিতে হবে।
গেল আসরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল সহ প্যারিস সেইন্ট জার্মেই মোট ম্যাচ খেলেছে ৫৮টি। এর মধ্যে নেই ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সাত ম্যাচের হিসেব। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রানার্সআপ দল ইন্টার মিলান ক্লাব বিশ্বকাপ ছাড়াই ম্যাচ খেলেছে ৫৯টি।
অতএব নতুন ক্লাব মৌসুমেও এত বিপুল পরিমাণের ম্যাচ খেলতে হবে শীর্ষ দলগুলোকে। আর অধিকাংশ শীর্ষ ক্লাবের খেলোয়াড়দেরই তো ডাক আসে জাতীয় দল থেকে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী প্রিমিয়ার লিগ শেষ হবে আগামী বছরের ২৪ মে। বাকি লিগগুলোও প্রায় সমসাময়িক সময়ে শেষ হবে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ৩০ মে।
অর্থাৎ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলা ক্লাবের খেলোয়াড়দের হাতে মোটে ১২দিন সময় থাকবে নিজেদেরকে ফুটবল বিশ্বকাপের জন্যে প্রস্তুত করার। বছর জুড়ে এত প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলা, তাও আবার এত স্বল্প সময়ের মধ্যে ভীষণ কঠিন। খেলোয়াড়দের প্রায় সমস্ত রসদই শুষে নেবে এই ‘টাইট শিডিউল’।
স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াড়দের ইনজুরির মাত্রা বেড়ে যাবে। ফুটবলারদের ‘রিকাভারি’ করার পর্যাপ্ত সময় তো হাতে থাকবে না। এমন দমবন্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিতে যেতে হবে গোটা বিশ্বের প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়কে। এতে করে খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সও বাজেভাবে প্রভাবিত হবে।
বহু দলের বিশ্ব জয়ের স্বপ্নের মূল কারিগরদের ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমন নির্দয়ী সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে, ফুটবলাররা ফিফার মত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার স্রেফ এক পণ্য!