দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম তাঁদের

একটা সময় ক্রিকেট দুনিয়ার দুর্ধর্ষ এক দল ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় আসরে বড় ম্যাচের চাপ সামলাতে না পারায় একটা সময় চোকার্স উপাধিও পেয়েছে দলটি। তবে সবাই জানতো যেকোনদিন, যেকোন মুহূর্তে প্রতিপক্ষকে তচনচ করে দিতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।

জ্যাক ক্যালিস, গ্রায়েম স্মিথ, ল্যান্স ক্লুজনার কিংবা এবি ডি ভিলিয়ার্সের মত দুনিয়া কাঁপানো নাম গুলো এখন আর নেই। তবুও রাবাদা, ডি কক, শামসিরা এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার সেই ঐতিহ্য বহন করে যাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য এখানেই থেমে থাকে না। দক্ষিণ আফ্রিকা যেনো ক্রিকেটের এক আঁতুড়ঘর।

ক্রিকেটার তৈরির উর্বর ভূমি। দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা অসাধ্য সাধন করতে না পারলেও ক্রিকেটে প্রোটিয়াদের আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস, বলা ভালো সোনালি ইতিহাস। ক্রিকেট খেলাটা কখনো অস্বীকার করতে পারবেনা তাঁর গায়ের উপর প্রোটিয়াদের ছাপ।

দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া অনেক ক্রিকেটারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন অন্য দেশের হয়ে। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেছেন তাঁরা।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলা জেমস ওয়াটলিট বিজে ওয়াটলিং তো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপই জিতলেন। তবে তিনিও তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়ই। এছাড়াও এই তালিকায় যুক্ত হবে জেসন রয়, টম কুরান কিংবা ডেভন কনওয়ের মত ক্রিকেটাররা।

তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা গেল দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক প্রতাপ। বাছাইপর্ব খেলা সহযোগী দেশগুলোর চারটিতেই খেলেছেন এক বা একাধিক দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ক্রিকেটার। নামিবিয়া দলে সংখ্যাটা ছয় জন। আবার নেদারল্যান্ডের হয়েও খেলছেন ৫ জন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ক্রিকেটার। এছাড়া স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা।

এখানে অবশ্য ভোগৌলিক কিছু ব্যাপারও আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া অনেকেরই পূর্বপুরুষের ঠিকানা ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। অনেকেরই আদিভূমি আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড কিংবা নামিবিয়ার মত দেশগুলো।

ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নিলেও অনেকেই হয়তো প্রোটিয়া দলে সুযোগ করে নিতে পারেন। এখানে বর্নবাদও একটা বড় ইস্যু ছিল। সবমিলিয়ে তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য আবার নিজেদের আদি ভূমি কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ফিরে যান।

যেমন সহযোগী দেশগুলোর হয়ে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম বোধহয় রায়ান টেন ডেসকাট। এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার নেদারল্যান্ডের হয়ে খেলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হটকেক। আইপিএল থেকে বিগব্যাশ পর্যন্ত দুনিয়া সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই খেলে বেড়িয়েছেন ডেসকাট। তবে তাঁরও জন্ম হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। এবার ডেসকাট তাঁর শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছেন নেদারল্যান্ডের হয়ে।

এছাড়া নেদারল্যান্ডের আরেক ক্রিকেটার কলিন অ্যাকারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়েও খেলেছেন। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাসপোর্ট ব্যবহার করে পাড়ি জমিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডে। তিনিও আছেন এবারের বিশ্বকাপে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ব্র্যান্ডন গ্লোভার, স্টিফেন মাইবার্গ ও রুলফ ভ্যান ডার মারউইরাও খেলছেন এবারের বিশ্বকাপে।

এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছয় জন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ক্রিকেটার খেলছেন নামিবিয়ার হয়ে। নামিবিয়া দলের সবচেয়ে পরিচিত মুখ ডেভিড উইসে। এই অলরাউন্ডার খেলেছেন আইপিএলেও। তাঁরও জন্ম হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। এছাড়া এই তালিকায় আরো আছেন কার্ল বারকেনস্টক, মিক ডু প্রিজ, জ্যান ফ্রাইলিংক, রুবেন ট্র্যাম্পলম্যান ও মাইকেল ভ্যান লিঙ্গেনরা।

ওদিকে এবারের বিশ্বকাপে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছে স্কটল্যান্ড। সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁদের উন্নতি চোখে পড়ার মত। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে হারিয়ে বার্তাটা দিয়ে দিয়েছে তাঁরা। এবারের বিশ্বকাপ দলে স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলছেন তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ক্রিকেটার। তাঁরা হচ্ছেন রিচি বেরিংটন, ক্রিস গিভস ও ব্র্যাড হোয়েল।

এছাড়া আয়ারল্যান্ডের হয়ে এবারে বিশ্বকাপে একজন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ক্রিকেটার খেলছেন। আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্পফার ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সক্ষমতার জানান দিয়েছেন। আইরিশদের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে গত একবছরে অন্যতম সেরা পারফর্মার তিনি। এবার শর্টার ফরম্যাটের বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার পাল ক্যাম্পফারের সামনে।

শুধু প্রোটিয়া বংশদ্ভুত খেলোয়াড়ই নয়, প্রোটিয় কোচদেরও এখন অবধি জয়জয়কারই দেখা যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। প্রথম পর্ব পেরিয়ে যে চারটি দল সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে তাঁদের সবার কোচই দক্ষিণ আফ্রিকান। শ্রীলঙ্কা মিকি আর্থার, বাংলাদেশের রাসেল ডোমিঙ্গো, নামিবিয়ার পিয়েরে ডি ব্রুইন কিংবা স্কটল্যান্ডের শেন বার্জার সবাই দক্ষিণ আফ্রিকান।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link