লিকলিকে ভয়ংকর এক পাখির গল্প

একটা পঞ্চাশ রানের জুটি হল। একপ্রান্তের ব্যাটার রান পেলেন ঠিক কিন্তু অপরপ্রান্তের ব্যাটারের রানের খাতা একেবারেই শূন্য। একপ্রান্তে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিল্ক্রিস্ট। তাঁর সঙ্গী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা। তিনি একটি রান না করেও এক প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে সঙ্গ দিয়ে গেছেন গিলক্রিস্টকে। ঘটনাটা ২০০১ সালে হওয়া অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম ম্যাচের।

গ্লেন ম্যাকগ্রাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছুই নেই। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের এক সময়ের কাণ্ডারি। বিশ্ব ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তি ‘দ্য পিজিয়ন’ বা পায়রা খ্যাত ম্যাকগ্রা। তিন তিনবার বিশ্বকাপ জেতা ক্রিকেটার তিনি। কতশত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। কত রোমাঞ্চকর মুহূর্ত তিনি উপহার দিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটকে। ১৯৯৫ সাল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক টেস্ট ম্যাচের কথাই ধরা যাক।

প্রথম ইনিংস শেষে ১৫১ রানের লিড নিয়ে ফেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া। অজিদের প্রধান ভয়ের কারণ ছিলেন ব্রায়ান লারা। যার কিনা এক ইনিংসে চারশ রান করার রেকর্ড রয়েছে। সে দাঁড়িয়ে গেলেই আর ম্যাচ জেতা যায় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বাইশ গজে এলেন লারা। ম্যাকগ্রা ঠিক আর তাঁকে সময় দিলেন না খুব একটা। দূর্দান্ত এক বল করলেন স্ট্যাম্প ঘেষা লাইন ধরে। সে বল আবার ধাবিত হচ্ছিল অফ স্ট্যাম্পের বাইরের দিকে।

সে বলের লাইন এবং গতিতে পরাস্ত লারা। ব্যাটের খোঁচা লেগে বল গিয়ে জমা হয় উইকেটরক্ষকের দস্তানায়। ব্যাস! মাত্র নয় রানেই সাজঘরে লারা। সে ম্যাচে দশ উইকেটের বিশাল এক জয় নিয়ে ফিরেছিল অজিরা। শুধু যে বল হাতেই তিনি জ্বলে উঠেছিলেন বারবার তা নয়। ব্যাট হাতেও মাঝেসাঝে কারিকুরি দেখিয়েছেন ম্যাকগ্রা। এই যেমন তিনি যেদিন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান করলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেবার তিনি ১১৪ রানের পার্টনারশীপ গড়েছিলেন জেসন গিলেস্পির সাথে। সে জুঁটিতে ম্যাকগ্রা করেছিলেন ৬১ রান।

তাঁদের সেই জুঁটির রান পর্যন্ত টপকাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে। তবে বল হাতেই তিনি ছিলেন সদা উজ্জ্বল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাকগ্রা কাটিয়েছেন দারুণ সব সময়। একদফা তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে পরপর তুলে নিয়ে করেছিলেন হ্যাট্রিক। সেবার তিনি নিয়েছিলেন শেরউইন ক্যাম্পবেল, ব্রায়ান লারা ও জিমি অ্যাডামসের উইকেট।

তাছাড়া ১৯৯৯ এর বিশ্বকাপেও আবার সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই বিপাকে ফেলেছিলেন ম্যাকগ্রা। তিনি আরও একটি অসাধারণ বলে তিনি আউট করে প্যাভিলনে ফেরান লারাকে। তাঁর সেই বলটা ছিল অভূতপূর্ব। মিডল স্ট্যাম্পে পিচ করা বল গিয়ে আঘাত হেনেছিল অফস্ট্যাম্পের উপরিভাগে। নকআউট স্টেজের সে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ অস্ট্রেলিয়ার দিকে করে দিয়েছিলেন ম্যাকগ্রা।

বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রা যে কি পরিমাণ ভয়ংকর ছিল তা বোধহয় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলে ২০০৪ সালের পাকিস্তান দল। কেননা অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে একে একে টপ অর্ডারের সাত ব্যাটারের উইকেট একাই তুলে নিয়েছিলেন ম্যাকগ্রা। সেদিন তিনি ক্ষান্ত হয়েছিলেন আটটি উইকেট শিকার করে। রান দিয়েছিলেন মাত্র ২৪। ঠিক এতটাই ভয়ংকর বোলার ছিলেন ম্যাকগ্রা।

তিনি ভয়ংকর ছিলেন ঠিক। তাঁর সেই ভীতি কাজে লাগিয়ে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। তিনটি বিশ্বকাপ তাঁর অর্জনের ক্যাবিনেটকে যেন সুসজ্জিত করেছে বহুগুণে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হয়ে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন ম্যাকগ্রা। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর এর থেকে ভাল পন্থা আর কিই বা হতে পারে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link