বাম পা ক্রিজের মধ্যে এবং ডান হাত দিয়ে ব্যাট আঁকড়ে ধরেছেন, কিছুটা কাত হয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ বোলারের দিকে। দূর থেকে গ্লেন ফিলিপসকে দেখা গেল এমনই স্প্রিন্টারের মতো স্কোয়াট করার অদ্ভুত পজিশনে। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা এই ব্যাটারের ভঙ্গিমা দেখে যে কেউ দৌড় প্রতিযোগিতার প্রতিযোগীর সাথে গুলিয়ে ফেলবেন।
তিনি এমনভাবে আছেন যেন এই বুঝি বাতাসে গুলির শব্দ শোনা যাবে, এই বুঝি তৎক্ষণাৎ তিনি দৌড় লাগাবেন। কিন্তু না, এটাতো বাইশ গজ, খেলাটাও ক্রিকেট। তাহলে এমন অদ্ভুত ভঙ্গিমার আশ্রয় কেন নিলেন এই ব্যাটসম্যান? ঘটনা এই বিশ্বকাপের আসরে শ্রীলঙ্কা বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের।
চলুন, গ্লেন ফিলিপসের এমন আচরণের একটু ময়নাতদন্ত করা যাক। ক্রিকেটবিশ্ব সাম্প্রতিক সময়য়ে মানকাডিং তর্ক-বিতর্কে বেশ সরব। ইংল্যান্ড এবং ভারত নারী দলের সিরিজ চলাকালীন ভারতীয় বোলার দীপ্তি শর্মার একটি উইকেট, নতুন করে ‘মানকাডিং’ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আইসিসির নিয়মানুযায়ী বোলার বল ছাড়ার আগেই নন স্ট্রাইকার ব্যাটার যদি পপিং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান, সেক্ষেত্রে বোলার স্টাম্প ভেঙে দিলে ‘মানকাডিং আউট’ বলে ধরা হতো। সহজ ভাষায় বললে এটি ‘রানআউট’ বলে গণ্য হবে এবং এই নিয়মটি আইসিসির আইনসিদ্ধ। যদিও এই ‘মানকাডিং’ নিয়ে অনেক সমালোচনাও রয়েছে ক্রিকেটবিশ্বে।
বলছিলাম গ্লেন ফিলিপসের কথা। গ্লেন ফিলিপস সম্ভবত ‘মানক্যাডিং’ এড়ানোর কৌশলটি আবিষ্কার করে ফেললেন। নন স্ট্রাইকার প্রান্তে থেকেও এই ব্যাটার এমন এমন অদ্ভুত পজিশনে বসে ছিলেন যাতে তাঁর পা ক্রিজের ভেতরেই থাকে।
সেই সাথে বোলারের উপর কড়া নজর রাখলেন, যেন বোলার ডেভিভারি সম্পন্ন করা মাত্রই তিনি দৌড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন ক্রিজ ছেড়ে। এক কথায় বলতে গেলে সহজে রানও করতে পারলেন, অন্যদিকে মানকাডিং এর খপ্পরে পড়ার সুযোগও থাকলো না। এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাকে বলে সেইরকম অবস্থা আরকি।
মানকাডিংকে বৈধতা দেয়ার সুরেই তিনি বললেন, ‘দিনশেষে আমার লক্ষ্য ছিল এটা নিশ্চিত করা যে আমি ক্রিজে আছি এবং সঠিক সময়ে রানের জন্য দৌড়াতে পারছি। কিন্তু যদি ক্রিজে না থাকি, তবে বোলার তাঁর কাজ করবেন। কারণ তখন তাঁর আউট করার অধিকার আছে।’
মানক্যাডিং এড়াতে নিজের এই কৌশলটি নিয়ে ফিলিপস বলেন, ‘কে জানে, হয়তো কিছু মানুষ এটি ব্যবহার করবে! নয়তো কিছু মানুষ করবে না। ক্রিজে থেকেও ব্যাটকে এভাবে ছড়িয়ে দেয়া, আপনাকে সুবিধা দিবে।’
অবশ্য কৌশলী মস্তিষ্কের পাহসাপাশি গ্লেন ফিলিপসের ব্যাটও দুর্দান্ত গতিতে চলে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার টুয়েলভের খেলায় ৬৪ বলে ১০৪ রান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই ব্যাটার। অসাধারণ সেই ইনিংস সাজিয়েছিলেন দশটি চার এবং চারটি ছক্কা দিয়ে।