সফল ক্রিকেটার, ব্যর্থ অধিনায়ক

একটা ক্রিকেট দলে সাধারণত তাঁর সেরা খেলোয়াড়কেই অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। কেননা দলের সেরা পারফর্মারের মধ্যে এক ধরণের আত্মবিশ্বাস থাকে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন তাঁরা। তবে দলের সেরা পারফর্মারই কি সত্যিই সেরা অধিনায়ক হন? অধিনায়ক হওয়ার জন্য মাঠে এবং মাঠের বাইরের নেতৃত্বগুণটা যে সবচেয়ে জরুরি। এছাড়া ক্রিকেটের নানা মনস্তাত্বিক বিষয়ে পারদর্শী হতে হয় একজন অধিনায়কে।

মাঠে দারুণ সব সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এই বৈশিষ্ট্য গুলো ভীষণ জরুরি। ফলে ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড়ই হয়তো অধিনায়ক হিসেবে সফল ছিলেন না। সফল অধিনায়ক না হলেও ইতিহাসের সেরা সেই ক্রিকেটারদের নিয়ে এই তালিকা।

  • ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যনদের একজন ব্রায়ান লারা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক হিসেবে অবশ্যই সেরাদের তালিকাই নেই এই কিংবদন্তি। ওয়ানডে ও টেস্ট দুই ফরম্যাটেই লম্বা সময় দলটির অধিনায়ক ছিলেন লারা।

ওয়ানডে ক্রিকেটে মোট ১২৫ টি ম্যাচে দলকে নেতৃত্বে দিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ ম্যাচে জয়ে এনে দিয়েছিলেন তিনি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪৭ ম্যাচে জয় পেয়েছেন মাত্র ১০ টিতে। এরমধ্যে ২৬ ম্যাচেই পরাজয়ের মুখ দেখেছিল ক্যারিবীয়রা।

  • অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (ইংল্যান্ড)

আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে ইমপ্যাক্টফুল ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার। তবে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থ ছিলেন ফ্লিনটফ।

তাঁর নেতৃত্বে ১১ টি টেস্ট খেলে ইংল্যান্ড জয় পেয়েছে মাত্র ২ টিতে এবং ৭ ম্যাচেই হারের মুখ দেখেছিল তাঁরা। এছাড়া ৭ ওয়ানডে ম্যাচেও অধিনায়ক হিসেবে জয় পেয়েছেন ১ টিতে।

  • কেভিন পিটারসেন (ইংল্যান্ড)

ইংল্যান্ডের আরেক গ্রেট ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেনও আছেন এই তালিকায়। অধিনায়ক হিসেবে ইংল্যান্ডকে মাত্র ৩ টেস্ট ও ৯ ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার। সেই সময় ভারতের কাছে ৫-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল ইংল্যান্ড।

  • হিথ স্ট্রিক (জিম্বাবুয়ে)

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পেস বোলার হিথ স্ট্রিক। বোলার হিসেবে দারুণ সফল এই পেসার অধিনায়ক হিসেবে অবশ্য ততটা সফল না। ৬৮ ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ১৮ টিতে জয় এনে দিয়েছিলেন এই অধিনায়ক। এছাড়া ২১ টেস্টেও ১১ হারের বিপরীতে জয় পেয়েছিলেন মাত্র ৪ টিতে।

  • ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের একজন ক্রিস গেইল। দ্য ইউনিভার্স বস নিজের দিনে যেকোনো প্রতিপক্ষকের চুরমার করে দিতে পারেন। তবে অধিনায়ক হিসেবে খুবই সাদামাটা এই ক্রিকেটার। ২০ টেস্টে মাত্র তিন জয়ের বিপরীতে আছে নয় হার। ওয়ানডে ক্রিকেটেও ৫৩ ম্যাচে জয় পেয়েছেন মাত্র ১৭ টিতে।

  • শিবনারায়ন চন্দরপল ( ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের আরেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শিবনারায়ন চন্দরপাল। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ঝুলিতেও সাফল্য নেই বললেই চলে। ১৪ টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে জয় পেয়েছিলেন মাত্র একটিতে।

  • অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ( জিম্বাবুয়ে)

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানদের একজন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। তাঁর ব্যাটে চড়েই দারুণ সব জয় পেয়েছিল দেশটি। তবে অধিনায়ক হিসেবে দেশটিকে মোট ৫২ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জয়ের বিপরীতে আছে ৩৫ টি হার।

  • রস টেলর (জিম্বাবুয়ে)

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল এই ব্যাটসম্যান অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। দেশটিকে মোট ১৪ টেস্ট ম্যচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। এরমধ্যে জয় পেয়েছিলেন মাত্র চারটিতে। এছাড়া ২০ ওয়ানডে ম্যাচেও জয় মাত্র ৬ টিতে।

  • শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

ক্রিকেট বিশ্বের এই সফলতম  ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। কয়েক দফায় ভারতের অধিনায়ক হলেও কখনোই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।

সব মিলিয়ে ৭৩ ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছিলেন মাত্র ২৩ টিতে। টেস্টের অবস্থা আরো খারাপ। ২৫ টি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছেন মাত্র চারটি ম্যাচে। হেরেছেন নয়টিতে, ড্র হয়েছে ১২ টিতে।

  • ব্রেন্ডন টেলর (জিম্বাবুয়ে)

সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ব্রেন্ডন টেলর। তবে, অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থ তিনি। ১৬ টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন মাত্র তিনটিতে। অন্যদিকে, ৩৪ টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন নয়টিতে। অন্যদিকে, ১৮ টিতে টি-টোয়েন্টিতে জিতেছেন মাত্র চারটিতে।

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link