হামজা চৌধুরী, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পথিকৃৎ

একজন মেসিয়াহ প্রয়োজন, একজন পথপ্রদর্শক প্রয়োজন। হামজা চৌধুরী হতে পারেন সেই পথ প্রদর্শক। তিনি একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাতে পারেন বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে। কিভাবে?

এখনও বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামেননি হামজা চৌধুরী, তবে ইতোমধ্যেই তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে সকল মহলে। এমনকি খেলোয়াড়দের মাঝেও রয়েছে বাড়তি উন্মাদনা। ফুটবলকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নয়া উত্তাপ। এখান থেকেই যেন ভবিষ্যতের মৃদু আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

প্রথমত, হামজা চৌধুরি জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামার সাথে সাথে, আরও বহু প্রবাসী কিংবা বাংলাদেশি বংশদ্ভুত খেলোয়াড় লাল-সবুজের জন্যে খেলতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। এই চল অবশ্য আগে থেকেই ছিল, জামাল ভূঁইয়া আসার পর তারিক কাজির মত ফুটবলারও এসেছেন এই বাংলার টানে। এবার সংখ্যাটা বাড়বে হামজার প্রতিদান ও দর্শকদের হামজার প্রতি ভালবাসার সমানুপাতিক হারে।

এটাই শেষ নয়, হামজা যে এখন অবধি আসা প্রবাসী খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানসম্মত, সে বিষয়ে তো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের মাঠের ফুটবলের তিনি প্রভাব বিস্তার করবেন। নিজের সক্ষমতার প্রদর্শন ঘটাবেন। তখন বাকিদেরও তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। নতুবা দল থেকে ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আর এতেই দলে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড়ের নিজেদের নিঙড়ে দেওয়ার স্পৃহা দ্বিগুণ হবে। আগে যদিও ছিল কি-না সন্দেহ।

এতে করে গোটা দলের মান উন্নয়ন হবে স্রেফ মাঝমাঠে হামজার উপস্থিতিতে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা আসবে তো রিচুয়ালে। হামজা নিজের ফিটনেস নিশ্চয়ই হারাতে চাইবেন না। এএফসি কাপের ম্যাচ শেষ করে তাকে আবার ফেরত যেতে হবে ইংল্যান্ডে। তিনি নিশ্চয়ই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে নিজের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখে ঠেলতে চাইবেন না।

স্থানীয় তরুণ ফুটবলাররা তখন দেখবে একজন বিশ্ব মানের ফুটবলার হতে হলে কি কি করতে হয়। মানুষ তো দেখেই শেখে। এই তল্লাটের প্রতিটা ফুটবলার চিরকাল শুনেছে মেসি-রোনালদোরা কি করেন। কিন্তু এবার জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা সত্যিকার অর্থেই দেখতে পাবেন ইউরোপের জমজমাট ফুটবলে টিকে থাকার লড়াইটা কিভাবে হয়।

মাঠের ফুটবলে হামজা নেমেই পুরো ভোল পালটে দেবেন দলের- তেমনটা ভাবা বোকামি বটে। কিন্তু তিনি একটা নতুন সংস্কৃতির বীজ বপণ করে যাবেন। তিনি এক নতুন তাড়নার ইঞ্জেক্ট করে দেবেন দেশের ফুটবলারদের মাঝে। আর সেটাই হয়ত ধীরে ধীরে বদলে দেবে বাংলাদেশ ফুটবলের বর্তমান চিত্র।

তবে একটা শঙ্কা রয়েছে। ধারণা করা হয় একটা অদৃশ্য সিন্ডিকেটের বিষবাষ্প ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ফুটবলে। তারা এই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তাদেরকে দমন করার কাজটা করতে হবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে। সেই সাথে দর্শকদের অকুণ্ঠ সমর্থনই নিয়ে আসতে পারে বাংলাদেশ ফুটবলের সুদিন। আসবে তো?

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link