হামজার প্রভাব চাপে ফেলে দিচ্ছে সবাইকে

হামজা চৌধুরি বাংলাদেশের বাকি ফুটবলারদের উপর একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন। তাছাড়া মাঠের ফুটবলেও হামজা ক্রমশ নেতা হয়ে উঠছেন।

হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের বাকি ফুটবলারদের উপর একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন। একটা আলাদা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করছেন তিনি। যেমন ধরুণ তিনি ইংল্যান্ড থেকে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন সকাল বেলা। দীর্ঘ এক যাত্রার ক্লান্তিকে হামজা উড়িয়ে দিলেন তুড়ি মেরে। বিকাল বেলায় ছুটে গেলেন দলের সাথে অনুশীলন করতে।

শুধু কি তাই? তিনি যখন প্রথমবার দেশে এসেছিলেন। সেই দিনটির কথা মনে আছে? তিনি সকাল বেলা নামলেন সিলেটে। ওইদিন তার কাটল নানা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে। যাত্রা শেষে তিনি বিমানবন্দরে নেমে দেখলেন মানুষের জটলা। সাংবাদিকদের ভীড় থেকে ছুড়ে এলো একের পর এক প্রশ্ন।

তবুও তার মুখে ক্লান্তি কিংবা বিরক্তি কোন কিছুর ছাপ ছিল না। হাসিমাখা মুখে তিনি সবকিছু সামলে নিলেন। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিস্তৃত এক হাসি মুখে রেখে। তারপর দিন তিনি আবার এলেন ঢাকায়। এসেই অনুশীলনে নেমে গেলেন। বিশ্রামের সময় পেলেন না, তিনি চাইলেনও না।

তার মানের একজন খেলোয়াড় যদি একটা দিনের বিশ্রাম দাবি করতেন, কেউ নিশ্চয়ই তাকে মানা করত না। তবুও হামজা করলেন না, নিজের নিবেদনকে প্রাধান্য দিলেন। একটি দলের সদস্য হিসেবে যতটুকু নিয়ম মানা যায়, যতটুকু শৃঙ্খল থাকা যায়- ততটুকু তিনি থাকতে চাইলেন।

এই সামান্য বিষয়গুলো পুরো দলের মাঝে একটা বাড়তি চাপের সৃষ্টি করছে, নিরবে-নিভৃতে। আর হামজাকে বানিয়ে তুলছে এক সত্যিকারের নেতা। সব অধিনায়কের হাতে তো আর আর্মব্যান্ড থাকে না। এই যে ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে জাতীয় দলের জন্যে নিবেদিত প্রাণ হওয়াও তো দলনেতার পরিচয় বহন করে।

বাংলাদেশ দলের বাকি খেলোয়াড়রা হয়ত মানের দিক থেকে হামজার সমতুল্য হতে পারবেন না। কিন্তু হামজাকে দেখে তারা অন্তত আরও বেশি সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবেন। এছাড়াও দলের সাথে অনুশীলন করবার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করতে শুরু করবেন সকলে। দিনশেষে ফুটবল তো ‘টিম গেম’।

তাছাড়া মাঠের ফুটবলেও হামজা ক্রমশ নেতা হয়ে উঠছেন। ভারতের ম্যাচে তিনি প্রথমবার খেলতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের জার্সিতে। সেই ম্যাচ থেকেই তিনি নিজেই দলের খেলা পরিচালনার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়কে তিনি পাসিং চ্যানেল দেখিয়ে দিয়েছেন, সাহস নিয়ে বল পায়ে রাখতে বলেছেন।

এমনকি রহমত মিয়া তো সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন যে হামজা সবাইকে একটু আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যদি ভুলচুক হয়েও যায় সেটা শুধরে নেওয়ার জন্যে তিনি থাকবেন। এই যে ছোট ছোট বিষয়ে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন- এসবই তাকে আগামী দিনের নেতা বানিয়ে তুলছে।

সামনের দিনগুলোতে হামজার হাতে আর্মব্যান্ড দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জামাল ভূঁইয়া পরবর্তী যুগে তিনিই তো হবেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এমন বলিষ্ঠ চরিত্রের ছোঁয়ায় অন্তত জাতীয় দলের অন্দরমহলের পরিবেশ বদলে যাবে সেটুকু প্রায় নিশ্চিত। আর সাফল্য তো একদিনে ধরা দেয় না।

Share via
Copy link