হামজাদের হারতে হয় সিন্ডিকেটের কাছে!

সবাই বুঝতে পারেন ঠিকই, তবে কিছুই যেন করার নেই। সিন্ডিকেট নামক সেই শক্তি ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্যানসারের মতো।দেশের ফুটবল আক্রান্ত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে, আর হামজা-জামালরা চেষ্টা করছেন তাকে বাঁচিয়ে রাখার।

মাতৃভূমির একটা ডাকে হামজা চৌধুরি, সামিত সোমরা ছুটে আসেন। চোখে মুখে কেবলই লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চাপানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তাঁরা বুক চিতিয়ে লড়াই করেন, জিততে না পারার আক্ষেপে সবুজ ঘাসে অভিমানী চোখের জল ফেলেন। আর প্রাপ্তির খাতায় জমা হয় কেবল হতাশা। তারা হার মেনে নিতে বাধ্য হন সিন্ডিকেট নামক এক অদৃশ্য প্রতিপক্ষের সামনে।

গোটা বাংলাদেশের একটাই প্রত্যাশা, এই হামজা-সামিতদের নিয়ে এক অধরা স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার। গ্যালারি ভর্তি দর্শক কিংবা টিভি সেটের সামনে বসে থাকা মানুষের প্রতীক্ষা কেবল প্রতিপক্ষকে চুরমার করে দেওয়া একটা শটের, একটা গোলের কিংবা হামজাদের মুখে বিজয়ের হাসি দেখার।

সময় গড়িয়ে যায়, তবে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত আর আসে না। আসে এক অশুভ শক্তির বলয়। যা ভেদ করে আর বেরিয়ে আসতে পারেন না জামাল ভূঁইয়া কিংবা তরুণ ত্রাস জায়ান আহমেদরা। তাদের কেবল বেঞ্চে বসে থাকতে হয়, দলের ভগ্নদশা দেখতে হয়। ম্যাচ শেষে হারের ক্ষত নিয়ে জামালকে বলতে হয়, ‘আমরা শুরুর একাদশে খেলতে চাই।’ এর থেকে বেশি কিবা করার আছে তাদের।

সবাই বুঝতে পারেন ঠিকই, তবে কিছুই যেন করার নেই। সিন্ডিকেট নামক সেই শক্তি ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্যানসারের মতো।দেশের ফুটবল আক্রান্ত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে, আর হামজা-জামালরা চেষ্টা করছেন তাকে বাঁচিয়ে রাখার।

২৮ ঘণ্টার জার্নি শেষে সামিত মাঠে নামেন, হামজারা গোল করেন। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেন। বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে দেশে আসেন, নিশ্চয় ম্যাচ ফির ২০ হাজার টাকার লোভে নয়। এর থেকে ঢের বেশি তো হামজারা ইংল্যান্ডে বসে থাকলেই পান।

তবুও দিনশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জয়ের আনন্দে মেতে ওঠা হয় না। জামাল তাই অভিমানী চোখে আড়ালে চলে যান, হামজা মাঠে বসে চোখের জল লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালান, ফাহমিদুল আবেগ ধরে না রাখতে পেরে কেঁদে ফেলেন, লুটিয়ে পড়েন প্রিয় মাতৃভূমির সবুজ ঘাসে।

কখনো কখনো নিয়তি ছুরির তীক্ষ্ণ ফলার মতো বুকে আঘাত করে। কখনো কালো শক্তি ঢেকে দিয়ে যায় স্নিগ্ধতার হাসি। তাই তো সামিত-জায়ানদের লড়াইটা কেবল প্রতিপক্ষের সঙ্গে নয়। জামাল-হামজাদের যে ডিফেন্ড করতে হয় সিন্ডিকেটের ধেয়ে আসা প্রবল জোরের শটকে।

এই সিন্ডিকেটকে যে গোড়া থেকে এবার উপড়ে ফেলতে হবে, ভাঙতে হবে মহাশক্তিধর এই দেয়াল। এই ফুটবলের জোয়ারকে যে জাগাতেই হবে। তবেই তো হামজাদের অশ্রুশিক্ত চোখে ঝলমল করে উঠবে এক চিলতে প্রশান্তি। ভক্তরা ভাসবেন সত্যিকার বিজয়ের আনন্দে।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link