একটা সময় ছিল যখন বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করে মুখে বিড়বিড় করতে করতে প্যাভিলিয়নে ফিরতেন। আমরা বুঝতাম সেঞ্চুরি করেও ক্ষান্ত হতে চাইতেন না কোহলি, ‘আরও আরও’ নামের সিড়ি বেয়ে অসীমে পা দিতে চান তিনি; পেরেওছিলেন বই কি, ২০১২ থেকে ২০১৬ অবধি কোহলির এমআরএফ কলার তুলতো সিডনি থেকে ইডেন, মেলবোর্ন থেকে ওয়াংখেড়ে।
আজকের কোহলি প্যাভিলিয়নে ফিরছেন মাথা নীচু করে, নামের পাশে এক অঙ্কের, কখনও দুই অঙ্কের অত্যন্ত কম রান রেখে। কোহলির ফেরার সময় ইডেন গার্ডেন্স চুপ হয়ে যায়, আহমেদাবাদ চুপ হয়ে যায়। আসলে জার্সি নম্বর আঠারো আমাদের যৌবনের উপবন, আমাদের কলার তোলার স্পিরিট।
লাসিথ মালিঙ্গাকে দেওয়া কভার ড্রাইভ, মিশেল জনসনকে দেওয়া ফ্লাইং কিস, কেন উইলিয়ামসকে দেওয়া ‘টিক মার্ক’ গুলো ইউটিউবের থাম্বনেইলে নয় বরং আমাদের জীবনে ভেসে থাকে সঞ্চিত উত্তাপ হয়ে। তাই কোহলি যতবার মাথা নীচু করে প্যাভিলিয়ন পৌঁছাবেন, আমরাও হয়তো থমকে যাবো ক্ষণিকের জন্য।
কিন্তু, এই থেমে যাওয়াটা, এই চুপ হয়ে যাওয়াটা, এই ব্যর্থ হয়ে যাওয়াটা আমাদের শেখাবে ক্রিকেটারেরা ঈশ্বর নন, কিন্তু তারা নিজেদের শৌর্যে ঈশ্বর হয়ে ওঠেন ক্ষণিকের জন্য, আমাদের সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করে দেন, এমনকি সেটা যদি অলৌকিকও হয় তবেও তা অপূর্ণ থাকে কই নইলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ওভাবেও কি ব্যাটিং করা যায়!
আবার ত্রিশোত্তর বয়সের কোঠায় এসে ক্ষণিকের জন্য হয়ে ওঠা ক্রিকেটের ডেমিগড বুঝিয়ে দেন তিনি মানুষই ছিলেন, শুধু ঐশ্বরিক ছিলো তাঁর প্রতিভা আর মেহনতটা। এই দ্বিতীয় কথাটা ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। এই খারাপ সময়, এই নীচু হয়ে ফিরে যাওয়াগুলো না আসলে আমরা হয়তো বুঝতামই না ‘ঐশ্বরিক কোহলি’র প্রতি বড্ডো বেশি চোখ দিতে গিয়ে ‘মেহনতি কোহলি’র উপর একেবারেই চোখ দিইনি আমরা।
তাই তাঁর একের পর এক শতরানকে আমরা ঐশ্বরিক দাগিয়ে দিয়েছি, মেহনতি বলিনি। ঐশ্বরিক সত্তা শুধুই দৌড়ে যায়, কিন্তু ওই মেহনতি সত্তা থামার পর দৌড়ায় আর পরের দৌড়ের শুরুর আগে থেমে থাকে মাত্র। চলুন, এবার ঐশ্বরিক কোহলির ট্যাগলাইন সরিয়ে মেহনতি কোহলির উপর চোখ রাখি।
কোহলি থেমে আছেন এখন, হয়তো দ্বিতীয় দৌড়টা শুরু করার জন্যই। চলুন তাঁর দৌড়ানোর পিছনে আমরাও বুক, কাঁধ, পা রাখি; চলুন অপেক্ষা করি – মেহনত যে বড্ড সময়বিলাসী।