দলের সেরা খেলোয়াড়। না, এই মুহূর্তে পারফরম করা খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম। তবুও তাঁকে বেঞ্চে বসে দেখতে হল ম্যাচ। এমনকি ইনিংসের মাঝে পানি হাতে বাইশ গজের দিকেও ছুটে গেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। সাথে অবশ্য কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও ছিলেন। তবে দলের এই সেরা খেলোয়াড়কে বসিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনটা কি? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে উত্তরটা সহজ।
এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ হংকং। এবারের আসরে তর্ক ছাড়াই অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল। এমন একটা দলের বিপক্ষে ভারত চাইলেই পারত তাঁর মূল একাদশের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের খেলিয়ে দিতে। তবে পরিবর্তন খুব একটা করা হল না। শুধু হার্দিকের জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হলেন ঋষাভ পান্ত।
এর পেছনে কারণটা অবশ্য স্পষ্ট। দলের বাকি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি। তাইতো কেবল একজন বদলি খেলোয়াড় ও পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই মাঠে নেমেছে ভারত। কিন্তু হার্দিকের মত একজন খেলোয়াড় নির্দ্বিধায় অন্য খেলোয়াড়দের জন্যে পানি নিয়ে মাঠে দৌড়ে যাচ্ছেন। দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার হওয়ার পরও। এই সংস্কৃতিটাই ভারতের ক্রিকেটকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে।
দলের প্রয়োজনে প্রতিটা খেলোয়াড় যেকোন পরিস্থিতিতে নিজের অবদানটুকু রাখার প্রচেষ্টা করে। অন্যদিকে টাইগার শিবিরে যেন সর্বদাই ভিন্নচিত্র। এখানে দলের হয়ে পারফরম না করলেও একাদশে জায়গাটা সুনিশ্চিত থাকে, শুধুমাত্র সিনিয়র ক্রিকেটার বলে। একাদশ থেকে সিনিয়র খেলোয়াড়দেরই বাদ দেওয়া যেন সবচেয়ে মুশকিল কাজ।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে বাজে পারফরম করে যাওয়া বোলারকেও বাদ দেওয়ার সাহসটুকু করতে পারে না টিম ম্যানেজমেন্ট। একজন ক্রমাগত খারাপ করে যাচ্ছেন, দলের প্রয়োজনে তিনি কোন কাজেই আসছেন না, তবুও তিনি অনায়াসে খেলে যান একাদশে। তিনি জানেন তিনি ‘অটোচয়েজ’, তাই নিজেকে একটু নতুন করে গড়ে তোলবার প্রয়াসটুকু নেই।
অথচ ভারতের দৃশ্যপট ভিন্ন। অভিজ্ঞতার প্রাধান্য সবখানেই দেওয়া হয়। তবে তাদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা নিজেদের পারফরমেন্সের বলেই জায়গাটা পেয়ে থাকেন। এখানে খেলোয়াড়রা পারফরম করেও সন্দিহান থাকেন পরবর্তী ম্যাচে আবার একাদশে সুযোগ পাবেন কি না। কেননা ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য নিজেদেরকে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখে না।
একটা দল মাঠের ক্রিকেটে ঠিক কেমন পারফরম করবে তাঁর অনেকটাই নির্ভর করে সে দলের সাংগঠনিক শক্তির উপর। বাংলাদেশ দলে দল সংশ্লিষ্টদের চাইতে প্রভাবটা খেলোয়াড়দেরই বেশি থাকে। হাজারটা সমালোচনা কিংবা তিরস্কারও তাদেরকে একাদশের বাইরে নিয়ে যেতে পারে না। এমন অভিজ্ঞতার আসলে খুব বেশি প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
দলের প্রয়োজন বুঝতে হবে। নিজের সীমাবদ্ধতাটাও বুঝতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়রা সে বিষয়গুলো বোঝেন। ব্যক্তি সাফল্যের আগে তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় দলের ফলাফল। এই হার্দিক পান্ডিয়া চাইলেই পারতেন নিজের পরিসংখ্যানটা সমৃদ্ধ করতে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলার জন্যে টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিতে পারতেন। তাতে টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতিবাদের জায়গা থাকত বলে মনে হয়না।
তবুও পরিকল্পনামাফিক তিনি দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে দলের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে নিজের কাজটুকু করে গেছেন। ড্রেসিং রুম থেকে দেওয়া যেকোন টোটকা পৌঁছে দিয়েছেন বাইশ গজে। শুধু মাঠের ক্রিকেটে পারফরম করলেই দলের জন্যে অবদান রাখা হয় না সেটাও তিনি বুঝিয়ে দিলেন।