ঘুমন্ত সিংহের ডেরায় জাগ্রত হাসারাঙ্গা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১২ ওভার বল করে ৪২ রানে নিয়েছেন ৮ উইকেট! ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের বিপক্ষে এমন বিধ্বংসী বোলিং তাও কিনা সিমন্স, গেইল, পুরান, পোলার্ডদের সামনে! হারতে হারতে ঘুমিয়ে পড়া সিংহকে জাগিয়ে তুলতে লংকানদের হয়ে বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে ইতিমধ্যেই সুনাম কুড়িয়েছেন বেশ। সাবেক ক্রিকেটাররা তাঁকে দেখতে চান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএলে)!

বলছিলাম লংকান সেনসেশন বোলিং অলরাউন্ডার ওয়াইন্দু হাসারাঙ্গার কথা! যাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাতামাতি হয় না বললেই চলে, অনেকটা আড়ালে থেকেই নিজেকে উপরে নিয়ে যাচ্ছেন এই স্পিন অলরাউন্ডার।

পুরো নাম পিনাদুয়াগে ওয়াইন্দু হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। জন্ম ১৯৯৭ সালের ২৯শে জুলাই, মাত্র ২৩ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম কামাচ্ছেন এই লংকান অলরাউন্ডার। গলের রিচমন্ড কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ক্রিকেটে মনযোগ দেন তিনি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে লঙ্কান দলের হয়ে খেলেছিলেন তিনি।

২০১৫-১৬ প্রিমিয়ার লিগ টুর্নামেন্টে তিনি লঙ্কানদের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক করেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ১৬-১৭ সেশনের জন্য তাকে ‘মোস্ট প্রমিজিং খেলোয়াড়’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএলে) ২০১৭-১৮ সেশনে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে তিনি খেলা শুরু করেন।

২০১৭ সালের ২রা জুলাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় হাসারঙ্গার। অভিষেক ম্যাচে জিম্বাবুয়ের শেষ তিন উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে অভিষেকে হ্যাট্রিক করেন হাসারাঙ্গা। তৃতীয় বোলার হিসেবে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেন তিনি! এছাড়া তিনি প্রথম লেগ স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করেন।

২০১৮ সালে লঙ্কানদের ৩৩ জনের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০১৯ সালের আগস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ডাক পান তিনি। এবং সেই সিরিজেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে একমাত্র স্পেশালিষ্ট স্পিনার হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি!

পুরো সিরিজে ৮ উইকেট নেন তিনি, সেই সাথে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে লঙ্কানরা টি-টোয়েন্টিতে জয় পায়। সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটে-বলে অনবদ্য পার্ফরমেন্সের জন্য ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরষ্কারও জেতেন হাসারঙ্গা।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে ডাক পান হাসারঙ্গা। ১৭১ রানে ৪ উইকেট নেন অভিষেক ম্যাচে। দ্বিতীয় ইনিংসেই তার মেইডেন ফিফটি করেন টেস্ট অভিষেকেই। এরপর সদ্য সমাপ্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দূর্দান্ত পার্ফরমেন্স দেখান বল হাতে! প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট লাভ করেন তিনি!

পরের ম্যাচে ৪ ওভারে ১৭ রানে নেন তিন উইকেট। এবং সবশেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট! তার দুর্দান্ত পার্ফরম্যান্স আইপিএলে তার মতো বোলার দল না পাওয়ায় অবাক হয়েছেন সাবেক বেশ কিছু ক্রিকেটার।

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৩ টি। ৩ ম্যাচে ৪ উইকেট আর ১ ফিফটিতে আছে ১৫৩ রান। ১৫ ওয়ানডেতে আছে ১৯০ রান ও ১৭টি উইকেট, এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ১২ ম্যাচে ১১৫ রান ও ১৬ উইকেট রয়েছে।

মাত্র ২৩ বছর বয়সেই নিজের স্পিন ভেলকিতে ২২ গজ মাতাচ্ছেন তিনি। এখনোতো শুরু, গ্রেট ক্রিকেটারদের কাতারে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ! অজন্তা মেন্ডিসের মতো অগাধ সম্ভাবনা নিয়ে আবার হারিয়ে যাবেন নাতো? নাকি মুরালি, হেরাথদের মতো নিজেকে নিয়ে যাবেন অনন্য উচ্চতায়! সেটা অবশ্য সময়ই বলে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link