অচলায়তন ভেঙে আসা ‘সুপার স্টার’

নাসিম শাহের পেসার হয়ে ওঠার যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১৫ বছর বয়সে। এই ফাস্ট বোলার আব্দুল কাদির অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন। তাঁর গুরু ছিলেন পাকিস্তানি স্পিন কিংবদন্তি স্পিনার আব্দুল কাদিরের ছেলে সুলেমান কাদির। তিনিই নাসিমকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আজকের নাসিম শাহ-তে পরিণত করেছেন।

এশিয়া কাপে খেলার জন্য নাসিম শাহ যখন দুবাইতে পাড়ি জামাচ্ছিলেন, তখন কোচ সুলেমান কাদির নাসিমকে একটি প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন। ‘প্রমিস মি নাসিম, ইউ উইল বি আ সুপারস্টার’ এই ছিল সেই প্রতিশ্রতি বাক্য।

নাসিমও গুরুকে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের সুপারস্টার হওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। সুলেমান কাদির তাঁকে এটাও বলেছিলেন আগামী ছয় মাস ভালো পারফর্ম করতে পারলে শাহীন আফ্রিদির মতো সুপারস্টার হতে পারবে সে। নাসিম কথা রেখেছেন। তিনি এই এশিয়া কাপের আসরে নিজের নামের পাশে সুপারস্টার তকমাটা অর্জন করে নিয়েছেন। তিনি এখন পাকিস্তানের ‘সুপার স্টার’ নাসিম শাহ! বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন সুপার স্টার নাসিম শাহ!

বয়সটা সবে উনিশ। অভিষেক টি- টোয়েন্টি ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে পেয়েছেন প্রতিপক্ষ হিসেবে। ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটারদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৪ ওভার বল করে ৬.৭৫ ইকোনমিতে তুলে নিয়েছিলেন লোকেশ রাহুল এবং সুরিয়াকুমার যাদবের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুইটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। তারপরের ম্যাচে হংকং এর সাথে মাত্র দুই ওভার বোলিং করে ৩.৫০ ইকোনমিতে তুলে নিয়েছেন দুইটি উইকেট।

এই টুর্নামেন্টের তৃতীয় প্রতিপক্ষ হিসেবে আবারও মুখোমুখি হয় ভারত- পাকিস্তান। এই ম্যাচেও একটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তরুণ এই পেসার। পুরো টুর্নামেন্টে বোলার নাসিম শাহ যতটা মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলো, কালকের এক ম্যাচেই ক্রিকেটবিশ্ব এই সুপারস্টারের ভিন্ন এক রূপ চাক্ষুষ করেছে।

ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করার ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইতিহাস গড়লেন এই তরুণ! নিজের নামের উত্তাপটা ছড়িয়েছেন বাইশ গজে। তবে এবার বল নয় ব্যাট হাতে। ৭ বলে দলের প্রয়োজন ১২ রান, ঠিক সেই মুহূর্তে দলের একবাত্র ভরসা ব্যাটার আসিফ আলীর পতন। আফগান ক্রিকেটারদের সাথে আসিফ আলীর হাতাহাতি হওয়ার অবস্থা, দৃশ্যটা অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে দেখলেন।

সেই ঘটনাই সম্ভবত গায়ে জেদটা চাপালো। নাসিম স্রেফ একজন বোলার, অলআউটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে হতাশ হয়ে হার মানতে পারতেন। কিন্তু নাসিম শাহ তো এই মঞ্চে এসেছেন সুপারস্টার হতে। দলের একেবারে ভঙ্গুর সময়ে তাই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ভিন্ন পরিকল্পনা আঁটলেন তিনি। সবটুকু শক্তি নিংড়ে দিলেন ব্যাটে, পরপর দুই বলে দুইটি বিশাল ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন।

এই ম্যাচে চার ব্লে নাসিম শাহ করেছেন চৌদ্দটি মূল্যবান রান, আর বল্য হাতে নিয়েছেন একটি উইকেট। ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি দশ বা এগারো নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দুবলে দুটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়েছেন।

নাসিম শাহ পাকিস্তানের হয়ে ১৩টি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ এবং চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। তার সংগ্রহ আছে মোট ৪৯টি আন্তর্জাতিক উইকেট। মাঝে চোট নিয়ে ছিলেন বেশ দুশ্চিন্তায়। এবছরই অভিষেক ঘটেছিল নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে, তারপর এশিয়া কাপ দিয়ে পা রাখলেন টি- টোয়েন্টির দুনিয়ায়। পারফরমেন্স দিয়ে জানান দিলেন এসেছেন বাজিমাত করতে,  তাঁর কোচের কাঙ্খিত ‘সুপারস্টার’ হতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link