টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রায় দরজায় কড়া নাড়ছে। ভারতের হাতে এর আগে মাত্র দুইটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ আসরের অন্যতম ‘ফেভারিট’ দল ভারত। ভারতের হয়েছে আবার মধুর সমস্যা। তাঁদের আইপিএলের মঞ্চেই প্রতিবছরই নতুন নতুন প্রতিভার উত্থান হয়। এতো এতো পারফর্মার থেকে কাকে রেখে কাকে বাছাই করবেন ভারতীয় নির্বাচকমণ্ডলী! বিশ্বকাপের সেই চূড়ান্ত ১৫ বাছাইয়ের কাজটি খুব একটা সহজ হবে না।
সম্প্রতি হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বে ভারত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে। দলের অনেক সিনিয়র তারকা অনুপস্থিত ছিল সে সিরিজে। সেখানে নবীণ ক্রিকেটার দীপক হুদা ও সাঞ্জু স্যামসন সবার নজর কেড়েছেন সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন দীপক। মঙ্গলবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও দেখিয়েছেন অসাধারণ ব্যাটিং ঝলক। তাঁর ব্যাটিং তাণ্ডবে বিপক্ষ বোলাররা খেই হারিয়ে ফেলে। টাইমিং এবং শক্তি দুটোই দেখা গেল তার খেলায়। অন্যদিকে সাঞ্জু স্যামসনও নিজের অর্ধশত রান পূর্ণ করেছেন। মাঠে উপস্থিত দর্শকদের বিনোদনের খোড়াক মিটিয়েছেন দু’জনে ভরপুর।
সাঞ্জু যখন দেখলেন তার তুলনায় দীপকের টাইমিং বেশি ভাল হচ্ছে, পারফেক্ট পার্টনারের মতো তখন দীপককে ছেড়ে দিলেন বড় শট খেলার জন্য। দুজনের পার্টনারশিপ হলো ১৭০ রানের। শেষ পর্যন্ত সাঞ্জু ৭৭ রান করে বোল্ড হলেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ৫৫ বলে নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেন দীপক হুদা। চতুর্থ ভারতীয় হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। এর আগে রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল এবং সুরেশ রাইনার শতরান আছে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে।
টি–টোয়েন্টিতে ভারতের সর্বকালের পার্টনারশিপের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন সাঞ্জু স্যামসন এবং দীপক হুদার জুটি। তাঁদের জুটি রোহিত শর্মা এবং লোকেশ রাহুলদের জুটি ছাড়িয়ে গেছে। রোহিত-রাহুল জুটি ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৬৫ যোগ করেছিলেন। স্যামসন ও হুদা দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৮৭ বলে ১৭৬ রান যোগ করেন।
সাঞ্জু স্যামসন এবং দীপক হুদার খেলাতে মুগ্ধ হয়েছেন ইংলিশ গ্রেট গ্রায়েম সোয়ান। দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের চার রানের জয়ের পরে সনি স্পোর্টসে দেয়া সাক্ষাৎকারে সোয়ান মত প্রকাশ করেন, ‘বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বিরাট কোহলী ও রোহিত শর্মাদের মতো কিছু বাঘা বাঘা ক্রিকেটার দলে ফিরবেন। এবং বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর দলে সত্যিই দুই- একটি শূন্যস্থান তৈরী হলেও আমি অবাক হবোনা। এবং সেই ঘাটতির জায়গাগুলোতে স্যামসন ও হুদা স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যথেষ্ট যোগ্যতা রাখেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ যদিও এটি ছোট পরিসরের মাঠ ছিল, কিন্তু স্যামসন ও হুদা যে শটগুলো খেলছিলেন, বল উড়ে যাচ্ছিল অনেক দূরে। তা প্রমাণ দিচ্ছিল তাঁরা বিশ্বমানের খেলোয়াড়।’
দীপক হুদাকে নিয়ে সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠান অনেক আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। ইরফান বলেছিলেন, ‘আধুনিক ক্রিকেটে বিশেষ করে টি–টোয়েন্টি ফরম্যাটে মিডল অর্ডারে একজন ভরসা করার মতো ব্যাটসম্যান প্রয়োজন ছিল ভারতের। দীপক হুদা সেই ভূমিকায় নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন।’
পাঠানের এই বাণী দীপকের জীবনে বিরাট মোটিভেটরের কাজ করেছে। এবার গ্রায়েম সোয়ানের প্রত্যাশার বাণী সাঞ্জু স্যামসন এবং দীপক হুদা দুজনকে নিজেদের জাত চেনাতে কাজে লাগবে বলে আশা করা যায়। ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা নিশ্চয়ই তাঁদের চমৎকার জুটির রেকর্ড দেখতে চাইবে ক্রিকেটের বাকি দুই ফরম্যাটেও।