মেসি ও একটি মুমূর্ষু বিশ্বকাপ স্বপ্ন

আর্জেন্টিনার আশার পারদ অনেক উঁচুতেই ছিল। বিশ্বকাপের যাত্রাটা এভাবে মোড় নেয়ার কথাই ছিল না। অন্তত আর্জেন্টিনা ফুটবল দল স্বপ্নেও ভাবেনি যে খোদ সৌদি আরবের কাছে হেরে তাঁদের বিশ্বকাপ যাত্রাই শঙ্কায় পড়বে।

এখন আর্জেন্টিনার সামনে বাঁচা মরার লড়াই। তাঁদের আসন্ন দুটি ম্যাচে মেক্সিকো এবং পোল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্যই জয় পেতে হবে। অথচ বিশ্বকাপের আসর শুরু হওয়ার আগে আর্জেন্টিনা দল এবং লিওনেল মেসিকে নিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপার জল্পনা-কল্পনা চলছিল। ফুটবল জাদুকর মেসির শেষ বিশ্বকাপ বলে এই বিশ্বকাপের মাহাত্ম্য আর্জেন্টাইন দলটি এবং ভক্তদের কাছেই অন্যরকম ছিল।

মেসির ঝুলিতে দশবার লা লিগা, সাতবার ব্যালন ডিঅর, চারবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, একটি অলিম্পিক স্বর্ণ ও একটি কোপা আমেরিকার শিরোপা রয়েছে। বাদবাকি বিশ্বকাপের শিরোপাটি ছিল মেসি ও তাঁর অধীন দলটির জন্য বড্ড আকাঙ্ক্ষিত বস্তু। বিশ্বকাপ শিরোপাবঞ্চিত থেকে মেসি ক্যারিয়ার শেষ করুক – এটি চায়নি অনেকেই।

মেসি নিজেও চাননি। তাছাড়া আর্জেন্টিনা দলটি বিশ্বকাপের আগ অবধি বেশ ভাল ফর্মে ছিল। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্ব আসরে পা রেখেছিল আলবিসেলেস্তেরা। এমনকি গেল বছর ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়নও হয় দলটি।

কিন্তু বিশ্বকাপ মিশনের শুরুর ধাক্কায় দলটির বিশ্বকাপ অবস্থান যেন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে কি ভুল আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপের স্বপ্ন থেকে ছিটকে যেতে পারেন মেসিরা, এই নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কপালে।

কাঠগড়ায় ‍উঠছেন কোচ লিওনেল স্ক্যালনি ও ক্লাব দল পিএসজিও। কারণ, বিশ্বকাপের আগেও জাতীয় দলের কথা বিবেচনায় প্যারিসের এই ক্লাবটি থেকে একটুও ছাড় পাননি মেসি। তাঁর বয়স ৩৫, এই সময়টায় ৯০ মিনিট পুরোদমে আগের মত ছন্দে খেলা তাঁর জন্য কঠিন।

অন্যদিকে, স্ক্যালনির দায় আছে। তাঁর দল সৌদি আরবের হাইলাইন রক্ষণ কৌশল ভাঙতে পারেনি মোটেও। ৪৫ মিনিটের মধ্যে সাতবার অফ সাইডের ফাঁদে পড়েছে। তাঁর প্ল্যান বি কি ছিল, নাকি আদৌ ছিল না – এসব বলারও লোকের অভাব নেই।

তবুও, মেসি ভক্তদের প্রিয়তমই রয়েছেন। এখনও মেসির ওপর তাদের আশা-ভরসা নির্ভর করে। মেসি নিজেও চাচ্ছেন দু:স্বপ্ন ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে। অন্তত সৌদির সাথে ম্যাচের পর দল নিয়ে হোটেলে ফেরার পথে সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বলা তাঁর কথাগুলো তাই প্রমাণ করে। তিনি বারবার বলেছেন, ‘লোকেরা বিশ্বাস করে এই দলটি তাঁদের হতাশ করবে না।’

ম্যাচের পরের দিন অনুশীলনের সময়ও তিনি সবাইকে এই বাণী মনে করিয়ে দিয়েছেন। আর্জেন্টাইন এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘সবকিছুই আমাদের উপর নির্ভর করছে। আমরা জানি যে জয় ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই। তবে আমরা এই ধরণের ম্যাচ আগেও খেলেছি, এখন আমাদের মাথা জলের উপরে তোলার মোক্ষম সময়।’

বিশ্বকাপে মেসিদের আর যে কয়টা ম্যাচ আছে – সবগুলোই কার্যত ফাইনাল। কারণ, একটা হারলেই শেষ হয়ে যাবে বিশ্বকাপ স্বপ্ন। আর সবগুলো ম্যাচের সবগুলোকেই ফাইনালের চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলতে পারা একমাত্র ফুটবলারটি হলেন ওই মেসিই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link