ক্রিকেটার থেকে অংকের মাস্টার!

পুরো নাম আদ্রিয়ান স্টুয়ার্ট রোলিন্স। এই ইংলিশ পেশায় ছিলেন  ক্রিকেটার। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন ক্রিকেটের রঙিন দুনিয়াকে পেরিয়ে বনে গেলেন কাঠখোট্টা এক অংকের মাস্টার! না, ভুল পড়েননি। ক্রিকেট মাঠকে বিদায় জানানো আদ্রিয়ান এখন পুরোদস্তর গনিতের শিক্ষক।

পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই চারকোণা চশমা পরিহিত এই ভদ্রলোকের প্রথম দর্শনে  কারোর মাথায়ই আসবে না ইনি এক কালে মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াতেন। যেন নেহায়েৎ সাধাসিধে এক মাস্টার মশাই। দেখলে কে বলবে, তিনিই এক সময় ছিলেন উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটার আর এখন তাঁর মাথায় অংকের ভাণ্ডার! কিভাবে আদ্রিয়ান রোলিন্স বাইশ গজের দুনিয়ার ভালোবাসা বাদ দিয়ে অংকে ভালোবাসা খুঁজে পেলেন সেই গল্পটাই বলি এবার।

যে কোন পেশাদার খেলোয়াড়ের জীবনে ইনজুরি এক অভিশাপের নাম । আদ্রিয়ান রোলিন্সের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার পেছেনের ভিলেনও ছিল এই ইনজুরি। রোলিন্সের পরিকল্পনা ছিল পয়ত্রিশ বছর বয়সে পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। কিন্তু জীবন কি আর সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী যায়! ২০০৩ সালে একটি ক্যাচের জন্য ডাইভ করার সময় তাঁর হাতের কব্জি খারাপভাবে ভেঙে যায়।

এই ইনজুরিটি তাঁকে আর ক্রিকেটের মাঠে ফিরতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি যখন ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ত্রিশ। তাঁর পুরো ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি, ১৫ টি সেঞ্চুরি এবং ৫০টিরও বেশি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। যদিও তাঁর ক্যারিয়ার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ ছিল।

তিনি ডার্বিশায়ার ও নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে খেলেছিলেন। তাঁর ভাই রবার্ট রোলিন্স ও পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন। তবে, তিনি বা তাঁর ভাইদের কেউেই যে বড় কোনো ক্রিকেটার ছিলেন না – সেটা বলাই বাহুল্য।

ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি লুটনের স্থানীয় স্কুলগুলিতে ক্রীড়া সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছেন, শিক্ষকদের শারীরিক ব্যায়াম দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দিতে সাহায্য করতেন। পাশাপাশি তিনি গণিত ও শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রির জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলেন।

স্টুয়ার্ট রোলিন্সের মতে, ‘ডিগ্রির পাশাপাশি স্কুলে কাজ করাটা আমাকে আমার জীবনের ফোকাস  খুঁজে নিতে সাহায্য করেছে। তখনই আমি টের পেলাম সারা জীবন আমি শিক্ষাক্ষেত্রে থাকতে চাই।’

ডিগ্রি শেষ করে তিনি একটি স্কুলে সপ্তাহে চার দিন শিক্ষকতা করা শুরু করলেন এবং পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকলেন। বর্তমানে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারে অবস্থিত রোলিন্স দ্য ভিঞ্চি একাডেমিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।

তাঁর অপূর্ণ ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে আফসোস করেন না তিনি। বরং তাঁর মতে জীবনের ওই অধ্যায়টি তাকে মানুষ হিসেবে আরও পরিপূর্ণ করেছে। তিনি বলেন ক্রিকেট তাঁকে ফোকাস, আবেগ, প্রতিশ্রুতি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে শিখিয়েছে।  তিনি শ্রেণিকক্ষে একই দায়িত্ব অনুভব করেন, যেখানে তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গণিত এবং খেলাধুলা শেখাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্ব খেলাধুলার (পেশাদার) চেয়ে একশো গুণ বেশি। স্কুলে আমার ভূমিকা হল তরুণদের জীবনকে আরও উজ্জীবিত করা।’

আদ্রিয়ান রোলিন্সের নজর এখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদটির দিকে। এই অনুপ্রেণার পেছনে অবদান তাঁর মায়ের। তাঁর মা রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যিনি পঁচিশ বছর ধরে শিক্ষকতার সাথে জড়িত। ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান। ক্রিকেট রোলিন্সকে খ্যাতি এনে দিলেও, শিক্ষকতা তাঁকে দিয়েছে আত্মতুষ্ঠি।

ইনজুরি হয়ত রোলিন্সের জীবনে মন্দের ভালো হয়েই এসেছিল। হয়তো, ইনজুরি না আসলে ক্যারিয়ারটা বড় হত,   কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম  হয়তো মিস করতো দারুণ একজন শিক্ষককে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link