ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ওয়েবসাইট দেখেছেন কখনো?
একটু কষ্ট করে এখনই একটা ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। আগে কখনো না দেখলে অবাক হয়ে আবিস্কার করবেন, ক্রিকেট বিষয়ক দুনিয়ার যে কোনো পেশাদার সংবাদ মাধ্যমের সাথে পাল্লা দিতে পারার মতো এক আয়োজন। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ-কানাডার খবর পর্যন্ত পাবেন সেখানে। পাবেন দুনিয়াখ্যাত সব কলামিস্টের লেখা, দুর্দান্ত সব বিশ্লেষন এবং ছবি ও ভিডিও দারুণ সব আয়োজন।
আচ্ছা, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কথা বাদ দিন। নবীন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইট বা ইউটিউবে একটা চক্কর দিয়ে আসুন। দেখতে পাবেন, কন্টেন্টের কোনো অভাব নেই। জাতীয় দল তো বটেই, বয়সভিত্তিক দলগুলোকে পর্যন্ত নিয়ে নানারকম আয়োজন, সংবাদ এবং ক্লিপিংস প্রতিদিন আপডেট হচ্ছে। তারাও ছুটে চলেছেন সময়ের সাথে।
তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কেমন করছে?
সে তো সাকিবের ধরে শহীদুলের মুন্ডু লাগানোর ঘটনা থেকেই বুঝতে পারলেন, কেমন ভাবে চলছে বিসিবির ওয়েবসাইট ও সোশাল মিডিয়াআউটলেটগুলো!
ওয়েবসাইটে নেই তেমন কোনো খবর, বিশ্লেষন বা কলামের তো প্রশ্নই আসে না। লাইভ স্কোর খুজে পেতে কষ্ট হয়। নিজেদের খেলার ক্লিপিংস খুজে পাবেন না। খুজে পাবেন না রোজকার খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে পাবেন না নিয়মিত আপডেট। পাবেন না চোখ জুড়ানো কোনো গ্রাফিক্সের কাজ। এভাবেই চলছে বিসিবি।
সর্বশেষ যে প্রতিষ্ঠানটি বিসিবির জন্য এই ‘তৃতীয় পক্ষ’ হিসেবে কাজ করতো, তারাও এই মুহূর্তে নেই। আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের সাথে চুক্তি শেষ সংস্থাটির। এখন তাই বিসিবির ফেসবুক ও টুইটার পেজগুলো রীতিমত খাঁ খাঁ করছে। চলতি ডিসেম্বর মাসে এখন অবধি কোনো আপডেটই নেই সেখানে।
দুনিয়ার অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ডের ডিজিটাল দুনিয়ায় অংশগ্রহণ সহযোগী দেশগুলোর চেয়েও করুণ। তাদের যেন আর আধুনিক হয়ে ওঠা হচ্ছেই না। অবশ্য অবশেষে আশার কথা শুনাচ্ছে বিসিবি। তারা বলছে, এই সময়ে এসে তাদের এই ডিজিটাল মাধ্যমগুলো যেভাবে চলেছে, তাতে তারা নিজেরাও ঘোরতর অসন্তুষ্ট। আর তৃতীয় পক্ষের মারফত নয়। এবার নিজেরাই আধুনিক একটা টিম ও যন্ত্রপাতি নিয়ে আধুনিক এই প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে চায় বিসিবি। অন্তত তেমনটাই বলছিলেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
বিসিবির ডিজিটাল দুনিয়ায় চলা কখনোই খুব স্মার্ট ছিলো তা বলা যাবে না। একসময় এক বোর্ড পরিচালক নিজের একটা টিম দিয়ে কিছু কাজ করাতেন। এরপর বিসিবি কখনো কখনো এক দুই জন কর্মী দিয়ে কাজ শুরু করিয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ কয়েক বছর এই পুরো ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তারা একটা অর্থের বিনিময়ে একটা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে দেয়।
আর এই সময়ই বিসিবি তার মনমত কাজ পায়নি বলে বলছিলেন জালাল ইউনুস, ‘আসলে সোশাল মিডিয়াগুলো আগে তো এখনকার মত গুরুত্বপূর্ন ছিলো না। আমরা বা কেউই একটা সময় এর গুরুত্ব বুঝতাম না। পরে এটাকে মানসম্মত করার জন্যই আমরা তৃতীয় পক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেটা পারেননি। আমি পরিষ্কার করে বলি, যেভাবে এতোদিন চলেছে, তাতে আমরা মোটেও হ্যাপি নই। অনেক ভালো করার সুযোগ ছিলো। সেটার ধারেকাছেও ছিলাম না আমরা।’
তবে এবার বিসিবি একটু অন্যরকম করে ভাবছে। ওয়েবসাইট ও সোশাল মিডিয়া নিজের হাতেই রাখার চিন্তা করছে তারা। এ জন্য শক্তিশালী একটা দল গঠন করে কাজ করতে চায় বিসিবি। জালার ইউনুস বলছিলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতই কাজটা শুরু করে দেবো। আমাদের নিজস্ব রিপোর্টার, ফটো সাংবাদিক, ভিডিও টিম, কন্টেন্ট এডিটিং টিম থাকবে। আমরা দেশের সর্বাধুনিক মানের কাজ করতে চাই। আমাদের নতুন কমিটির কাজগুলো বুঝে পেলেই আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করে দেবো। আমরা অন্য কারো ওপর ভরসা করতে চাই না।’
জালাল ইউনুস মনে করেন, এই ডিজিটাল দুনিয়া তাদের জন্য একটা সম্ভাবনার দিগন্তও হতে পারে। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের ভিউয়ার আছে, কনজুমার আছে। আমাদের প্রতিটা আউটলেটে দেখবেন অনেক অনেক মানুষ আছেন। দেশের মানুষ তো ক্রিকেট ভালোবাসে। ফলে এটা খুব সম্ভাবনাময় একটা খাত। আমরা ভালো পারফরম করতে পারলে এখান থেকে অনেক রেভিউ জেনারেট করাও সম্ভব। ফলে আমরা দ্রুতই এই কাজটা নিজেরা শুরু করে দেবো।’