জাসপ্রিত বুমরাহ, পেসের সাথে সুইংয়ের ছোঁয়ায় আগ্রাসী রূপায়ণ

ইনজুরির কারণে গত বছরের অর্ধেকটা সময়ই মাঠের বাইরে ছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। লাল বলের ক্রিকেটে একবারই মাত্র দেখা গিয়েছে। তাও আবার সেটিও বছরে শেষ দিকে বক্সিং ডে টেস্টে। প্রায় ১৫ মাস বাদে টেস্ট ক্রিকেটে সেই ‘ফেরা’টা অবশ্য মন্দ হয়নি এ পেসারের। এক ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে  প্রত্যাবর্তনের মঞ্চে ঠিকই প্রমাণ করেছিলেন তিনি।

ওই টেস্টের ঠিক পরের টেস্টেই ডারবানে প্রোটিয়া ব্যাটার উপর রীতিমত গোলা ছুঁড়েছিলেন বুমরাহ। মাত্র দেড় দিনেই শেষ হওয়া ম্যাচে এক ইনিংসে ৬ উইকেটসহ সব মিলিয়ে দুই ইনিংসে ৮ উইকেট নেন ভারতীয় এ পেসার। আর তাতেই লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার সিরিজেই দারুণ এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখেন বুমরাহ।

তবে এরপরেও প্রশ্ন উঠেছিল, প্রোটিয়াদের পেস স্বর্গে সফল বুমরাহ কি ভারতীয় কন্ডিশনে লাল বলের ক্রিকেটে জ্বলে উঠতে পারবেন? সেই প্রশ্নের অবশেষে উত্তর মিলেছে বটে। হায়দ্রাবাদ টেস্টে এ পেসার নিয়েছেন ৬ টি উইকেট। পুরো ম্যাচেই যার সুইং, রিভার্স সুইংয়ে রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল ইংলিশ ব্যাটাররা। বোঝাই যাচ্ছে, ঘরের মাটিতে টেস্ট সিরিজের জন্য নিজেকে ভালই প্রস্তুত করেছেন এ পেসার।

বুমরাহ যে নিজেকে মেলে ধরার জন্য আলাদা কাজ করেছেন, তার সত্যতা মিলেছে বোলিং কোচ মামব্রের মুখ থেকেই। তাঁর মতে, বিদেশের মাটিতে বুমরাহ কী করতে পারে, তা নিয়ে সবাই অবগত। তবে চ্যালেঞ্জ ছিল নিজের মাটিতে প্রমাণ। বুমরাহ সেটিই করে দেখিয়েছে। মূলত ঘরের মাটিতে সে টেস্টই খেলেছে কম।

মামব্রে অবশ্য ভুল কিছু বলেননি। ৩৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২৮ টা ম্যাচই তিনি খেলেছেন বিদেশের মাটিতে। আর তাতে ৮ বার ফাইফারের দেখা পেয়েছেন এ পেসার। ভারতের মাটিতে যে সংখ্যাটা ১। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজটা এক রকম চ্যালেঞ্জের মঞ্চই ছিল বুমরাহর জন্য। তবে সেই চ্যালেঞ্জ তিনি উতরে গেছেন দারুণ ভাবেই।

প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের বোলিংয়ে ছাপিয়ে গিয়েছেন প্রথম ইনিংসকেও। চার চারটা উইকেট নেন একাই। যার মধ্যে রুটের উইকেট বলতে গেলে ম্যাচের ভাবমূর্তিই পাল্টে দিয়েছিল। নিজেই স্বীকার করেছেন স্বয়ং রুটও। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে এ ব্যাটার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাকে আউট করেই ম্যাচটা সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেয় বুমরাহ। হ্যাঁ, আউট হওয়ার পর আমার একটু খারাপ লেগেছিল ঠিকই কারণ আমি ওর স্পেল পুরোপুরি খেলার সুযোগ পাইনি বলে। তবে দিনের শেষে আমি এটাই বলবো যে ও একজন বিধ্বংসী বোলার। আজ ওর আর আমার লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ও ১-০তে এগিয়ে।’

গতি জাসপ্রিত বুমরাহর সহজাত প্রতিভা। তবে চলতি সিরিজে যেভাবে সুইং, রিভার্স সুইংয়ের পসরা সাজাচ্ছেন তাতে লাল বলের ক্রিকেটেও একটা সম্পদ পেতে যাচ্ছে ভারত। যে সম্পদটার নাম হলো, বুমরাহ। চলতি বছরে ২ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে শুরুটা ভালই করলেন এ পেসার। এখন দেখার পালা, বাকি সময়টায় নিজের আগ্রাসী রূপ কতটা ধারণ করতে পারে এ পেসার।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link