ভারতীয় ক্রিকেটের বেঞ্চ শক্তি যেকোনো দেশের জন্য ঈর্ষান্বিত করার জন্য যথেষ্ঠ। জাতীয় দলের কোনো ক্রিকেটার ইনজুরিজনিত কারনে কিংবা অন্য কোনো কারণে জাতীয় দলের বাইরে চলে গেলে সেখানে নতুন কোনো ক্রিকেটারকে সুযোগ দিলে দূর্দান্ত পারফর্ম করবে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এটা কি প্রতিভা নাকি বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রমের ফল সেটাই বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়কর।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় দলে বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা গেছে যারা বেশ দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। তাদের সেই সাফল্যের রহস্যে নিয়ে খেলা ৭১ এর আজকের এই আয়োজন।
- শুভমান গিল
শুভমান গিলের টেস্টে অভিষেক হয়েছিলো এমন সময়ে যখন অন্য ভারতীয় ওপেনাররা নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলো। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের মাটিতে দূর্দান্ত পেস আক্রমণ এবং ভারতের মাটিতে র্যাঙ্ক টার্নার উইকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেছিলেন তিনি।
এখন পর্যন্ত সাত টেস্ট খেলে ৩৪.৩৬ গড় এবং তিন হাফ সেঞ্চুরিতে ব্যাট করছেন। এই তালিকার অন্যসব ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন নিয়মিত ক্রিকেটারদের ইনজুরির কারণে। সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন শুভমান গিল। তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন পৃথী শ এবং মায়াঙ্ক আগারওয়ালের খারাপ পারফর্মেন্সের জন্য।
- সাফল্যের কারণ
শুভমান গিল সাফল্যের প্রধান কারণ ভারতের বিভিন্ন দলের হয়ে প্রচুর বিদেশ সফর এবং ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভারত অনুর্দ্ধ ১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রীতিমত আধিপত্য বিস্তার করেন। এখান থেকেই শুরু ২০১৮ অনুর্দ্ধ ১৯ বিশ্বকাপে ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্টের। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দ্বিশতক হাঁকান তিনি।
টেস্ট দলে অভিষেকের আগে শুভমান গিল মাত্র ২৩ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি এবং ১১ হাফ সেঞ্চুরি করেন। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে তিনি তিনটি ভিন্ন মহাদেশে সেঞ্চুরি করেন। এছাড়াও ভারত ‘এ’ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড সফরের সময় ভারতীয় দলের সাথে বেশ ভালো সময় কাটান তিনি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের নেটে মোকাবিলা করেন প্যাট কামিন্স, সুনীল নারিন এবং লুকি ফার্গুসনের মত বোলারদের। এর বাইরে আইপিএলে খেলেছেন একজন ওপেনার হিসেবে। এর ফলে বিশ্বের সেরা বোলারদের মোকাবিলা করার সুযোগ হয়েছিলো। এর কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক্ ক্রিকেটে এসে বেশ দ্রুতই মানিয়ে নিতে পেরেছেন।
- মোহাম্মদ সিরাজ
সম্প্রতি শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অভিষেক হয় মোহাম্মদ সিরাজের। সিরিজ চলাকালীন সময়ে তাঁর বাবা মারা যান। এই সিরিজে তিনি নিজের শোককে শক্তিতে পরিণত করেন। এই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক হয় সিরাজের। সিরিজ শেষে তিনিই ছিলেন সিরিজের সেরা পেসার।
এই সিরিজের ব্রিসবেন টেস্টে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। এখন পর্যন্ত পাঁচ টেস্ট খেলে ২৮.২৫ গড়ে শিকার করেছেন ১৬ উইকেট। তাঁর দূর্দান্ত বোলিং করার দক্ষতা এবং নিয়মিত পারফর্ম করার দক্ষতার কারণে দলের নিয়মিত পেসারদের ইনজুরির কারণে দল তাঁর উপর ভরসা করতে পেরেছিলো।
- সাফল্যের কারণ
যদিও বেশিরভাগ ক্রিকেটার সমর্থকরা বলবেন আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এবং রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু হয়ে দূর্দান্ত পারফর্ম তাকে জাতীয় দলে নিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে রাজকোটে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তাঁর। বেশ কয়েক মৌসুম থেকেই লাল বলে বেশ দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। এই সময়ে লাল বলের সেরা পেসার ছিলেন। তিনি বলে বেশ সুইং দিতে পারেন এবং যথেষ্ট বাউন্স দিতে পারেন।
টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হবার আগে মাত্র ৩৮ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। এই সময়ে নিজের স্কিল গুলোকে বেশ ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ তিন মৌসুম ভারত ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট সফর করেছেন। আর এই সময়ের মধ্যে তিনি শিকার করেছেন ১৩২ উইকেট। দেশের বাইরের বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলে নিজেকে বেশ ভালোভাবেই ঝালিয়ে নিয়েছেন তিনি।
- থাঙ্গারাসু নটরাজন
সেপ্টেম্বর ২০২০ এর আগে তাকে কেউ জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করতে পারেনি। ২০২০ আইপিএলের দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণে জাতীয় দলের ডাক পেতে সময় লাগেনি তাঁর। বিশেষ করে ২০২০ সালের আইপিএলের ডেথ ওভারে করা দূর্দান্ত পারফর্মেন্সে তাকে জাতীয় দলে টেনে নিয়ে আসে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে চার ম্যাচ খেলে শিকার করেন আট উইকেট। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট দলের সাথে ছিলেন নেট বোলার হিসেবে। কিন্তু জাতীয় দলের নিয়মিত পেসারদের ইনজুরির কারণে টেস্ট দলেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ব্রিসবেনে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচে শিকার করেন তিন উইকেট।
- সাফল্যে কারণ
তাঁর সাবেক কোচের মতে শৃঙ্খলা তাকে টেপ টেনিস ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়ে এসেছে। সিরাজের মতই ২০১৭ সালের আইপিএল সুযোগ পান তিনি। তবে সিরাজের মত সব ফরম্যাটে নজর কাড়তে পারেননি তিনি। তিনি সফল ছিলেন শুধু মাত্র টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
তামিলনাডু প্রিমিয়ার লিগে (টিএনপিএল) ম্যাচের শেষ ওভারে ছয় বলে ছয়টি ইয়র্কার দিয়ে মূলত নজর কাড়েন সবার। তাঁর দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণে তামিলনাডু দল জিতে নেয় ২০১৯ মৌসুমের বিজয় হাজারে ট্রফি এবং ২০২০ সালের সৈয়দ মোশতাক আলি ট্রফি। নটরাজন নিয়মিতই ইয়র্কারের সাথে গতি দিতে পারেন। যা প্রধান অস্ত্র হিসেবে কাজ করে।এই অস্ত্রের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছেন টি-নটরাজন।
- ঈশান কিষাণ
রোহিত শর্মা টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে বিশ্রাম নিলে এবং শিখর ধাওয়ান টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়লে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে ওপেনিং করার সুযোগ পান ঈষান কিষাণ। ম্যাচ শেষে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার নেন তিনি। প্রথম টি-টোয়েন্টি হেরে বেশ চাপে ছিলো ভারত। সেই সময় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ঘটে ইষাণ কিষাণের। ঈশান অভিষেক ম্যাচে পাঁচ চার এবং চার ছক্কায় ৩২ বলে ৫৬ রানের একটি ইনিংস খেলেন।
এই ম্যাচে তাঁর ওপেনিং সঙ্গী লোকেশ রাহুল প্রথম ওভারেই আউট হয়ে যান। চাপের মুখে বেশ দূর্দান্ত খেলেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভালো খেলতে পারেননি তিনি। মাত্র ৪ রান করেই আউট হন। সাথে একই ম্যাচ ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে চলে যান ঈষান কিষাণ। তাকে এই বছরে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
- সাফল্যে কারণ
২০১৮ সালে গুজরাট লায়ন্স থেকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে চলে আসা টা ঈষান কিষাণের জন্য বেশ সাফল্যের একটা বিষয় ছিলো। এখানে এসে বেশ নিয়মিতই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এছাড়া গুজরাট লায়ন্সে যে পজিশনে ব্যাট করতেন তাঁর থেকে বেশ উপরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে। বিশ্বের সেরা ফ্রাঞ্চাইজি লিগে স্থায়ী হবার জন্য তিনি স্বাভাবিক স্ট্রোক খেলার থেকে বড় শট খেলার প্রতি মনযোগ দেন।
এর ফলে তিনি বেশ দ্রুতই সাফল্য লাভ করেন। ঈশান সব সময়ই নির্ভীক ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন। নির্ভীক ক্রিকেটের সাথে অভিজ্ঞতা যোগ হবার কারণে বেশ দ্রুতই সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও রোহিত শর্মা, কিরণ পোলার্ড, মাহেলা জয়াবর্ধনদের মত ক্রিকেটারদের সাথে থাকা এবং নেটে জাসপ্রিত বুমরাহ, ট্রেন্ট বোল্টদের মত বোলারদের কে খেলার কারণে বেশ ভয়ডরহীন হয়ে উঠেছেন তিনি। এছাড়াও ভারত ‘এ’ দলের হয়ে নিয়মিত সীমত ওভারের ক্রিকেটে খেলার কারণেও বেশ কার্যকর হয়ে উঠেছেন তিনি।
- ওয়াশিংটন সুন্দর
অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলে ইনজুরি সমস্যার কারণে ওয়াশিংটন সুন্দরকে টেস্ট অভিষেক করিয়েছিলো ভারত। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর বায়ো বাবল নীতির কারণে তাকে দলে রেখে দিয়েছিলো ভারতীয় দল ম্যানেজমেন্ট। অবশেষে এই সিরিজের শেষ টেস্টে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর। রবিচন্দন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজার ইনজুরির কারণে সুযোগ পান ওয়াশিংটন সুন্দর।
এই সিরিজের আগে সর্বশেষ লাল বলে মাঠে নেমেছিলো ২০১৭ সালের নভেম্বরে। তারপরও ব্রিসবেন টেস্টে বল হাতে চার উইকেট এবং ব্যাট হাতে হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করেছেন তিনি। এরপরের ইংল্যান্ড সিরিজেও তিন ম্যাচ খেলেছেন তিনি। চেন্নাইয়ের র্যাঙ্কটার্নার উইকেটে করেছিলেন ৮৫ রান। এছাড়াও আহমেদাবাদের র্যাঙ্কটার্নার উইকেটেও ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এখন পর্যন্ত টেস্টে ব্যাট করেছেন ছয় ইনিংসে। এই ছয় ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং গড় ৬৬.২৫।
- সাফল্যের কারণ
ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হবার আগের থেকেই তাকে বিবেচনা করা হয়েছিলো ভারতের ক্রিকেটে অন্যতম সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার হিসেবে। তামিলনাডু প্রিমিয়ার লিগে (টিএনপিএল) দলের হয়ে ব্যাট হাতে ওপেন করেছিলেন তিনি। এছাড়াও আইপিএলে বল হাতে ইনিংস শুরু করেছেন তিনি।
ওয়াশিংটন সুন্দরের এই কার্যক্রম তাকে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু, তামিলনাডু এবং ভারতীয় দলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে। এই কারণেই তাকে একজন সত্যিকারে অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও সে আইপিএল কিংবা জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে কখনো বেশি ব্যাট করার সুযোগ পাননি। সুযোগের অভাবে তাঁর ব্যাটিংয়ের সুযোগ কেউ কখনো নিতে পারেনি। তাঁর ব্যাটিং টেকনিক্যালি বেশ স্বচ্ছ।
- নবদ্বীপ সাইনি
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অভিষেক হয়েছিলো তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক আরো আগে,২০১৯ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দলের নিয়মিত পেসারদের ইনজুরির কারণে দলে সুযোগ পান তিনি। সিরিজের শেষ দুই টেস্ট খেলেন তিনি। দুই টেস্টে ৪৩ গড়ে শিকার করেছিলেন ৪ উইকেট।
এই পরিসংখ্যান দেখে তাকে বিচার করা যাবে না। এটা গুরত্বপূর্ন যে নিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে গ্রেইন স্ট্রেইনের ইনজুরিতে পড়েন তিনি। আর সেই ইনজুরি নিয়েই তিনি খেলেছিলেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মাঠে কোনো সিনিয়র পেসারকে পাননি। কারণ তারা সবাই ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন। এই কারণেই তাঁর এই পারফর্মেন্সকে বেশ এগিয়ে রাখতে হবে।
- সাফল্যের কারণ
নবদ্বীপ সাইনি ভারতের ক্রিকেট লাল বলে আধিপত্য করা একজন ক্রিকেটার। ২০১৪ সাল থেকে রঞ্জি দল দিল্লির হয়ে দূর্দান্ত পারফর্ম করছেন। ইশান্ত শর্মা এবং তিনি মিলে ২০১৭ সালের রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে তোলেন দিল্লিকে। ২০১৮ সাল থেকে দেওধর ট্রফিতে ভারতের ক্রিকেটের বড় বড় তারকাদের সাথে খেলে এগিয়েছেন।
এছাড়াও ভারত ‘এ’ দলের হয়েও নিয়মিতই খেলেছেন তিনি। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে বিপক্ষ দলকে বেশ ভুগিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারত দলের স্ট্যান্ড বাই ক্রিকেটার হিসেবেও ছিলেন। তখনও নিজেকে বেশ শাণিত করেছেন তিনি। এছাড়াও আইপিএলে ব্যাঙ্গালুরুর অনিভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণও তাকে শাণিত করেছে। টেস্টে অভিষেকের আগে মাত্র ৪৬ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
- অক্ষর প্যাটেল
ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টে ২৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এই সময়ে টেস্ট বোলিংয়ে তাঁর গড় ছিলো ১০.৫৯। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টে এটাই যে কোনো বোলারের জন্য সেরা অর্জন। প্রায় আট বছর আগে অক্ষর প্যাটেলের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে প্রথম দুই টেস্টে ইনজুরিতে পড়েছিলেন তিনি। এর কারণে সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ইনজুরির কারণে টেস্টে খেলতে পারেন নি তিনি। পরের দুই টেস্টে সুযোগ পেয়েই নিজের সেরা পারফর্মেন্স করেন তিনি। তাঁর এই দূর্দান্ত পারফর্মেন্স দলে রবীন্দ্র জাদেজার অনুপস্থিতি প্রভাব ফেলেনি।
- সাফল্যের কারণ
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তার পারফর্ম ছিলো বেশ ভালো। যদিও এই উইকেট ছিলো শতভাগ স্পিন সহায়ক। কিন্তু গুজরাটের এই ক্রিকেটার নিয়মিতই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করে গেছেন। যখন ভারতীয় দলের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের দলে ছিলেন নাহ তখন নিয়মিতই গুজরাটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতো। অক্ষর প্যাটেল বলে বেশ টার্ন করাতে পারেন না।
তবে বেশ ধারাবাহিক ভাবে একই জায়গায় বল ফেলতে পারেন এবং বলে সুক্ষ্ম পরিবর্তন আনতে পারেন তিনি। আর এই প্রতিভার কারণেই সহজেই সাফল্য পান তিনি। তাঁর এই বৈশিষ্ট্যই তাঁকে বিশেষ ক্রিকেটার বানিয়েছে। তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহামের হয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিতই আইপিএল খেলছেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়। যদি জাদেজা আবারো নিজের ফর্মে ফিরতে পারেন তাহলে আবারো টেস্ট দলে জায়গা হারাবেন অক্ষর প্যাটেল।
- ক্রুনাল পান্ডিয়া
সম্প্রতিক সময়ে ভারতের হয়ে বেশ আবেগ ঘন একটি অভিষেক হয়েছে ক্রুনাল পান্ডিয়ার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচে ব্যাটিংয়ে আসেন ৪১ তম ওভারে। ব্যাটিংয়ে তিনি ৩১ বলে করেন ৫৮ রান। ব্যাট হাতে তিনি তাঁর ছোটো ভাই হার্দিক পান্ডিয়া এবং রিশভ পন্থের মত স্টাইলে ব্যাটিং করেন। বল হাতে ৫৯ রানে ১ উইকেট নেন তিনি। বল হাতে তিনি রবীন্দ্র জাদেজার মত কার্যকর।
সাফল্যে কারণ
ক্রুনাল পান্ডিয়া এবং হার্দিক পান্ডিয়াকে প্রথম খুঁজে পায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের স্কাউটরা। বারোদা থেকে তাদেরকে খুঁজে বের করেন স্কাউটরা। এই জুটি বছরের পর বছর ধরে নিজেদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলো। ক্রুনাল পান্ডিয়া বেশি পরিচিত ছিলো তাঁর স্মার্ট ক্রিকেটের জন্য। বিশেষ করে বল হাতে তিনি ছিলেন বেশ ভালো।
বোলিংয়ের পাশাপাশি তিনি ব্যাট হাতেও নিজেকে কার্যকর করে তুলতে পরিশ্রম করছেন। আইপিএলের তিনটি শিরোপা জেতার জন্য মুম্বাই দলে বেশ কার্যকর বোলার ছিলেন। এছাড়াও মানসিক ভাবে বেশ শক্ত ছিলেন তিনি। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। এখানে প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে কেন এতো দিন পরে ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হল। সর্বশেষ বিজয় হাজারে ট্রফিতে ছয় ম্যাচে ১২৯.৩৩ গড়ে করেছিলেন ৩৮৮ রান। তাঁর এই দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণে জাতীয় দলে সহজেই সুযোগ পেয়েছেন ।
- সুরিয়া কুমার যাদব
যদিও অভিষেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি তবে ভারতের হয়ে পরবর্তী দুই ম্যাচে দূর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তিনি তাঁর খেলা প্রথম ইনিংসে তিনি ৩১ বলে ৫৭ রান করেন। যখন কিনা রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুল ব্যর্থ হয়েছিলেন। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কারণে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতে নেন তিনি। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ১৭ বলে ৩২ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন।
- সাফল্যের কারণ
সুরিয়া কুমার যাদব মানসিকভাবে একজন ম্যাচ জয়ী ক্রিকেটার। তিনি বেশ দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছে। মাঝে ব্যাটিংয়ে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বেশ পিছিয়ে পড়েছিলেন।
যখন আইপিএলে কলকাতা থেকে মুম্বাইয়ে আসেন তখন আবার দুর্দান্ত পারফর্ম করা শুরু করেন। এর ফলে সে একজন পরিপূর্ন ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে উঠেন। এখানে এসে তিনি সঠিকভাবে পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে উঠেন। সাথে একজন ম্যাচ উইনার ক্রিকেটার হয়ে উঠেন।
- প্রসিধ কৃষ্ণ
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জয়ে বড় অবদান ছিলো অভিষিক্ত ক্রিকেটার প্রসিধ কৃষ্ণর। প্রথম ১৫ ওভারে ব্যাট হাতে তান্ডব চালান ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। জেসন রায়কে ফিরিয়ে ইংলিশ ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামানো শুরু করেন। এরপর একে একে বেন স্টোকস, স্যাম বিলিংস এবং টম কুরানকে আউট করেন তিনি।
চার উইকেট নিয়ে প্রথম ওয়ানডের ম্যান অফ দ্যা সিরিজ নির্বাচিত হন তিনি। প্রথম তিন ওভারে বেশ খারাপ বোলিং করলেও পরবর্তীতে স্বকীয় ভূমিকায় ফিরে আসেন প্রসিধ কৃষ্ণ। ভারতের অভিষিক্ত ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগার হিসেবে ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
- সাফল্যের কারণ
প্রসিধ কৃষ্ণ বিশ্বাস করেন ‘ধারাবাহিকতা হলো সেরা অস্ত্র’। তিনি বিজয় হাজারে ট্রফির ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ বিজয় ট্রফিতে দূর্দান্ত পারফর্ম করেন। এই দুই মৌসুমে ৩০ উইকেট শিকার করেন তিনি। এই উইকেটগুলো বেশিরভাগই নিয়েছেন কর্ণাটকের হয়ে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সময় তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা পারফর্মারে পরিণত হন।
আর এখান থেকেই ম্যাচ জয়ী পারফর্ম করা শুরু করেন। তাঁর সবচেয়ে স্মরণী পারফর্মেন্স হলো ৩৭ রানে ৩ উইকেট। এটি ছিলো ২০১৭-১৮ মৌসুমে বিজয় হাজারে ট্রফিতে কর্নাটকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ। কর্নাটক জাতীয় দলে তাঁর ডাক নাম ছিলো স্কিডি। দ্রুত গতিতে বোলিং করতে পারার কারণে তাঁকে এই নামে ডাকা হয়েছিলো। তিনি বোলিং করার জন্য নিজের ফিটনেস নিয়ে বেশ ভালো কাজ করেছিলেন। ২০১৯-২০ মৌসুমে তিনি ছিলেন বেশ সেরা বোলার।