বুমরাহ আর ইনজুরি: দ্য লাভ স্টোরি

‘পেসারদের ইনজুরি বন্ধুর মতো, আসে আবার চলে যায়’ – এই ক’দিন আগেই এমন কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের উঠতি পেসার হাসান মাহমুদ। যথার্থই বলেছিলেন তিনি। সত্যিকার অর্থেই পেসার আর ইনজুরি, দুুটি শব্দই যেন বন্ধুর মতো। বন্ধু হয়ে ‘বন্ধুর’ মতো একে অপরকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে। তবে এমন বন্ধুত্বে ক্ষতিটা হয় নিজের, একই সাথে দেশেরও। ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপে জাসপ্রিত বুমরাহ না থাকায় ভারতকে ভুগতে হয়েছিল বেশ। 

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ দিয়ে আবারও ফিরেছিলেন ক্রিকেটে। কিন্তু এক ম্যাচ না যেতেই আবারও ইনজুরির কবলে পড়েন তিনি। বুমরাহর বিশ্বকাপ খেলার অনিশ্চয়তা নিয়ে ভারত শিবিরে তাই এখন চিন্তার অন্ত নেই। তবে এমন না যে বুমরাহ প্রথমবারের মতো ইনজুরিতে পড়ে ভারতকে সার্ভিস দিতে পারছেন না। এর আগেও তিনি ইনজুরিতে পড়েছেন এবং প্রতি বারেই লম্বা একটা সময় মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে তাকে। ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরেই কোনো না কোনো সময় তিনি ইনজুড়িদে পড়েছেন। 

জাসপ্রিত বুমরাহ প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ইনজুরির কবলে পড়েছিলেন ২০১৮ সালে। সে বার প্রায় ৩ মাসের জন্য আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল ভারত। তো আয়ারল্যান্ডের সাথে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে বাম হাতের আঙুলে আঘাত পান বুমরাহ। আর ঐ ফ্র্যাকচারেই তিন সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। 

তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই টেস্টের পরেই তৃতীয় টেস্ট থেকে মাঠে ফেরেন বুমরাহ। তিন ম্যাচ নেন ১৪ উইকেট। এর মধ্যে ট্রেন্ট ব্রিজে ভারতের একমাত্র জয় পাওয়া ম্যাচে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন বুমরাহ। 

সাল ২০১৯। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সেবার হরভরজন সিং, ইরফান পাঠানের পর তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি গড়েন বুমরাহ। তবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ থেকে ভারতে ফিরে এসেই আবার নতুন ইনজুরিতে পড়েন তিনি। এবার ইনজুরিতে পড়েন পিঠের নিচ অংশে ফ্র্যাকচারের কারণে। স্ক্যানে সেটি ধরাও পড়ে। তাই সেবার ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা হয়েছিল না বুমরাহ। দীর্ঘ তিন মাস এ ইনজুরি বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়েছিল তাকে। ২০২০ সাল ইনজুরি কাটিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে আবারও দলে ফেরেন তিনি। 

এরপর ২০২১। অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে আবারও ইনজুরিতে পড়েন বুমরাহ। সিডনি টেস্টে ফিল্ডিং করার সময় হঠাৎই পেটে শক্ত টান অনুভব করেন তিনি। পরে দেখা গেল, এবডমিনাল স্ট্রেইন ইনজুরির কবলে পড়েছেন বুমরাহ। সিরিজের শেষ টেস্ট তাই বুমরাহকে বাদ দিয়েই খেলতে হয় ভারতকে। বুমরাহ এরপর দলে ফিরেছিলেন ৩ সপ্তাহ পর। 

২০১৮ থেকে ২০২১ প্রত্যেক বছরেই ইনজুরিতে জর্জর ছিলেন বুমরাহ। সেই দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয়েছিল ২০২২ সালেও। এশিয়া কাপের জন্য কন্ডিশনিং ক্যাম্প চলাকালীন এবার পিঠের ইনজুরিতে পড়েন তিনি। ৪ সপ্তাহের জন্য রিহ্যাবে যাওয়ায় এশিয়া কাপ মিস করেন তিনি। তবে এরপর ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আবারো দলে ফেরেন তিনি।

প্রথম ম্যাচে না খেললেও খেলেন দ্বিতীয় ম্যাচ। সে ম্যাচ দুর্দান্ত এক ইয়র্কার দিয়ে অ্যারন ফিঞ্চকে বোল্ড করেছিলেন তিনি। তবে এর পর আবারো পুরনো পিঠের ইনজুরিতে পড়েন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, এই ইনজুরিতে বছরের বাকি সময়টা বাইরেই কাটাতে হবে বুমরাহকে। অর্থাৎ ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন না অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। 

বছরের পর বছর ইনজুরিতে পড়ায় জাসপ্রিত বুমরাহ ক্যারিয়ারে যতটা না নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তার চেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে ভারতকে। তার অবর্তমানে দলে সঠিক রিপ্লেসমেন্ট আনতে টিম ম্যানেজমেন্টকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। আর বেশিরভাগ সময়ই বুমরাহ’র জায়গায় যারা সুযোগ পাচ্ছে তাদের কেউই তেমন আস্থার প্রতিদান দিতে পারছে না। ভারতের জন্য তাই অপূরণীয় এক ক্ষতির নাম জাসপ্রতি বুমরাহর অনুপস্থিতি। 

কিউই পেসার শেন বন্ডের দারুণ প্রতিভা থাকা স্বত্ত্বেও শুধু মাত্র ইনজুরির কারণে খুব অল্প সময়েই থেমে গিয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার। ক্রিকেট বিশ্বে এমন শেন বন্ড আরো অনেক রয়েছে। জাসপ্রিত বুমরাহ নিশ্চয় একজন শেন বন্ড হতে চাইবেন না। পেসার হিসেবে যেসব রসদ তাঁর মধ্যে আছে তাতে তিনি ছাড়িয়ে যেতে পারেন কিংবদন্তি অনেক পেসারদেরও। তবে কাটিয়ে উঠতে হবে ইনজুরির ক্রমাগত বাঁধা। তবেই বিশ্ব ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ কিংবদন্তি হয়ে উঠবেন জাসপ্রিত বুমরাহ।  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link