পাণ্ডবদের পাণ্ডিত্য আর কতদিন চলবে?

রংপুর-বরিশালের ম্যাচ। তবে সে দ্বৈরথ ছাপিয়ে বিপিএলের মঞ্চটা যেন হয়ে উঠল সিনিয়রদের মহারণ। পঞ্চপাণ্ডবের চার পাণ্ডবই যে একই ম্যাচের স্পটলাইটে। সাকিব ছিলেন রংপুর শিবিরে। আর তামিম, মুশফিক, রিয়াদ— তিন তারকারই ঠাঁই ফরচুন বরিশালের একাদশে। জয়ের শেষ হাসিটাও হেসেছে তারাই।

ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে রয়েছেন চার ক্রিকেটারই। অবশ্য এ চার ক্রিকেটারের মাঝে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফুলস্টপ বসে গেছে তিন ক্রিকেটারের পাশে। রিয়াদ আনুষ্ঠানিক বিদায় বলেননি বটে। তবে বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে আগেই। 

টাইগার জার্সিতে সাকিবই শুধু রয়েছেন অটোমেটিক চয়েসদের কাতারে। তবে সেই তকমা কতদিন অক্ষুণ্ণ থাকবে, সেটিও যেন প্রশ্নের কাঠগড়ায়। বিশেষত, খালেদ আহমেদের বলে এ দিন যেভাবে বোল্ড হলেন, তাতে ব্যাটিং সক্ষমতাও নিয়েও ভাবান্তর ঘটাতে বাধ্য। 

সাকিব সফট ডিসমিশালে আউট হন বেশি, আউট হওয়ার ধরন নিয়েও থাকে নানান প্রশ্ন। তবে এ দিন খালেদ আহমেদের বলটাই রিড করতে পারেননি তিনি ৷ একদম পরাস্ত যাকে বলে। তবে ব্যাটার সাকিবের অবনমন যতটাই হোক, বোলিংটা যেন তাঁর সহজাত চরিত্র। এ দিনও কিপ্টে বোলিংয়ে ২ উইকেট শিকার তাঁর। ২ উইকেটের মধ্যে একটিতে আবার ফিরিয়েছেন আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিককে। 

বহুদিন বাদে বিপিএল দিয়ে মাঠের ক্রিকেটে ফিরলেন তামিম। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছেন। যেভাবে খেলছিলেন, তাতে বড় ইনিংসের পথেই এগিয়েছিলেন। তবে ধৈর্য্যচ্যুতিই কাল হয়েছে সে ইনিংসে। বলাই বাহুল্য, উইকেট খুইয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি। তবে ফেরার মঞ্চে এ ব্যাটার সাবলীলই ছিলেন।

তবে উল্টো চিত্রের দেখা মিলল মুশফিকের ব্যাটিংয়ে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কখনোই সেভাবে পারফর্ম করেননি। তবে বিপিএলে বরাবরই পারফর্ম করা এ ব্যাটারের ব্যাটিংয়ে মেলেনি সেই ছাপ। সহজ লক্ষ্যে নিজে চাপে পড়েছেন। চাপে ফেলেছিলেন দলকেও। নিজের ইনিংসটাই সেই কথা বলে। ২৭ বলে মোটে ২৬ রান। 

তবে মুশফিকের ব্যাটে চাপে পড়া ফরচুন বরিশালের ভাগ্যটা লিখেছেন রিয়াদ। মুশফিকের উইকেটে শেষ দিকে যে লড়াই জমে উঠেছিল, তা এক নিমিষেই উড়িয়ে দেন এ ব্যাটার। ২ ছক্কায় ১১ বলে ১৯ রান। আর এই ক্যামিওতেই জয় পায় বরিশাল। ভারত বিশ্বকাপ থেকেই যেন নতুন এক রিয়াদকে আবিষ্কার করছে বাংলাদেশ। বিপিএলেও সেই ছাপ রাখলেন। যেন ক্যারিয়ারে নতুন একটা গল্প লিখছেন তিনি।

সাকিব, তামিম, মুশফিক রিয়াদ— ৪ ক্রিকেটারই এখন ক্যারিয়ারের শেষ পথ। সেটার ক্ষণ গণনাও বোধহয় শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে এই সংস্করণে সাকিবের শেষ বিশ্বকাপ। আর বাকি তিন ক্রিকেটারের ২ জন তো আগেই অবসর নিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট যে পরিকল্পনায় হাঁটছে তাতে রিয়াদেরও আর জায়গা নেই। 

সব মিলিয়ে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ বড়জোর বছর দুয়েকের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে এ ৪ জনের শেষ কোথায়, সেটা নির্ণয় করার সময় এখনই নয়৷ মাশরাফি চল্লিশে এসেও খেলছেন। তাঁকে পেতে দলও মুখিয়ে রয়েছে।

এমনটার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে বাকি চার পাণ্ডবের ক্ষেত্রেও। বিশেষত, বাংলাদেশ ক্রিকেটের যা ইতিহাস তাতে ঐতিহাসিক চরিত্র এই পাঁচ ক্রিকেটারই। দেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আগ্রহের বাইরে থাকারও সম্ভাবনা ক্ষীণ। আর যেহেতু এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ক্রিকেটারদের একটা আর্থিক উৎস তৈরি হয়, সেহেতু সহসাই বিদায় বলার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। সব মিলিয়ে সাকিব-তামিমদের এই ফরম্যাটে ভবিষ্যৎ যাত্রা আরো লম্বাই হতে যাচ্ছে। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link